ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-৮১ : বর্তমানের কিছু যুবক মনে করে { وَلا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لائِمٍ } (তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না) এর অর্থ হলো ঐ সকল লোক যারা মঞ্চে এবং জনসম্মুখে শাসকদের দোষত্রুটি আলোচনা করে অথবা অডিও ক্যাসেটে সমালোচনা করে এবং তারা আল-আমরু বিল মা‘রূফ ওয়ান নাহয়ু আনিল মুনকার অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধকে শুধু প্রকাশ্যে শাসকদের দোষত্রুটি আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ গণ্য করে। শায়খ আপনার নিকট আমরা আবেদন করছি, আপনি তাদেরকে সহীহ মানহাজের পথনির্দেশিকা প্রদান করুন, এই আয়াতের সহীহ অর্থ বর্ণনা করুন এবং যারা প্রকাশ্যভাবে শাসকদের সমালোচনা করে তাদের বিধান বর্ণনা করুন

উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لائِمٍ }

হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায়কে আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারা তাকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের উপর বিনম্র এবং কাফিরদের উপর কঠোর হবে। আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে ভয় করবে না। (সূরা আল-মায়িদাহ আয়াত নং ৫৪)

আয়াতটি প্রত্যেক মুরতাদকে হত্যা করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হক কথা বলা, আল্লাহর পথে জিহাদ করা, সৎ কাজের আদেশ দান করা এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান করা সবই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর উপদেশ দান, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান ও আল্লাহর পথে জিহাদ করা মানুষের কারণে বা মানুষের ভয়ে পরিত্যাগ করেনি। বরং এ কাজগুলো আল্লাহর পথে দাওয়াত ও কল্যাণের জন্যই করেছে। যেমন-আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ }

তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। (সূরা আন নাহল আয়াত নং ১২৫)

আল্লাহ তাবারাকা তা‘আলা মূসা ও তার ভাই হারুন ‘আলাইহিমাস সালামকে ফির‘আউনের নিকট প্রেরণের সময় নির্দেশ প্রদান করে বলেন,

{ فَقُولا لَهُ قَوْلاً لَيِّناً لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى }

তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (সূরা ত্বহা আয়াত নং ৪৪)

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলেন,

{ فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظّاً غَلِيظَ الْقَلْبِ لانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ }

অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয় সম্পন্ন  হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। (সূরা আলি ইমরান আয়াত নং ১৫৯)

শাসকদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এটা হতে পারে সামনাসামনি/ সরাসরি অথবা লিখনির মাধ্যমে অথবা তাদের সাথে যোগাযোগ করে বর্ণনা করার দ্বারা। এর সবই হতে নম্রতা ও শিষ্টাচারিতার দ্বারা।

মঞ্চে অথবা সাধারণ জনসভায় শাসকদের নিন্দা করা নছীহাতের অন্তর্গত নয়। বরং তা অপবাদ দুর্নাম এবং শাসক ও জনগণের মাঝে ফিতনা ও শত্রুতার ক্ষেত্র স্বরূপ। এর পরিণামে ধারাবাহিকভাবে অনেক অনিষ্ট হয়ে থাকে কখনো কখনো শাসকেরা এ কাজ-কর্মের কারণে আহলুল ‘ইলম ও দাঈদের উপর আক্রমণ করে বসে। সুতরাং এ কাজগুলোকে যে পরিমাণ কল্যাণকর মনে করা হয় তার চেয়ে বেশিই অকল্যাণকর।

অতঃপর যদি সাধারণ জনগণের নিকট গিয়ে অমুকে এই এই কাজ করেছে তাহলে অবশ্যই এই কাজ দুর্নাম বলে গণ্য হবে নছীহার অন্তর্ভুক্ত হবে না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তা‘আলা আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।[1] রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন বিষয়ে সতর্ক করার ইচ্ছা পোষণ করলে নির্দিষ্ট ক্বওম বা জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলতেন না বরং তিনি বলেছেন, জনগণের কি হলো তারা এই এই কথা বলছে।[2] কেননা স্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ করার দ্বারা উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়ে থাকে। কখনো কখনো উপকার তো হয়ই না বরং ব্যক্তি বা সমাজের বহুগুণ অপকার হয়ে থাকে।

নছীহত প্রদানের পদ্ধতি সর্বজন জ্ঞাত। আহলুন নছীহত বা উপদেশ প্রদানকারীদের জন্য অত্যাবশ্যক হলো যেন তাদের ইলম-প্রজ্ঞার এমন স্তরে অবস্থান করা যার দ্বার উপকার ও অপকারের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে এবং পরিণাম সম্পর্কে সম্পর্কে দূরদর্শী হয় কখনো কখনো মন্দ কাজের ইনকার বা প্রত্যাখ্যান মন্দ কাজের দ্বারা করা হয়ে থাকে। যেমনটি শায়খূল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বর্ণনা করেছেন।[3] যদি শারঈ পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে ইনকার/প্রত্যাখ্যান করা/ মতামত খণ্ডন করা হয় তাহলে প্রত্যাখ্যান করাটাই মন্দ হয়ে যায় এবং এর ফলশ্রুতিতে বিশৃঙখলা সৃষ্টি হয়। একই ভাবে শারঈ পদ্ধতি ব্যতিরেকে অন্য কোন পদ্ধতিতে নছীহত প্রদান করা হলে আমরা সেটাকে নছীহত নয় বরং ফাদ্বীহাত (লাঞ্ছনা) ও তাশহীর (দোষ ছড়িয়ে দেয়া), ইছারাত (বিদ্রোহ) ও ফিতনা সৃষ্টিকর বলে থাকি।


[1]. সহীহ মুসলিম হা/২৬৯৯

[2]. সহীহ মুসলিম হা/১৪০১

[3]. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বলেন ‘‘বলা হয় তোমার সৎ কাজের আদেশ প্রদান যেন সৎ মাধ্যমে হয় এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান যেন অসৎ পন্থায় না হয়। সুফিয়ান আছ-ছাওরী (রহ.) বলেন যে, ব্যক্তির মাঝে তিনটি গুণ নাই সে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান করবে না। (ক) যে বিষয়ের আদেশ প্রদান করবে এবং যে বিষয় থেকে বারণ করবে উক্ত বিষয়ে আন্তরিক হবে।

(খ) যে বিষয়ের নির্দেশ প্রদান করবে এবং যা থেকে বারণ করবে উক্ত বিষয়ে ন্যায় পরায়ন হতে হবে।

(গ) যে বিষয়ের নির্দেশ প্রদান করবে এবং যা থেকে বারণ করবে উক্ত বিষয় সম্পর্কে আলিম হতে হবে (ইবনু তাইমীয়া, রিসালাতুল আমরি বিল মা‘রুফ ওয়ান নাহয়্যি আনিল মুনকার, পৃ. ৭, ১৯)।