ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী الأصل الخامس: الإيمان باليوم الآخر - পঞ্চম মূলনীতি: শেষ দিবসের প্রতি ঈমান শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
كيفية قبض روح المتوفى وما لها بعد وفاته - রূহ কবয করার পদ্ধতি এবং মৃত্যুর পর তার গন্তব্যস্থল

বারা ইবনে আযিবের দীর্ঘ হাদীছের মধ্যে রূহ কবয করা এবং মৃত্যুর পর তার গন্তব্যস্থলের বিবরণ এসেছে। হাদীছের পূর্ণ বিবরণ নিমণরূপ:

বারা ইবনে আযিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদা রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে বাকী গোরস্থানে জনৈক আনসারী সাহাবীর জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য বের হলাম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলামুখী হয়ে বসে পড়লেন। আমরাও তার চারপাশে বসে গেলাম। আমরা তখন এত নিরবতা অবলম্বন করেছিলাম যে, মনে হচ্ছিল, আমাদের মাথায় যেন পাখি বসে আছে। তার হাতে ছিল একটি কাঠি। তখনো কবরের খনন কাজ চলছিল। কাঠি দিয়ে তিনি মাটিতে খোঁচাচ্ছিলেন এবং একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন আবার যমীনের দিকে মাথা অবনত করছিলেন। তিনবার তিনি দৃষ্টি উঁচু করলেন এবং নীচু করলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাও’’। কথাটি দু’বার অথবা তিনবার বললেন। অতঃপর তিনবার এ দু’আটি পাঠ করলেন,

« أَعُوْذُ بِاللَّه مِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ»

‘‘আমি আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই।’’ তারপর তিনি বললেন, মুমিন বান্দার নিকট যখন দুনিয়ার শেষ দিন এবং আখিরাতের প্রথম দিন উপস্থিত হয় তখন আকাশ থেকে উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট একদল ফেরেশতা উপস্থিত হন। তাদের সাথে থাকে জান্নাতের পোষাক এবং জান্নাতের সুঘ্রাণ। মুমিন ব্যক্তির চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় তারা ততোদূরে বসে থাকেন। এমন সময় মালাকুল মাউত উপস্থিত হয় এবং তার মাথার পাশে বসে বলতে থাকে, হে পবিত্র আত্মা! তুমি আপন প্রভুর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বের হয়ে আসো। এ কথা শুনার পর মুমিন ব্যক্তির রূহ্ অতি সহজেই বের হয়ে আসে। যেভাবে কলসীর মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে থাকে। অতঃপর মালাকুল মাওত রূহ কবয করে। রূহ কবয করার পর ফেরেশতাগণ সেটাকে মালাকুল মাওতের হাতে চোখের পলক পরিমাণ সময়ও রাখেন না। অর্থাৎ রূহ বের হওয়ার সাথে সাথে ফেরশতাগণ তাকে উপরোক্ত সুঘ্রাণযুক্ত কাপড়ে জড়িয়ে নেন। তা থেকে এমন সুঘ্রাণ বের হতে থাকে যার চেয়ে উত্তম সুঘ্রাণ আর হতে পারেনা। তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ আকাশের দিকে উঠে যায়। যেখান দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই ফেরেশতাগণ জিজ্ঞাসা করেন, এটা কার পবিত্র আত্মা? উত্তরে অতি উত্তম নাম উচ্চারণ করে বলা হয় অমুকের পুত্র অমুকের। আকাশে পৌঁছে গিয়ে দরজা খুলতে বলা হলে তা খুলে দেয়া হয়। তার সাথে প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ দ্বিতীয় আকাশ পর্যন্ত গমণ করেন। এভাবেই এক এক করে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দার নামটি ইলিস্নয়ীনের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে দাও। অতঃপর তাকে নিয়ে যমীনে ফিরে যাও। কেননা আমি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। মাটির মধ্যেই তাকে ফিরিয়ে দিবো এবং সেখান থেকে তাকে পুনরায় জীবিত করবো।

   নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন কবরে তার আত্মা ফেরত দেয়া হয়। ওখানে দু’জন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার প্রতিপালক কে? তিনি উত্তরে বলেন, আমার প্রতিপালক হচ্ছেন আল্লাহ। আবার জিজ্ঞাসা করেন, দুনিয়াতে তোমার দীন কী ছিল? তিনি উত্তর দেন, আমার দীন হচ্ছে ইসলাম। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করেন, তোমাদের কাছে যে লোকটিকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে? জবাবে তিনি বলেন, তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন ফেরেশতা দু’জন তাকে বলেন, তুমি কিভাবে ইহা জানতে পারলে? তিনি তখন বলেন, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি। অতঃপর তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি এবং সেটাকে বিশ্বাস করেছি।

তখন আকাশ থেকে মহান আল্লাহ ঘোষণা করতে থাকেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। তার জন্যে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও, সে যেন জান্নাতের বাতাস ও সুঘ্রাণ পেতে পারে। তার কবরটি তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন একজন সুন্দর আকৃতি ও উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট লোক উত্তম পোষাক পরিধান করে এবং সুঘ্রাণে সুরভিত হয়ে তার কাছে আগমন করেন এবং বলেন, তুমি খুশি হয়ে যাও। তোমার সাথে যে ওয়াদা করা হয়েছিল তা আজ পূর্ণ করা হবে। মুমিন ব্যক্তি লোকটিকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তুমি? তোমার চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে তুমি কোনো না কোনো সুখবর নিয়ে এসেছো। তিনি বলেন, আমি তোমার সৎ আমল। তখন মুমিন ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহ! তুমি এখনই কিয়ামত সংঘটিত করো। আমি আমার পরিবারের সাথে মিলিত হবো। তখন তাকে বলা হয় তুমি এখানে আরামে বসবাস করতে থাক। তোমার কোনো চিন্তা ও ভয় নেই।