উপরের আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে আমরা দেখি যে, পূর্ববর্তী উম্মাত এবং এ উম্মাতের মধ্যে ইফতিরাক বা বিভক্তির কারণগুলি নিম্নরূপ:
৬. ৩. ৩. ১. ওহী ভুলে যাওয়া
কুরআন কারীমে আল্লাহ পূর্ববর্তী উম্মাতের বিভক্তি ও বিভ্রান্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, তারা তাদেরকে প্রদত্ত ওহীর একটি অংশ ভুলে গিয়েছিল, ফলে তাদের মধ্যে বিভক্তি, শত্রুতা ও দলাদলি সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে একটি আয়াত আমরা একটু আগে দেখেছি। অন্যত্র আল্লাহ বলেন:
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ وَنَسُوا حَظًّا مِمَّا ذُكِّرُوا بِهِ
‘‘তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য তাদেরকে লানত করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করেছি, তারা শব্দগুলিকে স্বস্থান থেকে বিকৃত করে এবং তাদেরকে যা শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল তার এক অংশ ভুলে গিয়েছে।’’[1]
ওহী ভুলে যাওয়ার বিভিন্ন দিক রয়েছে। অবহেলার মাধ্যমে ওহীর কিছু অংশ বিলুপ্ত হওয়া, ব্যাখ্যার নামে মূল ওহী বাদ দিয়ে ব্যাখ্যাকেই ওহীর স্থলাভিষিক্ত করা, আহবার-রুহবানদের মাসূম বা নিষ্পাপ-নির্ভুল বলে বিশ্বাস করে তাদের মতামতকে ওহীর সমতূল্য বলে গণ্য করা, ওহীর নামে বানোয়াট বা মিথ্যা কথা প্রচার করা, দর্শন, যুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে ওহীর কিছু অংশ বাদ দেওয়া, জাগতিক স্বার্থের কারণে ওহীর নির্দেশনা বিকৃত করা ইত্যাদি। পূর্ববর্তী জাতিগুলির ন্যায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যেও বিকৃতি, বিভ্রান্তি ও বিভক্তির এটি মূল কারণ। বিভিন্নভাবে এরা ওহী ভুলেছে বা ভুলাতে চেষ্টা করেছে। যেমন:
(ক) ওহী বা কুরআন ও হাদীস সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে না বা বিশেষ জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া এর নির্দেশনা ব্যাখ্যার অধিকার কারো নেই বলে জনগণকে কুরআন ও হাদীস অনুধাবন করা থেকে সরিয়ে রাখা। বিশেষ করে শীয়া সম্প্রদায়ের বাতিল আকীদাগুলির এটি অন্যতম।
(খ) ওহীর ব্যাখ্যায় কোনো আলিম, মা’সূম ইমামের বা অন্য কারো বিশেষ অধিকার আছে বলে দাবি করে তার ‘ইলম লাদুন্নী’, কাশফ, ব্যাখ্যা বা মতামতকে ওহীর অংশ বানিয়ে দেওয়া। এটিও শীয়া সম্প্রদায়ের মৌলিক বিভ্রান্তিসমূহের অন্যতম।
(গ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পরে অন্য কোনো মানুষের নিষ্পাপত্ব বা নির্ভুলত্বে বা তাঁর ইলম লাদুন্নী, কাশফ বা ইলহামের অভ্রান্ততায় বিশ্বাস করে তার মতামতকে ওহীর সমতূল্য বা ওহীর একমাত্র ব্যাখ্যা বলে গণ্য করা। এতে মূল ওহীর আর কোনোই মূল্য থাকে না। কেবলমাত্র ওহীর ব্যাখ্যা নামে কথিত ইমামের মতামতই আকীদার একমাত্র ভিত্তি হয়ে যায়। এটিও শীয়াদের বিভ্রান্তির মৌলিক দিক।
(ঘ) ওহীর পাশাপাশি দর্শন, বৃদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি ইত্যাদিকে ওহীর মতই আকীদার উৎস হিসেবে গ্রহণ করা। সকল বিভ্রান্ত দলেরই এটি বৈশিষ্ট্য।
(ঙ) ওহীর তাফসীর বা ব্যাখার নামে নিজেদের বা কোনো আলিম বা বুজুর্গের মতামতকে ওহীর সাথে আকীদার অংশ বানিয়ে দেওয়া। সকল বিভ্রান্ত ফিরকারই এটি বৈশিষ্ট্য।
(চ) তাবীল-ব্যাখ্যার নামে ওহীর কিছু বিষয় বাতিল করে তার একটি বিশেষ অর্থ আকীদার মধ্যে গণ্য করা। এতে ওহীর মূল ভাষা আকীদা থেকে ‘ভুলে যাওয়া’ হয়। সকল বিভ্রান্ত ফিরকারই এটি বৈশিষ্ট্য।
(ছ) বানোয়াট কথা বানিয়ে ওহীর নামে চালানো বা জাল হাদীস তৈরি করা বা জাল বা অনির্ভরযোগ্য হাদীস, তাফসীর বা ঘটনার উপরে আকীদার ভিত্তি স্থাপন করা। এটি শীয়া ও অন্যান্য অনেক ফিরকার বৈশিষ্ট্য।
৬. ৩. ৩. ২. হাওয়া (الهوى) বা মনগড়া মতামতের অনুসরণ
হা, ওয়াও ও ইয়া তিনটি বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত শব্দটির মূল অর্থ শূন্য হওয়া, খালি হওয়া বা নিপতিত হওয়া। এ ক্রিয়ামূল থেকে দু প্রকারের ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়: (ضرب يضرب) বাব থেকে ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হলে বলা হয় হাওয়া-ইয়াহবী (هَوَى، يَهْوِي) এবং এক্ষেত্রে অর্থ হয় নিপতিত হওয়া। এ ক্রিয়ার মাসদার: হুবিয়্যান (هُوِيّاً)। আর (سمع يسمع) বাব থেকে ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হলে বলা হয় হাবিয়া-ইয়াহবা (هَوِيَ يَهْوَى) অর্থাৎ ভালবাসা, প্রেম করা, পছন্দ করা, ইত্যাদি। এ ক্রিয়ার মাসদার ‘হাওয়ান’ (هَوَى)। এভাবে আমরা দেখছি যে, হাওয়া (الهوى) শব্দের অর্থ প্রেম, ভাললাগা, পছন্দ করা (love, passion, wish, desire, pleasure) ইত্যাদি। বহু বচন: আহওয়া (الأهواء)।[2]
কুরআনে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘হাওয়ান নাফস’ (هوى النفس) বা ব্যক্তি মনের পছন্দ-অপছন্দ অনুসরণ করা বিভ্রান্তি ও বিভক্তির অন্যতম কারণ। হাদীস শরীফে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তিকে ‘আহওয়া’ (أهواء) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মু‘আবিয় (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন:
إِنَّ أَهْلَ الْكِتَابَيْنِ افْتَرَقُوا فِي دِينِهِمْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَإِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً يَعْنِي الأَهْوَاءَ كُلُّهَا فِي النَّارِ إِلا وَاحِدَةً وَهِيَ الْجَمَاعَةُ وَإِنَّهُ سَيَخْرُجُ فِي أُمَّتِي أَقْوَامٌ تَجَارَى بِهِمْ تِلْكَ الأَهْوَاءُ كَمَا يَتَجَارَى الْكَلْبُ بِصَاحِبِهِ لا يَبْقَى مِنْهُ عِرْقٌ وَلا مَفْصِلٌ إِلا دَخَلَهُ
‘‘তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবীগণ (ইহূদী ও খৃস্টানগণ) ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর এ উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে, তারা পছন্দ বা মনগড়া মতের (أهواء) অনুসরণ করবে। এরা সকলেই জাহান্নমী, কেবলমাত্র একটি দল বাদে, যারা ‘আল-জামা‘আত’। আর আমার উম্মাতের মধ্যে এমন কিছু দল বের হবে যাদের মধ্যে মনগড়া মত বা পছন্দের অনুসরণ এমনভাবে প্রবেশ করবে যেমনভাবে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে তার রোগ প্রবেশ করে। তার দেহের সকল শিরা, উপশিরা ও অস্তিসন্ধিতে তা প্রবেশ করে।’’[3]
এভাবে আমরা দেখছি যে, বিভ্রান্তি ও বিভক্তির অন্যতম কারণ ‘ইত্তিবাউল হাওয়া’ বা পছন্দের অনুসরণ বা মনগড়া মতের অনুসরণ। বস্ত্তত ধর্ম ও বিশ্বাসের মূল হলো ওহীর নিকট আত্মসমর্পণ। এর স্বরূপ হলো কোনো শিক্ষা বা নির্দেশনা ওহী বলে প্রমাণিত হলে নিজের মত বা পছন্দ-অপছন্দকে তার অধীন করে দেওয়া। প্রয়োজনে নিজের মত বা নিজের মনোনীত ব্যক্তির মত ব্যাখ্যা করে বাদ দিয়ে ওহীর মত ব্যাখ্যাতীতভাবে গ্রহণ করা।
এর বিপরীত হলো ইত্তিবাউল হাওয়া বা নিজের মনমর্যি বা পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করা। এর স্বরূপ হলো, একটি মত বা কর্ম মানুষের কোনো কারণে ভাল লাগবে বা সঠিক বলে মনে হবে। এরপর সে এই মতটি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবে। ওহীর যে বিষয়টি তার মতের পক্ষে থাকবে সেটি সে গ্রহণ করবে। আর যে বিষয়টি তার মতের বিরুদ্ধে যাবে তা সে প্রত্যাখ্যান করবে বা ব্যাখ্যা করবে।
আমরা দেখেছি যে, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগণ পূর্ববর্তী ধর্ম, প্রচলিত দর্শন, সামাজিক রীতি বা বিশ্বাসের প্রভাবে বা পূর্বপুরুষদের মতামতের প্রভাবে একটি বিশ্বাস বা কর্মকে ভালবেসে ফেলেন। এরপর তার কাছে ওহীর বিষয় প্রমাণিত হলেও তা গ্রহণ করতে পারেন না। বরং ওহীর বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বা না করে উড়িয়ে দেন এবং পছন্দনীয় মতটিই ধরে থাকেন। ইহূদী-খৃস্টানগণ এবং আরবের কাফিরদের বিভ্রান্তি ও বিভক্তির এটি ছিল অন্যতম কারণ। মুসলিম উম্মাহর বিভ্রান্ত ও বিভক্ত দলগুলিরও এটি মূল বৈশিষ্ট্য।
৬. ৩. ৩. ৩. হিংসা-বিদ্বেষ
কুরআন ও হাদীসে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, হিংসা, বিদ্বেষ, জিদ ও উগ্রতা বিভক্তি বা ইফতিরাকের অন্যতম কারণ। বস্ত্তত মতভেদ মানুষের স্বাভাবিক বিষয়। মানুষের মধ্যে অন্যান্য সকল বিষয়ের ন্যায় ধর্মীয় বিষয়েও মতভেদ হতেই পারে। দুটি বিষয় বিদ্যমান থাকলে এরূপ মতভেদ নিরসন হয়ে যায় অথবা মতভেদসহ-ই অবিচ্ছিন্ন থাকা যায়: (১) ওহীর প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন এবং (২) পরিপূর্ণ ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ।
ওহীর প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন মতভেদ নিরসন করে বা মতভেদের গুরুত্ব কমিয়ে আনে। মতভেদকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবর্গ যদি ওহীর মাধ্যমে যা জানা যায় সেটুকু মূল ধরে ওহীর অতিরিক্ত বিষয়কে অমৌলিক সহ্যযোগ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করেন তবে মতভেদের তীব্রতা কমে যায়। পাশাপাশি আন্তরিক ভালবাসা ও ভ্রাতৃৃত্ববোধ অপরের মতের প্রতি সহনশীলতা বাড়িয়ে দেয় এবং বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করে।
মতভেদীয় সকল বিষয়কেই এখানে উদাহরণ হিসেবে পেশ করা যায়। সাহাবীগণের সকলের মর্যাদার স্বীকারোক্তিসহ তাঁদের পারস্পরিক তারতম্য নির্ধারণের বিষয়ে, ঈমানের প্রকৃতি ও কবীরা গোনাহকারী বিধানের বিষয়ে, তাকদীর ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার বিষয়ে, আল্লাহর বিশেষণসমূহের বিষয়ে বিভিন্ন ফিরকার জন্ম হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি সকলে এ বিষয়ে একমত হতেন যে, ওহীর মাধ্যমে বা কুরআন ও হাদীস থেকে যতটুক জানা যায় তা আমরা গ্রহণ করব। বাকি সমন্বয় ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মানবীয় বুদ্ধি দিয়ে যা বলব তা ওহীর মত চূড়ান্ত বলে গণ্য করব না। বরং এগুলিকে ইজতিহাদী ব্যাখ্যা কাজেই এগুলির সমাধান না হলেও আমরা একে অপরের মত সহ্য করব। কারণ আমরা সকলেই একই ধর্মের অনুসারী ও পরস্পরে ভ্রাতৃত্বের কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ।
আমরা পরবর্তী আলোচনা থেকে দেখতে পাব সাহাবীগণের মধ্যে এদুটি বিষয়ে প্রগাঢ় বিদ্যমানতার কারণে তাঁদের মতভেদ কখনো বিভক্তির পর্যায়ে যায় নি। অনুরূপভাবে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলিম ও ইমামগণও এদুটি বিষয়ের গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে একদিকে তাঁরা তাঁদের আভ্যন্তরীন মতভেদগুলি সহজভাবে নিয়েছেন এবং তাঁদের মতভেদ বিচ্ছিন্নতায় পর্যবসিত হয় নি। অপরদিকে তারা বিচ্ছিন্ন ফিরকাসমূহের মতভেদ ও বিচ্ছিন্নতাও যথাসম্ভব সহজ করে দেখেছেন। তাদেরকে ভুলের মধ্যে নিপতিত ও বিভ্রান্তির শিকার বললেও ওহীর কোনো বিষয় সুস্পষ্ট অস্বীকার না করা পর্যন্ত তাঁরা তাদেরকে কাফির বলেন নি। আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী (১০৮৮ হি) তাঁর আদ-দুর্রুল মুখতার গ্রন্থে বিদ‘আতী ও বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের বিষয়ে আহলুস সুন্নাতের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে বলেন:
لا يكفر بها حَتَّى الْخَوَارِجُ الَّذِينَ يَسْتَحِلُّونَ دِمَاءَنَا وَأَمْوَالَنَا وَسَبَّ الرَّسُولِ، وَيُنْكِرُونَ صِفَاتِهِ تَعَالَى وَجَوَازَ رُؤْيَتِهِ لِكَوْنِهِ عَنْ تَأْوِيلٍ وَشُبْهَةٍ بِدَلِيلِ قَبُولِ شَهَادَتِهِمْ ، إلا الْخَطَّابِيَّةِ ... وَإِنْ أَنْكَرَ بَعْضَ مَا عُلِمَ مِنْ الدِّينِ ضَرُورَةً كَفَرَ بِهَا
‘‘এমনকি খারিজীগণ, যারা আমাদের রক্তপাত ও ধনসম্পদ বৈধ বলে গণ্য করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর গালি প্রদান করে, মহান আল্লাহর বিশেষণসমূহ অস্বীকার করে এবং আখিরাতে তাঁর দর্শন অস্বীকার করে তাদেরও এগুলির কারণে কাফির বলা হয় না। কারণ তাদের এ সকল মতামতের কারণ ব্যাখ্যা ও কুরআন-সুন্নাহর প্রমাণ বুঝতে অস্পষ্টতা বা ভুল বুঝা। এর প্রমাণ যে, মুসলিমদের আভ্যন্তরীন মামলা-মুকাদ্দামায় তাদের সাক্ষ্য কবুল করা হয়। তবে খাত্তাবিয়্যাহ[4] ফিরকাকে কাফির বলা হয়েছে। আর কোনো ফিরকা যদি দীনের কোনো অত্যাবশ্যকীয় সর্বজন অবজ্ঞাত বিশ্বাস অস্বীকার করে তবে এরূপ বিদ‘আতের কারণে সে কাফির বলে গণ্য হবে।’’[5]
৬. ৩. ৩. ৪. সুন্নাত থেকে বিচ্যুতি
আমরা দেখেছি যে, মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির ক্ষেত্রে ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ‘সুন্নাত’ এবং সাহাবীগণের ‘সুন্নাত’ অনুসরণ করাকে নাজাত, সফলতা ও হিদায়াতের মাপকাঠি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন হাদীসে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুন্নাত শব্দের অর্থ, ও সুন্নাত অনুসরণের প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা পরবর্তীকালে আলোচনা করব। বস্ত্তত সুন্নাত থেকে বিচ্যুতিই সকল বিভ্রান্তির দরজা খুলে দেয়। ইসলামের প্রথম বৃহৎ বিভক্তি খারিজী ফিরকার ইতিহাসে আমরা তা ভালভাবে দেখতে পাই। খারিজীগণ কুরআনের নির্দেশনা বুঝার ক্ষেত্রে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজেদের বুঝকেই চূড়ান্ত মনে করত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আজীবনের সহচর ও দীন সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী সাহাবীগণের মতামতকে অবজ্ঞা করত এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণকে তারা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করত। তাদের বুঝের বাইরে মতপ্রকাশকারীদেরকে ঢালাওভাবে তারা অবজ্ঞা করত।[6]
এছাড়া তারা কুরআন বুঝার জন্য সুন্নাতের গুরুত্ব অস্বীকার করে। তারা হাদীস অস্বীকার করত না। সাহাবীদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তারা হাদীস শিক্ষার জন্য গমন করত ও প্রশ্ন করত। কিন্তু তারা ‘সুন্নাত’-এর গুরুত্ব অস্বীকার করত। অর্থাৎ যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক, বিভ্রন্তি ও বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে ঠিক সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেছেন তার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখা জরুরী মনে করত না। বরং কুরআন বা হাদীস থেকে সাধারণভাবে তারা যা বুঝেছে সেটিকেই চূড়ান্ত মনে করত।[7]
বস্ত্তত সুন্নাত-ই মুমিনের মুক্তির পথ। যতক্ষণ মুমিন সুন্নাতের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে ততক্ষণ তার কোনো ভয় থাকে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা যেভাবে যতটুকু বলেছেন মুমিন যদি তা ততটুকু সেভাবেই বলেন এবং তিনি যা বলেন নি মুমিন যদি তা বলা বর্জন করে তবে তার কোনো ভয় থাকে না। সুন্নাতের বাইরে গেলেই বিচ্যুতির সম্ভাবনা খুলে যায়। কারণ সুন্নাতের ব্যাখ্যার নামে যে সংযোজন বা বিয়োজন সে করে তা সঠিক না ভুল না নিশ্চিত জানার কোনো উপায় তার নেই। সর্বোপরি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেন নি বা বলা বর্জন করেছেন তা না বললে দীনের কোনো ক্ষতি হবে সে চিন্তা করাও ভাল নয়।
৬. ৩. ৩. ৫. যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয় নি তা করা
উপরের হাদীসে আমরা দেখেছি যে, বিভ্রান্ত মানুষদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে, ‘যা করতে বলা হয় নি তা তারা করবে।’ অর্থাৎ ওহীর মাধ্যমে যে সকল কাজের নির্দেশ দেওয়া হয় নি, ওহীর বিভিন্ন ব্যাখ্যা বা যুক্তির মাধ্যমে সে সকল কাজকে দীনের বা আকীদার অংশ বানিয়ে নেওয়া।
যেমন, ওহীর মাধ্যমে সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অসৎকাজে লিপ্তকে হত্যা করতে, শাস্তি দিতে বা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় নি বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার নির্দেশ দেওয়া হয় নি, কিন্তু খারিজীগণ ওহীর অনুসরণের নামে তা করেছে। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বংশধরদের ভালবাসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ভালবাসার নামে আলী (রাঃ)-কে সাজদা করতে, তাঁর বিশেষ গাইবী জ্ঞান আছে বলে মনে করতে, তাকে নিষ্পাপ বলে দাবি করতে বা অন্যান্য সাহাবীকে ঘৃণা করতে নির্দেশ দেওয়া হয় নি, কিন্তু শীয়াগণ তা করেছে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর বংশধরদেরকে ভালবাসা, তাঁদের আনন্দে আনন্দে আনন্দিত হওয়া ও তাদের বেদনায় ব্যথিত হওয়া ইসলামের নির্দেশ। কিন্তু বেদনায় ব্যথিত হওয়ার নামে মাতম বা তাযিয়া বের করা, শোক-সমাবেশ করা, নিজেকে আঘাত করে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি ইসলামের নির্দেশ নয়। অনুরূপভাবে তাঁদের জন্মদিনে বা অন্য কোনো দিনে তাঁদের ভালবাসা বা আনন্দের নামে মিছিল, উৎসব ইত্যাদি করাও ইসলামের নির্দেশ নয়। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে এবং বিভিন্ন জাল দলিল তৈরি করে শীয়াগণ এরূপ করে থাকে।
সকল বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ই এরূপ করেছে। ওহীর ব্যাখ্যার নামে তারা এমন কথা বলেছে বা এমন কাজ করেছে যা করতে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয় নি।
৬. ৩. ৩. ৬. অন্যান্য জাতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়া
উপরের বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখেছি যে, মুসলিম উম্মাহ পূর্ববর্তী জাতিসমূহের অনুসরণ করবে বলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উল্লেখ করেছেন। এর একটি নমুনা দেখেছি যে, মুশরিকদের ‘যাতু আনওয়াত’ দেখে কেউ কেউ অনুরূপ কিছু নিজেদের মধ্যেও প্রচলন করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি ও ফিরকাবাজির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমর দেখি যে, এ বিষয়টি ছিল সকল বিভক্তির অন্যতম কারণ। দ্বিতীয় প্রজন্মের নতুন মুসলিমগণ তাদের পূর্ববর্তী ধর্মের প্রভাব, লোকাচার, প্রচলিত দর্শন, সমাজের পন্ডিতদের বক্তব্য ইত্যাদির কারণেই বিভিন্ন বিদ‘আতের মধ্যে নিপতিত হয়।
৬. ৩. ৩. ৭. মুহকাম রেখে মুতাশাবিহ অনুসরণ
কুরআন ও হাদীসে বিভ্রান্তি ও বিভক্তির আরো কিছু বিষয় নির্দেশ করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে ওহীর সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন নির্দেশনার বিপরীতে দ্ব্যর্থবোধক বা একাধিক অর্থের সম্ভাবনাময় বক্তব্যকে গ্রহণ করা বা আকীদার ভিত্তি বানানো। মহান আল্লাহ বলেন:
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آَيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلا اللَّهُ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آَمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلا أُولُو الأَلْبَابِ
‘‘তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন, এগুলি কিতাবের মূল অংশ; আর অন্যগুলি দ্ব্যর্থবোধক-একাধিক অর্থের সম্ভাবনাময়-। যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিতনা এবং ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে দ্ব্যর্থবোধক বিষয়গুলির অনুসরণ করে।’’[8]
আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, খৃস্টানদের বিভ্রান্তি ও বিভক্তির এটি একটি দিক ছিল। তাদের নিকট বিদ্যমান ‘কিতাবে’ আল্লাহর একত্ব, ঈসা (আঃ)-এর মানবত্ব, রাসূলত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে দ্ব্যর্থহীন সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। পাশাপাশি ‘আল্লাহর রূহ’, ‘আল্লাহর কালিমা’ ইত্যাদি কিছু বিশেষণ তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থও পরিষ্কার, তবে তা একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রাখে। এ সকল দ্ব্যর্থবোধক শব্দগুলিকে তারা একটি বিশেষ অর্থে ব্যাখ্যা করে সেই ব্যাখ্যাকে তারা তাদের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং এর ভিত্তিতে দ্ব্যর্থহীন সুস্পষ্ট নির্দেশনাগুলি ব্যাখ্যা করে বাতিল করে।
মুসলিম উম্মাহর বিভ্রান্ত ফিরকাগুলিরও একই অবস্থা। পরবর্তী আলোচনায় আমরা এ জাতীয় অনেক নমুনা দেখতে পাব, ইনশা আল্লাহ।
৬. ৩. ৩. ৮. কর্মহীন তাত্ত্বিক বিতর্ক ও ওহীর মধ্যে বৈপরীত্য সন্ধান
ওহীর মূল উদ্দেশ্য মানুষকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ প্রদর্শন করা। মুমিনের দায়িত্ব ওহীর নির্দেশ মত নিজের বিশ্বাস ও কর্ম পরিচালনা কর। ওহীর অনুসরণ ও পালনই মূল বিষয়, ওহী নিয়ে বিতর্ক নয়। কিন্তু সাধারণত মানবীয় প্রকৃতি কর্মের চেয়ে কর্মহীন বিতর্ককে ভালবাসে। আর এরূপ বিতর্ক বিভ্রান্তির উৎস। কারণ ওহী মূলত গাইবী বিষয়, এ বিষয়ে মানবীয় বুদ্ধি ও যুক্তি নির্ভর বিতর্ক কোনো চূড়ান্ত সমাধান আনতে পারে না। এজন্য হাদীস শরীফে ওহীর পালন ও বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে এবং তা নিয়ে বিতর্ক পরিহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এখানে আরো লক্ষণীয় যে, জ্ঞানবৃত্তিক আলোচনা জ্ঞানের পথ সুগম করে। মতবিমিয়ের মাধ্যমে আলোচকদের অজ্ঞতা বা ভুল দূর হয় এবং নতুন অনেক বিষয় জানা যায়। কিন্তু বিতর্ক তা নয়। বিতর্কের সময় প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের একটি মত গঠন করে এবং যে কোনো ভাবে তার মতটি প্রমাণ করতে চেষ্টা করে। নিজ মতের দুর্বলতা ধরা পড়লেও তা স্বীকার করতে রযি হয় না, কারণ তা তার পরাজয় বলে গণ্য হয়। এজন্য হাদীস শরীফে কুরআন নিয়ে আলোচনা ও পারস্পরিক পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিতর্ক করতে নিষেধ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন,
هَجَّرْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ (ﷺ) يَوْمًا قَالَ فَسَمِعَ أَصْوَاتَ رَجُلَيْنِ اخْتَلَفَا فِي آيَةٍ فَخَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) يُعْرَفُ فِي وَجْهِهِ الْغَضَبُ فَقَالَ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِاخْتِلافِهِمْ فِي الْكِتَابِ
‘‘আমি একদিন দুপুরের আগে আগে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট গমন করি। তিনি কুরআনের একটি আয়াত নিয়ে মতভেদ ও বিতর্কে রত দুব্যক্তির কণ্ঠস্বর শুনতে পান। তখন তিনি আমাদের নিকট বেরিয়ে আসেন। তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে ক্রোধ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তিনি বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী মানুষেরা কিতাবের বিষয়ে মতভেদ করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে।’’[9]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন:
إنَّ نَفَرًا كَانُوا جُلُوسًا بِبَابِ النَّبِيِّ (ﷺ) فَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلْ اللَّهُ كَذَا وَكَذَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلْ اللَّهُ كَذَا وَكَذَا فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) فَخَرَجَ كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وَجْهِهِ حَبُّ الرُّمَّانِ فَقَالَ بِهَذَا أُمِرْتُمْ أَنْ تَضْرِبُوا كِتَابَ اللَّهِ بَعْضَهُ بِبَعْضٍ إِنَّمَا ضَلَّتْ الأُمَمُ قَبْلَكُمْ فِي مِثْلِ هَذَا إِنَّكُمْ لَسْتُمْ مِمَّا هَاهُنَا فِي شَيْءٍ انْظُرُوا الَّذِي أُمِرْتُمْ بِهِ فَاعْمَلُوا بِهِ وَالَّذِي نُهِيتُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
‘‘কিছু মানুষ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরজায় বসে ছিলেন। তাদের কেউ বলেন, আল্লাহ কি একথা বলেন নি? আবার কেউ বলেন: আল্লাহ কি একথা বলেন নি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একথা শুনতে পান। তিনি বেরিয়ে আসেন। তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডল ক্রোধে লাল হয়ে যায়, যেন তাঁর মুখমণ্ডলে বেদানার রস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তোমাদের কি এরূপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে আল্লাহর কিতাবের এক অংশকে অন্য অংশের বিপরীতে দাঁড় করাবে? তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগুলি এরূপ করার কারণেই বিভ্রান্ত হয়েছে। তোমাদের কাজ এটি নয়। তোমাদেরকে কি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দেখ এবং তা পালন কর। যা তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে তা বর্জন কর।’’[10]
অন্য হাদীসে আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوا عَلَيْهِ إِلا أُوتُوا الْجَدَلَ
‘‘কোনো জাতি হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়ার পরে বিভ্রান্ত হওয়ার একটিই কারণ তা হলো তারা বিতর্কের লিপ্ত হয়।’’[11]
[2] ইবনু ফারিস, মু’জামু মাকাঈসিল লুগাহ ৬/১৫; ড. ইবরাহীম আনীস, আল-মু’জামুল ওয়াসীত ২/১০০১।
[3] আবূ দাউদ ৪/১৯৮; আহমদ, আল-মুসনাদ ৪/১০২; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/২১৮। হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনু হাজার হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানী, সিলসিলাতুস সাহীহাহ ১/৪০৪-৪১৪।
[4] খাত্তাবিয়্যাহ সম্প্রদায় বিশ্বাস করত যে, আলী (রাঃ) ও তাঁর বংশের ইমামগণ আল্লাহর সন্তান ও প্রিয়পাত্র, তাদের মধ্যে ‘উলূহিয়্যাত’ বা আল্লাহর সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারণে ইলাহ হওয়ার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। আল্লাহর সাথে সুস্পষ্ট শির্ক করার কারণে এদেরকে মুসলিম উম্মাহর ইমামগণ একবাক্যে কাফির বলে ঘোষণা করেন। দেখুন: বাগদাদী, আব্দুল কাহির, আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ. ২৪৭।
[5] ইবনু আবেদীন, রাদ্দুল মুহতার ১/৫৬১।
[6] ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস, পৃ ৮১-৮৭।
[7] মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৪৪৪-১৪৪৬; হাকিম নাইসাপূরী, আল-মুসতাদরাক ২/৪০৪, ৪৪০, ৪৪৫, ৪/৬১৭; ইবনু হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী ৮/৩১০, ৫৫৭, ৬৮৬।
[8] সূরা (৩) আল-ইমরান: ৭ আয়াত।
[9] মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২০৫৩।
[10] আহমদ, আল-মুসনাদ ২/১৯৫।
[11] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৩৭৮। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ।