ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-৯০ : কোন হারাম বা পাপাচারমূলক কাজ ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে শাসকবর্গের সাথে মতবিরোধ করা অথবা বিরোধিতা করার হুকুম কী?

উত্তর : হারাম বা পাপাচার মূলক কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে মুসলিম শাসকদের বিরোধিতা করা হারাম, খুবই মারাত্মক হারাম। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবাধ্য হয়ে থাকে।[1]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنْكُمْ }

তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের উলুল আমর বা কর্তা ব্যক্তিদের। (সূরা আন নিসা  আয়াত নং ৫৯)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من يطع الأمير فقد أطاعني، ومن عصى الأمير فقد عصاني

যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করলো সে যেন আমারই আনুগত্য করলো পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নেতার অবাধ্য হলো সে যেন আমারই বিরোধী হলো।[2]

শাসকদের অবাধ্যচরণ করার দ্বারা উম্মাহর ঐক্য শৃঙখলা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, মাতনৈক্য মতাবিরোধ ছড়িয়ে পড়ে, ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি হয় এবং শান্তি শৃঙখলা বিনষ্ট হয়।

শাসকের নিকট বাই‘আত গ্রহণের দাবি হচ্ছে সৎকাজে তার আনুগত্য করা, আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেয়ার অর্থ হলো কৃত অঙ্গীককারের খিয়ানত করা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدْتُمْ }

তোমরা আল্লাহর অঙ্গিকার করে থাকলে তা পূরণ করো (সূরা আন নাহল ৯১)।

অঙ্গীকারের খিয়ানত করা মুনাফিকদের অভ্যাস/বৈশিষ্ট্য।


[1]. ইমাম ইসমাঈল ইবনে ইযাহ ইয়া আল-মুযানী (রহ.) তার শারহুস সুন্নাহ নামক গ্রন্থে বলেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজে শাসকের আনুগত্য করতে হবে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কাজে আনুগত্য বর্জন করতে হবে। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেন, তারা যদি যুলম করে অথবা পাপাচার করে এবং আমাদের পক্ষে মৌনতা অবলম্বন করা সম্ভব না হয় তাহলে কীভাবে কি করব?

এ প্রশ্নের উত্তর হলো: আমরা মতাবিরোধ ও মতানেক্যপূর্ণ বিষয়গুলো কুরআন সুন্নাহর নিকট সমর্পণ করব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُول }

অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রসূলের দিকে প্রত্যার্পণ কর (সূরা আন নিসা ৫৯) এ আয়াত থেকে জানা যায় যে আল্লাহ তা‘আলা পাপাচার ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে আনুগত্য করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنْكُمْ }

তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের উলুল আমর বা কর্তা ব্যক্তিদের। (সূরা আন নিসা  আয়াত নং ৫৯)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘যদিও তারা তোমাদের সম্পদ গ্রাস করে এবং তোমার পিঠে আঘাত ও করে তবুও তুমি তাদের নির্দেশ শ্রবণ করো এবং আনুগ্যত করো। (ফাতহুল বারী খ. ০৮.পৃ. ১৩) আক্বীদাতুত ত্বাহাবিয়্যাহর ভাষ্যকার ৩৮১ নং পৃষ্ঠায় বলেন ‘‘যুলম অত্যাচার করা সত্ত্বেও তাদের আনুগত্য করার কারণ হলো আনুগত্য বর্জন করলে যে ক্ষতি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয় তা তাদের জুলম অত্যাচারের চেয়ে অনেকগুন বেশি। বরং তাদের যুলম অত্যচারের ধৈর্য ধারণ করলে পাপ মাফ হয়ে যায় এবং ছাওয়াব পাওয়া যায়। কেননা আমাদের আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণেই আল্লাহ তা ‘আলা তাদেরকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। আমরা আমল অনুপাতে প্রতিদান পাব। আমাদের কাজ হলো তাওবাহ (আল্লাহর পথে প্রত্যাবর্তন করা) ইসতিগফার করা (আল্লাহর নিকট কৃত অপরাধের ক্ষমতা প্রার্থনা করা) এবং নিজের কাজ-কর্ম সংশোধন করা।

[2]. সহীহ ইবনু আবী ‘আছিম ‘আস সুন্নাহ পৃ. ১০৬৫-১০৬৮)