এ সকল ‘মতানুসারে ইঞ্জিলের’ সাথে ‘ঈসা মাসীহের ইঞ্জিলের’ মুল পার্থক্য ঈসা মাসীহের ‘ইঞ্জিল’ আল্লাহর কালাম বা তাঁর নিজের বক্তব্য। আর প্রচলিত ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’ চারটার মধ্যে আল্লাহর কোনো কালাম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এগুলোর মধ্যে ঈসা মাসীহের বক্তব্যও কম। এগুলো মূলত তাঁর জীবনীগ্রন্থ। এগুলোর মধ্যে ঈসা মাসীহ বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের বর্ণনা সংকলন করা হয়েছে।
এছাড়া আমরা দেখলাম যে, এরূপ প্রায় অর্ধশত ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’ দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকের খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। সেগুলোর মধ্য থেকে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা নিজেদের পছন্দের উপর নির্ভর করে এ চারটাকে বাছাই করেন। এ বিষয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার biblical literature প্রবন্ধের বক্তব্য:
As far as the New Testament is concerned, there could be no Bible without a church that created it; yet conversely, having been nurtured by the content of the writings themselves, the church selected the canon. ... Indeed, until c. AD 150, Christians could produce writings either anonymously or pseudonymously—i.e., using the name of some acknowledged important biblical or apostolic figure. The practice was not believed to be either a trick or fraud. ...
‘‘নতুন নিয়মের বিষয়টা হল, যদি চার্চ (ধর্মীয় মণ্ডলী বা জামাত) বাইবেল তৈরি না করত তাহলে কোনো বাইবেলই থাকত না। অপরদিকে লেখনিগুলোর বিষয়বস্ত্তর ভিত্তিতে চার্চই বাইবেলের বইগুলো বাছাই করেছে। ... প্রকৃত বিষয় হল, ১৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে যে কোনো খ্রিষ্টান নাম প্রকাশ না করে, অথবা কোনো প্রসিদ্ধ বাইবেলীয় ব্যক্তিত্ব বা যীশুর শিষ্যদের নামে বই লেখতে পারতেন। এরূপ কর্মকে ছলচাতুরি বা প্রতারণা বলে গণ্য করা হত না! ...’’
বিষয়টা বিস্ময়কর। ১০০/১৫০ বছর পরে যে কোনো খ্রিষ্টান সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে একটা বই লেখে প্রচার করছেন, এটা মথি লিখিত ইঞ্জিল, এটা পিতর লিখিত ইঞ্জিল... এভাবে যীশুর শিষ্যদের বা সাধুদের নামে যে যা পারছে লেখে প্রচার করছে। এরূপ কর্মকে উক্ত ধার্মিক লেখক বা সমাজের অন্য কোনো ধার্মিক খ্রিষ্টান কেউই অন্যায় বা পাপ বলে গণ্য করছেন না! এগুলো সমাজে ইঞ্জিল নামে প্রসিদ্ধ হওয়ার আরো ১০০/১৫০ বছর পর এরূপ ধার্মিক খ্রিষ্টানরা ‘অজ্ঞাত ধার্মিক মানুষদের লেখা’ অর্ধশত ইঞ্জিল থেকে শুধু বিষয়বস্ত্তর পছন্দনীয়তার দিকে তাকিয়ে ৪টা ইঞ্জিল বেছে নিয়ে ‘নতুন নিয়ম’-এর অমর্ত্মভুক্ত করলেন! এ বিষয়ে মাইক্রোসফট এনকার্টার বক্তব্য আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, যেখানে বলা হয়েছে প্রথম তিন শতকে ৫০টার মত ইঞ্জিল চালু ছিল এবং নতুন নিয়মের ২৭টা বই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লিখিত ধর্মগ্রন্থগুলোর সামান্য অংশমাত্র।