একজন মুসলিম বিশ্বাস করেন যে, মহানবী মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বজনীন ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু উম্মতকে শিখিয়েছেন ও জানিয়েছেন সবকিছুই তিনি সত্য বলেছেন। তার সকল শিক্ষা, সকল কথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। উম্মতের দায়িত্ব হলো, কথাটি তিনি বলেছেন কিনা, কর্মটি তিনি করেছেন কিনা বা শিক্ষাটি তিনি দিয়েছেন কিনা তা যাচাই করা। কোনো কথা, শিক্ষা বা কর্ম তাঁর বলে প্রমাণিত হলে তা সত্য বলে গ্রহণ করায় কোনো মুমিন দ্বিধা করতে পারেন না। এ হলো তাঁকে রাসূল বলে বিশ্বাস করার অর্থ। মহান আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآَمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَجْعَلْ لَكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘‘হে মু’মিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তার রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, তিনি তাঁর রহমত থেকে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দান করবেন এবং তোমাদেরকে তিনি নুর (আলো বা জ্যোতি) দান করবেন, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তোমাদেরকে তিনি ক্ষমা করবেন। এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।’’[1]
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنْزَلْنَا وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘‘অতএব তোমরা আল্লাহর উপর এবং তার রাসূলের উপর এবং যে নূর (আলো বা জ্যোতি) আমি নাযিল করেছি তার (কুরআনের) উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। এবং আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।’’[2]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন:
فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘‘তোমার প্রতিপালকের শপথ, তারা কখনোই মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তারা তাদের মধ্যে বিরাজিত সকল বিষয়ে তোমার বিধানের স্মরণাপন্ন হবে, তোমার দেওয়া বিধানের ব্যাপারে তাদের মনের গভীরে কোনো আপত্তি অনুভব করবে না এবং সর্বান্তঃকরণে আপনার বিধান মেনে নেবে।’’[3]
কাজেই কোনো বিধান রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বলে কুরআন বা সহীহ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে সে বিষয়ে আর কোনো মুমিনের হৃদয়ে দ্বিধা বা আপত্তি থাকতে পারে না। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالا مُبِينًا
‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিধান দান করলে সে ব্যাপারে কোনো মুমিন পুরুষ বা নারীর আর কোনো পছন্দ করার বা বাছাই করার অধিকার থাকে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল সে স্পষ্ট বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার মধ্যে নিপতিত হল।’’[4]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
‘‘রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তোমরা তা গ্রহণ করো, আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক।’’[5]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর বিশ্বাস আনয়ন না করলে, তাঁর সকল শিক্ষা ও সকল কথাকে সত্য বলে না মানলে আল্লাহকে মানা বা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কোনো মূল্য থাকে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বা তাঁর কোনো প্রমাণিত শিক্ষাকে অবিশ্বাস বা অবজ্ঞা করার অর্থ চূড়ান্ত কুফ্রী এবং তার পরিণতি ভয়ংকর। আল্লাহ বলেছেন:
وَمَنْ لَمْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيرًا
‘‘আর যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে আমি কাফিরদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্ত্তত করে রেখেছি।’’[6]
কাজেই কোনো কথা বা শিক্ষা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বলে প্রমাণিত হলে তা অবিশ্বাস করা, অবহেলা করা, অবজ্ঞা করা বা বিকৃত করা কোনো মুসলিমের কর্ম নয়। আমরা জানি আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি যে শিক্ষা দিয়েছেন তা দুটি সূত্র থেকে আমরা পাই: কুরআন কারীম ও হাদীস শরীফ। যদি কোনো কথা বা শিক্ষা পবিত্র কুরআনে আছে বা সহীহ হাদীসে আছে বলে আমরা জানতে পারি, তবে তাকে সর্বান্তঃকরণে মেনে নেওয়া ও বিশ্বাস করাই মুসলিমের দায়িত্ব।
[2] সূরা (৬৪) তাগাবুন: ৮ আয়াত।
[3] সূরা (৪) নিসা: ৬৫ আয়াত।
[4] সূরা (৩৩) আহযাব: ৩৬ আয়াত।
[5] সূরা হাশর ৭ আয়াত।
[6] সূরা (৪৮) আল-ফাতহ: ১৩ আয়াত।