হাউয (الحوض) অর্থ চৌবাচ্চা, পুকুর বা জলাশয়। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে একটি পবিত্র ‘হাউয’ দান করেছেন যেখান থেকে তাঁর উম্মাত কিয়ামতের দিন পানি পান করবে। ত্রিশেরও অধিক সাহাবী থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ে এ বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আল্লামা ইবনু আবিল ইয্য হানাফী শারহুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ গ্রন্থে বলেন:
الأحاديث الواردة في ذكر الحوض تبلغ حد التواتر، رواها من الصحابة بضع وثلاثون صحابيا، ولقد استقصى طرقها شيخنا العلامة عماد الدين ابن كثير تغمده الله برحمته في آخر تاريخه الكبير المسمى البداية والنهاية
‘‘হাউযের বিষয়ে বর্ণিত হাদীসগুলি মুতাওয়াতির পর্যায়ের। প্রায় ৩৫ জন সাহাবী থেকে এ বিষয়ক হাদীসগুলি বর্ণিত। আমাদের উস্তাদ আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবনু কাসীর (রাহ) ‘আল-বিদয়া ওয়ান নিহায়া’ নামক তার বৃহৎ ইতিহাসগ্রন্থের শেষে এ বিষয়ক হাদীসগুলি একত্রিত করেছেন।’’[1]
এক হাদীসে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إِنَّ قَدْرَ حَوْضِي كَمَا بَيْنَ أَيْلَةَ وَصَنْعَاءَ مِنْ الْيَمَنِ وَإِنَّ فِيهِ مِنْ الأَبَارِيقِ كَعَدَدِ نُجُومِ السَّمَاءِ
‘‘ফিলিস্তিন থেকে ইয়ামানের সান‘আ পর্যন্ত যে দূরত্ব আমার হাউযের পরিমান তদ্রূপ। তথায় পানপাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকারাজির ন্যায়।’’[2]
অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إِنَّ حَوْضِي أَبْعَدُ مِنْ أَيْلَةَ مِنْ عَدَنٍ لَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنْ الثَّلْجِ وَأَحْلَى مِنْ الْعَسَلِ بِاللَّبَنِ وَلآنِيَتُهُ أَكْثَرُ مِنْ عَدَدِ النُّجُومِ وَإِنِّي لأَصُدُّ النَّاسَ عَنْهُ كَمَا يَصُدُّ الرَّجُلُ إِبِلَ النَّاسِ عَنْ حَوْضِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَعْرِفُنَا يَوْمَئِذٍ قَالَ نَعَمْ لَكُمْ سِيمَا لَيْسَتْ لأحَدٍ مِنْ الأمَمِ تَرِدُونَ عَلَيَّ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ
‘‘আদান (ইয়ামান) থেকে আইলা (ফিলিস্তিন)-এর যে দূরত্ব তার চেয়ে বেশি প্রশস্ততা আমার হাউযের। তার পানি বরফের চেয়েও বেশি শুভ্র এবং মধু মিশ্রিত দুগ্ধের চেয়েও বেশি মিষ্ট। তার পানপাত্রগুলি সংখ্যা আকাশের তারকারাজির চেয়েও বেশি। একজন মানুষ যেমন তার হাউয থেকে অন্য মানুষদের উট ঠেকিয়ে রাখে আমি তেমন ভাবে আমার উম্মাত ছাড়া অন্য মানুষদের ঠেকিয়ে রাখব। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আমাদেরকে চিনবেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তোমদের এমন একটি চিহ্ন রয়েছে যা অন্য কোনো উম্মাতের নেই, তোমরা আমার নিকট যখন আগমন করবে তখন ওযুর কারণে তোমাদের ওযুর অঙ্গগুলি শুভ্রতায় উদ্ভাসিত থাকবে।’’[3]
সাহল ইবনু সা’দ, আবু সাইদ খুদরী ও আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :
إِنِّي فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ، فَأَقُولُ: إِنَّهُمْ مِنِّي فَيُقَالُ إِنَّكَ لا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ (في رواية: إِنَّكَ لا تَدْرِي مَا عَمِلُوا بَعْدَكَ)، فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِي.
‘‘আমি আগে হাউযে গিয়ে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করব। যে আমার কাছে যাবে সে (হাউয) থেকে পান করবে, আর যে পান করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। অনেক মানুষ আমার কাছে (হাউযে পানি পানের জন্য) আসবে, যাদেরকে আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে, কিন্তু তাদেরকে আমার কাছে আসতে দেওয়া হবে না, বাধা দেওয়া হবে। আমি বলব: এরা তো আমারই উম্মত। তখন উত্তরে বলা হবে : আপনি জানেন না, এরা আপনার পরে কী-সব নব উদ্ভাবন করেছিল। (দ্বিতীয় বর্ণনায়: আপনার পরে তারা কী আমল করেছে তা আপনি জানেন না।) তখন আমি বলব: যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে তারা দূর হয়ে যাক! তারা দূর হয়ে যাক!!’’[4]
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন,
بَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) ذَاتَ يَوْمٍ بَيْنَ أَظْهُرِنَا إِذْ أَغْفَى إِغْفَاءَةً ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ مُتَبَسِّمًا فَقُلْنَا مَا أَضْحَكَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أُنْزِلَتْ عَلَيَّ آنِفًا سُورَةٌ فَقَرَأَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ...)، ثُمَّ قَالَ أَتَدْرُونَ مَا الْكَوْثَرُ؟ فَقُلْنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: فَإِنَّهُ نَهْرٌ وَعَدَنِيهِ (أعطانيه) رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْهِ خَيْرٌ كَثِيرٌ هُوَ حَوْضٌ تَرِدُ عَلَيْهِ أُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ آنِيَتُهُ عَدَدُ النُّجُومِ فَيُخْتَلَجُ الْعَبْدُ مِنْهُمْ فَأَقُولُ رَبِّ إِنَّهُ مِنْ أُمَّتِي فَيَقُولُ مَا تَدْرِي مَا أَحْدَثَتْ بَعْدَكَ
‘‘একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মাঝে ছিলেন। তিনি একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হন। এরপর তিনি হাঁসিমখে মাথা উঠান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি হাঁসছেন কেন? তিনি বলেন, এখন আমার উপরে একটি সূরা নাযিল করা হলো। অতঃপর তিনি সূরা কাউসার পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা কি জান কাউসার কী? আমরা বললাম: আল্লাহ এবং তার রাসূলই অধিক অবগত। তিনি বলেন: কাউসার হলো একটি নদী যা মহান আল্লাহ আমাকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (অন্য বর্ণনায়: যা তিনি আমাকে প্রদান করেছেন)। তাতে রয়েছে অনেক কল্যাণ। এ হলো হাউয, যেখানে আমার উম্মাত কিয়ামতের দিন আমার নিকট আগমন করবে। তার পানপাত্রগুলি তারকারাজির ন্যায়। কোনো কোনো বান্দাকে সেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক, এ তো আমার উম্মাতের একজন। তখন তিনি বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে এরা কি নব-উদ্ভাবন করেছিল।’’[5]
অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ وَزَوَايَاهُ سَوَاءٌ وَمَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنْ الْوَرِقِ (مِنْ اللَّبَنِ) وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنْ الْمِسْكِ وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلا يَظْمَأُ بَعْدَهُ أَبَدًا
‘‘আমার হাউযের প্রশস্ততা একমাসের পথ। এর সকল কোণ সমান। এর পানি দুধের চেয়েও (অন্য বর্ণনায় রৌপ্যের চেয়েও) শুভ্র এবং মেশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধ। তার পানপাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকারাজির ন্যায়। যে ব্যক্তি এ থেকে পান করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।’’[6]
[2] বুখারী, আস-সহীহ ৫/২৪০৫; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৮০০।
[3] মুসলিম, আস-সহীহ ১/২১৭, ৪/১৭৯৮-১৭৯৯।
[4] বুখারী, আস-সহীহ ৫/২৪০৬, ৬/২৫৮৭; মুসলিম, আস-সহীহ ১/২১৮, ৪/১৭৯৩-১৭৯৫।
[5] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩০০
[6] বুখারী, আস-সহীহ ৫/২৪০৫; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৯৩।