ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী الأصل الخامس: الإيمان باليوم الآخر - পঞ্চম মূলনীতি: শেষ দিবসের প্রতি ঈমান শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
التوفي بالنوم والتوفي بالموت - নিদ্রার মাধ্যমে রূহ কবয করা এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তা কবয করা

‘‘যে রূহটি মাতৃগর্ভে ফুঁকে দেয়া হয়, যা দেহকে সচল রাখে এবং সেটিই মৃত্যুর সময় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। এটিই নিদ্রার সময় দেহ থেকে আলাদা হয়। একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের সময় যখন ঘুমিয়েছিলেন, তখন জাগ্রত হয়ে বলছিলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন ইচ্ছা আমাদের রূহগুলো কবয করে নিয়েছেন এবং যখন ইচ্ছা ফেরত দিয়েছেন। বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! যিনি আপনার জান কবয করে নিয়েছিলেন, তিনি আমার জানও কবয করে নিয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾

‘‘মৃত্যুর সময় আল্লাহই রূহসমূহ কবয করেন আর যে এখনো মরেনি নিদ্রাবস্থায় তার রূহ কবয করেন। অতঃপর যার মৃত্যুর ফায়ছালা কার্যকরী হয় তাকে রেখে দেন এবং অন্যদের রূহ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেরত পাঠান। যারা চিন্তা-ভাবনা করে তাদের জন্য এর মধ্যে বড় নিদর্শন রয়েছে’’। (সূরা যুমার: ৪২)

ইবনে আব্বাস এবং অধিকাংশ মুফাস্সির বলেন, আল্লাহ তা‘আলা দুইভাবে রূহ কবয করেন। মৃত্যুর মাধ্যমে এবং ঘুমের মাধ্যমে। অতঃপর ঘুমের মধ্যেই যাদের হায়াত শেষ হয়ে যায়, তাদের জান ঘুমের মধ্যেই কবয করা হয়। আর যাদের হায়াত অবশিষ্ট থাকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ করার জন্য। অতঃপর মৃত্যুর সময় তাদের মৃত্যু আগমন করে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘুমানোর সময় বলতেন,

    بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ

‘‘হে আমার রব! তোমার নামে আমি আমার পার্শ্বদেশ বিছানায় রাখছি। তোমার নামে তা বিছানা থেকে উঠাচ্ছি। তুমি যদি আমার রূহ আটকিয়ে রাখো, তাহলে তুমি তাকে ক্ষমা করো, তাকে রহম করো এবং তুমি যদি তাকে ছেড়ে দাও, তাহলে তাকে তুমি সেভাবে হেফাযত করো, যেভাবে তুমি তোমার সৎ বান্দাদেরকে হেফাযত করে থাকো’’।[1]

 উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরের ব্যাপারে মুফাসসিরদের দু’টি মতের এটি একটি মত। যে রূহকে আটকিয়ে রাখা হয় এবং যাকে ছেড়ে দেয়া হয়, তাদের উভয়টিকে ঘুমের মধ্যে মৃত্যু দেয়া হয়। যার ঘুমের মধ্যে বয়স পূর্ণ হয়ে যায়, আল্লাহ তা‘আলার তার রূহ আটকিয়ে রাখেন; তাকে তার দেহের নিকট ফেরত দেন না। আর যে ব্যক্তি তার বয়স ঘুমের মধ্যে পূর্ণ করে না, তার রূহ দেহের মধ্যে ফেরত দেন’’।

অন্য মতটি হলো, যার রূহ ঘুমের মধ্যে আটকিয়ে দেয়া হয়, তাকে প্রথমত ঘুমের মধ্যে মৃত্যু দেয়া হয় অতঃপর চিরতরে মৃত্যু দেয়া হয়। আর যাকে ছেড়ে দেয়া হয়, তাকে শুধু ঘুমের মৃত্যু দেয়া হয়। এর ভিত্তিতে আয়াতের অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা ঘুমের ঘোরে মৃতের রূহ কবয করেন এবং আটকিয়ে রাখেন। কিয়ামতের পূর্বে তাকে ছাড়বেন না। ঘুমন্ত ব্যক্তির প্রাণ কবয করেন। অতঃপর জাগ্রত হওয়ার সময় সেটাকে তার দেহের মধ্যে ছেড়ে দেন। যাতে করে সে তার অবশিষ্ট হায়াত পূর্ণ করতে পারে। পরিশেষে তার অপর একটি মৃত্যু হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُم بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُم بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُّسَمًّى ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾

‘‘তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কিছু করো তা জানেন। আবার পরদিন তোমাদের সেই কর্মজগতে ফেরত পাঠান, যাতে জীবনের নির্ধারিত সময়-কাল পূর্ণ হয়। পরিশেষে তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি জানিয়ে দিবেন তোমরা কি কাজে লিপ্ত ছিলে’’। (সূরা আনআম: ৬০)


[1]. সহীহ বুখারী ৬৩২০।