ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শির্ক কী ও কেন? চতুর্থ পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী
১০. ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাথরের প্রভাবে বিশ্বাস করা

আমাদের দেশে গণক ও হস্তরেখাবিদ নামে কিছু পেশাজীবী লোক রয়েছেন যারা মানুষের চেহারা বা হাত দেখে তাদের ভাগ্যের ভাল-মন্দ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। যারা তাদের শিকার হয় তাদেরকে ভাগ্য বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে তারা তাদেরকে বিভিন্ন রকমের পাথর দ্বারা নির্মিত আংটি ব্যবহারের জন্য দিয়ে থাকে। পাথর দাতা ও গ্রহীতা সকলেই এ সব পাথরের অলৌকিক প্রভাবে বিশ্বাস করে, যা শর‘য়ী দৃষ্টিতে আল্লাহর রুবূবিয়্যাতে শির্কের শামিল। উল্লেখ্য যে, মানুষের ভাগ্যে মহান আল্লাহ দু’টি কারণে বিড়ম্বনা বা দুঃখ দিয়ে থাকেন :

এক. কোনো দুঃখ দুর্দশা দিয়ে তিনি তাদের ঈমান ও ধৈর্যের পরীক্ষা করতে চান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন :

﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ﴾ [البقرة: ١٥٥]

‘‘আমি অবশ্যই ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, জান ও ফসলের ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করবো।’’[1]

দুই, কোনো মানুষকে তার কর্মদোষের ফলেই তিনি তার ভাগ্যে দুর্দশা নামিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন :

﴿ وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠ ﴾ [الشورا: ٣٠]

‘‘তোমাদের উপর যে বিপদ পতিত হয়েছে তা তোমাদের কর্মদোষের ফলেই হয়েছে।’’[2] উপর্যুক্ত দু’টি কারণে ভাগ্যের যে কোনো বিড়ম্বনা আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে। এটি কোনো রোগ-ব্যাধি নয় যে কোনো ঔষধ সেবন বা কোনো পাথর ব্যবহারের মাধ্যমে তা ভাল করা যাবে। তা ভাল করার একমাত্র পথ হচ্ছে এ দিক সে দিক মুখ না করে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা এবং ধৈর্যের সাথে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বৈধ উপায়ে কর্ম করা।

কোনো গণক বা হস্তরেখাবিদের কথা যদি কারো ভাগ্যের অতীত অবস্থার সাথে মিলেও যায়, তবুও এর দ্বারা কারো আশ্চর্যান্বিত ও প্রতারিত হলে চলবে না; কারণ গণকরা অনেক সময় জিনের সহযোগিতায় মানুষের ভাগ্যের অতীত সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে কথা বলে। আবার অনেক সময় এরা ও হস্তরেখাবিদরা অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলে, যার অনেকটা অনেকের ভাগ্যের বাস্তবতার সাথে মিলে যায়।

এদের বক্তব্যের অবস্থা যা-ই হোক না কেন, কারো ভাগ্য পরিবর্তনে তাদের দেয়া পাথরের কোনই প্রভাব নেই; কেননা তা সম্পূর্ণভাবেই আল্লাহ তা‘আলার নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাপার। তা পরিবর্তন করতে হলে যে বৈধ পন্থা অবলম্বন করলে তা পরিবর্তন হতে পারে তা ক’রে পরিবর্তনের জন্য আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। হিকমতের ভিত্তিতে তিনি যাকে ইচ্ছা তা দ্রুত পরিবর্তন করে দেন, আবার যাকে ইচ্ছা বিলম্বে দেন। যারা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য অন্যের কাছে চায় বা মৃত ওলিদের শাফা‘আতের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য বদলাতে চায়, তাদের ভাগ্যও তিনিই তাঁর হিকমতের ভিত্তিতে পরিবর্তন করেন।

এক্ষেত্রে অন্যের বা মধ্যস্থতাকারী মৃত ওলির কোনই হাত নেই। তবে যারা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আল্লাহর নিকট সরাসরি চায়, তারা হবে তাঁর উপাসনাকারী ও তাঁর রুবূবিয়্যাতকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃতিদানকারী। আর যারা অপর কারো কাছে চায় বা কোনো মৃত ওলিদের মধ্যস্থতা অবলম্বন করে, তারা হলো অন্যের উপাসনাকারী ও অন্যের রুবূবিয়্যাতের স্বীকৃতিদানকারী।

>
[1]. আল-কুলআন, সূরা বাক্বারাহ : ১৫৫।

[2] . আল-কুরআন, সূরা শূরা : ৩০।