ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী কয়েক প্রকার বড় শিরকের বর্ণনা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
১) الشرك في الخوف ভয়ের মধ্যে শিরক (শেষ অংশ)

আগের পাতার শেষ অংশ..

 

কেননা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া তার সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করা এবং তার রহমতের প্রশস্ততা ও তার ক্ষমার বিশালতা সম্পর্কে অজ্ঞতার অন্তুর্ভুক্ত। আর আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করা আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে বান্দার অজ্ঞতার প্রমাণ। সেই সঙ্গে তার নফসের উপর নির্ভর করা অহংকারের মধ্যে শামিল।

 

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছগুলোর মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে যে, বান্দা সবসময় ভয় ও আশার মধ্যে থাকবে। সে যখন আল্লাহকে ভয় করবে, তখন তার ভয় যেন তাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না করে এবং সে যেন হতাশাগ্রস্থ না হয়। বরং ভয় করার সাথে সাথে আল্লাহর রহমত কামনা করবে। আর যখন সে আল্লাহর রহমতের আশা করবে, তখন সে যেন তাতে এভাবে সীমা লংঘন না করে যে সে আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে করে।

কোনো কোনো সালাফ সুস্থ ও সুখে থাকা অবস্থায় বান্দার মধ্যে ভয়ের দিকটা বেশি থাকা পছন্দ করতেন। আর অসুস্থ অবস্থায় এবং মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের আশা-আকাঙ্খার দিকটাকে প্রাধান্য দেয়া মুস্তাহাব মনে করতেন।

সুতরাং অন্তরের মধ্যে ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্খার ভারসাম্য বজায় থাকা মানুষকে আমলের প্রতি উৎসাহিত করে, পাপাচার থেকে দূরে রাখে এবং তাওবার দিকে ধাবিত করে। আর যখন অন্তরের মধ্যে উপরোক্ত দু’টি বিষয়ের মধ্যকার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, তখন অন্তর একদিকে ঝুকে পড়ে। আর এটি আমলের প্রতি অন্তরের আগ্রহকে অকেজো করে দেয়, তাওবার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং বান্দাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

পূর্ববর্তী যেসব জাতি তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয়-ভীতি মুছে ফেলার কারণে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিল, তাতে ঈমানদারদের জন্য সর্বোত্তম উপদেশ রয়েছে। আল্লাহ তাদের ঘটনাবলী কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন।

হুদ আলাইহিস সালামের জাতি হুদকে বলেছিল,

﴿سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَوَعَظْتَ أَمْ لَمْ تَكُن مِّنَ الْوَاعِظِينَ إِنْ هَٰذَا إِلَّا خُلُقُ الْأَوَّلِينَ وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ فَكَذَّبُوهُ فَأَهْلَكْنَاهُمْ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾

তুমি উপদেশ দাও অথবা না দাও, উভয়ই আমাদের জন্য সমান। এ ব্যাপারগুলো তো পূর্বপুরুষদের রীতিনীতি মাত্র। আমরা আযাবের শিকার হবো না। শেষ পর্যন্ত তারা তাকে মিথ্যা জ্ঞান করলো এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম। নিশ্চয় এর মধ্যে আছে একটি নিদর্শন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না’’। (সূরা শুআরা: ১৩৬-১৪৯)


সুতরাং ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্খা ইবাদতের বিরাট একটি প্রকার। অতএব এ দু’টির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইখলাস থাকা জরুরী। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তাওহীদ ত্রুটিযুক্ত হবে এবং ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে।[6]


[6]. ইমাম আবু আলী রুযবারী রহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর আযাবের ভয় করা এবং তার রহমতের আশা রাখা একটি পাখির দু’টি ডানার ন্যায়। যখন পাখা দু’টি এক সমান থাকে তখন পাখি আকাশে স্থির থাকে এবং পাখিটি সোজাভাবে চলতে পারে। একটি পাখা ত্রুটিযুক্ত হলে পাখির চলার মধ্যে ত্রুটি চলে আসে। আর যখন উভয় পাখাই চলে যায়, তখন পাখিটি মারা যায়। যারা আল্লাহর আযাবের ভয় করে এবং তার রহমতের আশা রাখে তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَمْ مَنْ هُوَ قَانِتٌ آَنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآَخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ﴾

‘‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালের ভয় করে এবং তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না? (সূরা যুমার: ৯)