জান্নাত ও জাহান্নম মানুষের চূড়ান্ত ঠিকানা ও গন্তব্যস্থল। কুরআন ও হাদীসে জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ রয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে বলেছি যে, কুরআন কারীমের প্রায় প্রতি পৃষ্ঠাতেই আখিরাত ও জান্নাত-জাহান্নাম বিষয়ক কিছু কথা রয়েছে। এখানে দু-একটি আয়াত উল্লেখ করছি।
মহান আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلائِكَةٌ غِلاظٌ شِدَادٌ لا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
‘‘হে মু’মিনগণ, তোমরা নিজদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফিরিশ্তাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ তাদেরকে যা আদেশ করেন, আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।’’[1]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ هَذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍ مَنْ خَشِيَ الرَّحْمَنَ بِالْغَيْبِ وَجَاءَ بِقَلْبٍ مُنِيبٍ ادْخُلُوهَا بِسَلامٍ ذَلِكَ يَوْمُ الْخُلُودِ لَهُمْ مَا يَشَاءُونَ فِيهَا وَلَدَيْنَا مَزِيدٌ
‘‘সে দিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব, ‘তুমি কি পূর্ণ হয়ে গিয়েছ?’ জাহান্নাম বলবে: ‘আরও আছে কি?’ আর জান্নাতকে নিকটস্থ করা হবে মুত্তাকীগণের, কোনো দূরত্ব থাকবে না। এরই প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী হিফাযতকারীর জন্য। যারা না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে এবং বিনীতচিত্তে উপস্থিত হয়। তাদেরকে বলা হবে, ‘শান্তির সাথে তোমরা এতে প্রবেশ কর; তা অনন্ত জীবনের দিন।’ সেথায় তারা যা কামনা করবে তাই পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে আরো অধিক।’’[2]
তিনি আরো বলেন:
أَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّومِ إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِلظَّالِمِينَ إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيمِ طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ فَإِنَّهُمْ لآَكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيمٍ
‘‘আপ্যায়নের জন্য এ-ই শ্রেয় না যাক্কুম বৃক্ষ? জালিমদের জন্য আমি তা সৃষ্টি করেছি পরীক্ষা স্বরূপ। এ বৃক্ষ উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে, এর মোচা যেন শয়তানের মাথা তারা তা হতে ভক্ষণ করিবে, এবং উদর পূর্ণ করবে এর দ্বারা। তদুপরি তাদের জন্য ফুটন্ত পানির মিশ্রণ।’’[3]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ يَلْبَسُونَ مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آَمِنِينَ لا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلا الْمَوْتَةَ الأُولَى وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ فَضْلا مِنْ رَبِّكَ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘‘মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে, তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং মুখামুখী হয়ে বসবে। এইরূপ ঘটবে; তাদেরকে সঙ্গিনী দিব আয়াতলোচনা হুর, সেথায় তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফল মূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করিবেন, তোমার প্রতিপালক নিজ অনুগ্রহে। এ-ই তো মহা সাফল্য।’’[4]
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন:
والجنة والنار مخلوقتان اليوم لا تفنيان أبدا، ولا تموت الحور العين أبدا، ولا يفني عقاب الله تعالي وثوابه سرمدا.
‘‘জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে সৃষ্ট অবস্থায় রয়েছে (পূর্বেই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।) জান্নাত ও জাহান্নাম কখনোই বিলুপ্ত হবে না। আয়তলোচনা হূরগণ কখনোই মৃত্যুবরণ করবে না। মহান আল্লাহর অনন্ত-চিরস্থায়ী শাস্তি ও পুরস্কার কখনোই বিলুপ্ত হবে না।’’[5]
[2] সূরা (৫০) কাফ: ৩০-৩৫ আয়াত।
[3] সূরা (৩৭) সাফ্ফাত: ৬২-৬৭ আয়াত।
[4] সূরা (৪৪) দুখান: ৫১-৫৭ আয়াত।
[5] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৬৫-১৬৮।