পরিবেশের এমন একটি প্রভাব-ক্ষমতা আছে যার ফলে ভালো মানুষ খারাপ হয়, আবার। খারাপ মানুষ ভালোও হয়ে থাকে। বহু যুবকই এমন আছে, যাদের মন ভালো, ভালো হওয়ার ইচ্ছাও রাখে, কিন্তু পরিবেশের চাপে খারাপ হয়ে যায়। এ জগতে যেহেতু মন্দলোকের সংখ্যাই বেশি, তাই মন্দের প্রভাব আগে ও বেশি পড়ে যুবকের উপর। আর এ মন্দ পরিবেশে প্রভাবান্বিত তারাই বেশি হয়, যাদের মন দুর্বল, ঈমান দুর্বল, দুর্বল দ্বীনী জ্ঞান। সত্যকে মানতে গিয়ে ঠাট্টা-উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, কটাক্ষ-টিপ্পনী, লোকহাস্য প্রভৃতির শিকার হয়ে অনেকে সত্য ত্যাগ করে বসে। দ্বীন ও দুনিয়ার নানান সমস্যা নিয়ে মানুষের মাঝে যে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব-কলহ আছে তার কুচক্রে পড়ে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। পরিবেশগত বিভিন্নমুখী স্রোতের মুখে নিজের স্বাতন্ত্র্য ও ঈমানকেও বাচিয়ে রাখতে পারে না অনেকে।
ভোগ-বিলাসের প্রবণতা এমন বেড়ে উঠছে যে, সেই বিলাসবহুল দ্বীনহীন পরিবেশে একজন মানুষকে মুসলিম’-রূপে বেঁচে থাকতে প্রয়োজন হল অগাধ ধৈর্যের। “যত (মন্দ) বছর বা যত দিন অতিবাহিত হবে তার তুলনায় আগামী বছর ও দিন হবে আরো মন্দতর।” (আহমদ, বুখারী, ইবনে মাজাহ সহীহুল জামে” ৭৫৭৬ নং)
“এমন দিন আগামীতে আসছে যে, ধৈর্যের সাথে দ্বীন বাচিয়ে রাখতে ঠিক ততটা কষ্টকর মনে হবে, যতটা কষ্টকর মনে হয় হাতের মুঠোয় আগুনের আঙ্গার রাখা।” (তিরমিযী, সহীহুল জামে’ ৮০০২নং) “আগুনের আঙ্গার হাতের মুঠোয় ধরে রাখতে যেমন কঠিন ও কষ্টের কাজ ঠিক তেমনি উম্মতের মতবিরোধ ও কলহের সময় মহানবীর সুন্নাহ (তরীকা) অনুসারে জীবন-যাপন করা কঠিন ও কষ্টের কাজ বলে মনে হবে।” (সহীহুল জামে ৬৬ ৭৬ নং)
এমন পরিবেশে ধৈর্য ধরা সহজ নয়। যেমন সহজ নয় হাতের মুঠোয় আগুন ধরে রাখা। শত বাধা-বিঘ্ন ও আপদ-বিপদ উপেক্ষা করেও যারা দ্বীন ও ঈমান বাঁচিয়ে রাখবে এবং এমন ঘোলাটে নোংরা পরিবেশের আবর্জনায় নিজেদের দ্বীনদারীকে মলিন হতে দেবে না। তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। এমন লোক হবে তারা, যারা প্রত্যেকে ৫০ জন শহীদ সাহাবীর সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে ২২৩৪ নং)
পরিবেশ ইত্যাদির কারণে মুমিনের ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। তাই প্রিয় নবী ৪৪ বলেন, “তোমাদের দেহের ভিতরে ঈমান ঠিক সেইরূপ পুরাতন হয়ে যায়, যেরূপ পুরাতন হয়ে যায় নতুন কাপড়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, যাতে তিনি তোমাদের হৃদয়ে ঈমানকে (ঝালিয়ে) নতুন করে দেন।” (ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহুল জামে ১৫৯০ নং)
পরিবেশের এমন এক শক্তি আছে, যার ফলে মানুষের চরিত্র, ব্যবহার, পরিধান, পানাহার প্রভৃতির মাঝে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার লাভ করে থাকে। পরিবেশ-দোষেই সত্য মিথ্যারূপে এবং মিথ্যা সত্যরূপে, সভ্যতা অসভ্যতারূপে এবং অসভ্যতা সভ্যতারূপে, সুন্নাত বিদআতরূপে এবং বিদআত সুন্নাতরূপে পরিচিতি ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। একই পোশাক
কোন পরিবেশে পরিধান করলে লোকে তা দেখে হাসে। আবার ঐ পোশাকই অন্য এক পরিবেশে পরিধান না করলে লোকে তা না দেখতে পেয়ে আশ্চর্যবোধ, কটাক্ষ ও ব্যঙ্গ করে। তাছাড়া ভালোর তুলনায় নোংরা পরিবেশেরই প্রভাব-ক্ষমতা অধিক।পরশমণির সংস্পর্শে লোহা সোনা হওয়ার কথা শোনা যায় ঠিকই, কিন্তু তার বাস্তবরূপ বিরল। পক্ষান্তরে একটা পঁচা আলুর চারিপাশে বহু আলুকে পঁচ ধরতে অনেকেই দেখে থাকে।
এক যুগ ছিল যখন রেডিও কেনাও পাপ মনে করা হত। কিন্তু আজ আর তা হয় না। পূর্বে টিভিকে অধিকাংশ মুসলিম খারাপ মনে করতেন। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিমই টিভি তো দূরের কথা ডিসকেও খারাপ মনে করেন না। আর এ স্বাভাবিকতা আসে পরিবেশের গুণেই। পরিবেশের চাপেই কাল যা পাপ মনে করা হত, আজ তাকে বৈধ বা পুণ্য কাজ অথবা এক ফ্যাশনরূপে পরিগণিত হতে দেখা যায়।
কোন মুসলিম যদি রমযানের রোযার দিনে কিছু খায় তাহলে তা দেখে অনেকে তাকে মুসলিম নয় বলে ধারণা করবে। কিন্তু ঐ ব্যক্তিকেই নামায ত্যাগ করতে দেখে তারা কোন কিছু মনে করে না। অথচ নামাযের মর্যাদা রোযার চাইতে বহুগুণ উর্ধে। কিন্তু পরিবেশে বেনামাযী ও ‘আটকী-খাটকী-তিনশো ষাটকী’ নামাযীর সংখ্যা বেশী ও স্বাভাবিক হওয়ার ফলে তা আর বড় পাপ বা আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে করা হয় না।
কোন মসজিদের ইমামকে যদি লোকে সোনার আংটি বা অন্য কিছু পরে থাকতে দেখে অথবা বিড়ি-সিগারেট পান করতে দেখে তাহলে সকলের চোখ ডাগর হবে। পক্ষান্তরে তাকে গীবত করতে দেখলে অথবা শিকী তাবীয লিখে ব্যবসা করতে দেখলে লোকের কোন ক্ষেপ দেখা যায় না। অথচ শেষােক্ত কর্মদ্বয়ের পাপ অধিকতর বড়। কারণ, পরিবেশ এমন সৃষ্টি হয়ে থাকে যে, মানুষ সেই হিসাবেই ভালো-মন্দ ও স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক বিচার করে থাকে। অথচ একজন মুসলিমের জন্য এ দৃষ্টিভঙ্গি ও মাপকাঠি হওয়া উচিত নয়। মুসলিমের সর্বকর্ম ও সকল ভালো-মন্দ বিচারের মানদন্ড হল ইসলাম, আল্লাহর বিধান। কারণ, মানুষ পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর মানুষের জ্ঞান-বিবেক সীমিত ও বিভিন্নমুখী। একই বস্তু সকলের কাছে ভালো না-ও হতে পারে। সুতরাং ইসলামকে পরিবেশের ছাঁচে না ঢেলে, বরং পরিবেশকেই ইসলামের ছাঁচে ঢেলে গড়ে তোলা মুসলিমের কর্তব্য।
পরন্তু ইসলামী পরিবেশে মিশে যেতে হবে দুধে চিনি ঘুলে যাওয়ার মত। পক্ষান্তরে অনৈসলামী পরিবেশে মিশতে হলে মিশতে হবে চানাচুরে বাদাম মিশার মত; বড় সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে, যেন নিজস্ব সত্তা, স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য বিলীন ও একাকার হয়ে বা হারিয়ে না যায়।
যদি বল, মাছ ধরব, অথচ গায়ে কাদাও লাগাব না তা কি করে সম্ভব? তাহলে বলা যায় যে, যে মাছ ধরতে গিয়ে তোমার গায়ে কাদা লাগবে এবং তোমার সৌন্দর্য কাদাতে মলিন হয়ে যাবে, সে মাছ ধরতে তুমি যাবে না। মাছ খাওয়ার দরকার একান্তই পড়ে থাকলে ছিপ দিয়েও তো ধরতে পার। হিকমত অবলম্বন করে চললে চলার পথ অতি সহজ।
পরিবেশ মানুষকে অতি সহজে তার দাসে পরিণত করে ফেলে। অস্বাভাবিককে স্বাভাবিক ও পাপকে সাধারণ কর্মে পরিবর্তিত করে। কারণ, প্রত্যেক জিনিসের কসরতই মানুষকে
অভ্যস্ত করে তোলে এবং সেখান থেকে দেখাদেখি শুরু হয় পরিবেশের সৃষ্টি। আর যে মানুষ ঐ পরিবেশে বাস করে সে বুঝতেও পারে না যে, সে যা করছে তা অস্বাভাবিক বা পাপ কাজ। যেমন চামড়ার গুদামে কর্মরত কর্মচারীর জন্য গুদামের ভিতরে অবস্থান করতে কোন কষ্ট হয় না। দুর্গন্ধ নাকে নিতে নিতে অভ্যাসে পরিণত হলে তা সাধারণ গন্ধে পরিবর্তিত হয় তার। কাছে। অথচ বাইরে থেকে অন্য কোন মানুষ সেখানে প্রবেশ করলে আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারে। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে, অর্থাৎ, দেহের কোন। জায়গা (যেমন শিশুদের জন্য মায়ের স্তনবৃন্ত) অধিকরূপে চোষণ করা হয় তখন প্রথম প্রথম তা খুব বেশী অনুভুত হলেও পরের দিকে আর কোন অনুভুতি অবশিষ্ট থাকে না। কারণ, তখন তা অভ্যাস ও স্বাভাবিকতায় পরিবর্তিত হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, পরিবেশের এই অবস্থা হওয়ার ফলে পরিবেশ-দূষণ থেকে বাচা বড় কষ্টকর। আমাদের পরিবেশের এমন নোংরা ও ঘোলাটে অবস্থা যে, সে পরিস্থিতিতে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা বড় দুষ্কর। মাছ ধরার ইচ্ছা না থাকলেও গায়ে যে কাদা লাগবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? কারণ, তোমাকেও তো ঐ পুকুর ধারেই বাস করতে হবে।
‘পশ্চিমে ঝড় ঐ যে আসে পুবে অন্ধকার।
মহাকালের বাজছে প্রলয়-ভেরী,
বসুন্ধরার কাপন বড় ভাঙ্গছে তোরণদ্বার
তুফান আসার নাইকো বেশী দেরী।
ধুলোয় নয়ন আঁধার হল, আকাশ ডাকে গুরু
মাথা গোজার নাইকো কোথাও ঠাই,
কাল-নাগেরি শতেক ফণায় বক্ষ-দুরুদুরু
পালিয়ে যাওয়ার পথ তো জানা নাই।
এমন সংকটাপন্ন পরিবেশে মুসলিম দোটানায় দোদুল্যমান। কাদামাখা পা ধোয়ার চেষ্টা করলেও পা ধুয়ে রাখার স্থান কোথায়? কারণ, সব জায়গাই তো কাদাময়। ধুয়ে পা যদি কাদাতেই রাখতে হয় তাহলে ধোয়ার মুল্যই বা কি থাকে? শুকনো জায়গায় বা পাথরে সরে গিয়ে পা ধুলে অবশ্য ফলপ্রসূ হয়। কিন্তু ‘টকের ভয়ে দেশ ছেড়ে তেঁতুল-তলায় বাসা’ হলে তো আর এক মুশকিল।
সুতরাং এহেন পরিবেশে নিজেকে বাঁচাতে হলে কত যে সাধ, সাধ্য ও সাধনার প্রয়োজন তা বলাই বাহুল্য। চোরকাটা ভরা মাঠে চলতে যেমন কাপড় বাঁচিয়ে চলতে হয়, পিচ্ছিল্য কাদাময় পথে যেমন পা টিপে টিপে চলতে হয়, মাইন-পাতা পথে যেমন গাড়ি সাবধানে চালাতে হয়, ঠিক তেমনি ভাবেই মুসলিমকে সতর্কতার সাথে, পা টিপে, হুঁশিয়ার হয়ে, অতি সন্তর্পণে জীবনের গাড়ি চালিয়ে যেতে হবে।
বৃষ্টি নামলে যেমন ছাতা দিয়ে আড়াল করে নিজেকে ভিজা থেকে বাঁচানো যায়, ঝড় বা শিলাবৃষ্টির সময় যেমন একটি মজবুত আশ্রয়-স্থলের প্রয়োজন হয়, বন্যা এলে যেমন কোন উঁচু ঘর বা স্থান দরকার হয়, তেমনিই অপসংস্কৃতির বিভিন্ন অশ্লীলতা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন উপায়-অসীলার দরকার মুসলিমের।
আমাদের সামনে যে বড় ঝড় আসছে তা হল কুফরী ও ধর্মহীনতার ঝড়। পশ্চিম থেকে যে ঝড়ের লাল মেঘ দেখা দিয়েছে, তা হল জরায়ু-স্বাধীনতা ও যৌনবাদের ঝড়। সর্বগ্রাসী চরিত্ৰবিনাশী যে তুফান আমাদেরকে ধ্বংস করতে এবং যৌন-উন্মাদনার যে বন্যা প্রবল তান্ডবের সাথে নৃত্য করতে করতে আমাদেরকে গ্রাস করতে আসছে, তার কবল হতে রক্ষার জন্য আমাদের প্রয়োজন হল নুহের কি শুীর। আর সে কিশী হল শরীয়ত ও তার নীতিনৈতিকতা। যদি তাতে কেউ না চড়ে তবে ডুবে ও ভেসে যাবে ঐ পাপাচারের বন্যায় প্লাবিত হবে তার যথাসর্বস্ব। আর যদি কেউ নুহের ছেলে কিনআনের মত বলে যে, আমি কিন্তীতে
চড়ে কোন উচু পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেব’ তবুও সে রেহাই পাবে না। কারণ, এ তুফান হল ‘আকাশ-তুলতুল’, হিমালয় পর্বতও এ প্লাবনের নিচে হাবুডুবু খাবে। হে যুবক বন্ধু। কিন্তু তুমি পরিবেশ নোংরার ওজুহাতে নোংরায় গা ভাসিয়ে দিও না। তোমার অভিযোগ, দেশে ইসলামী শাসন কায়েম না হলে পরিবেশ ভালো হবে না। অবশ্য তোমার কথা নিশ্চয়ই ঠিক। পরন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ কথাও ঠিক যে, পরিবেশ ভালো না করতে পারলে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়। কারণ, পরিবেশের অধিকাংশ লোক এ আসমানী শাশ্বত শাসনকে মেনে নিতে না চাইলে তুমি কার জোরে কার উপরে তা জারী করবে? হে ভাই যুবক! তুমি তো এক রাজা। তোমার রাজত্বে তোমার এমন সার্বভৌমত্ব আছে যে, ঐ রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বাইরের কারো জন্য বৈধ নয়। তুমি পার তোমার রাজ্যকে সোনা দিয়ে মুড়তে। তোমার ঐ রাজ্য থেকে অবিচার, অনাচার, অন্যায়, অত্যাচার, অরাজকতা ও বিভিন্ন দুর্নীতি দূরীভূত করে শান্তিময় ইলাহী শাসন পরিপূর্ণরূপে কায়েম করতে তোমাকে কেউ বাধা প্রদান করতে পারে না।
তুমি পারবে নির্ভয়ে ঘুসবাজি, চাঁদাবাজি, মস্তানি, গুন্ডামি, ভন্ডামি প্রভৃতি অন্যায়ের দ্বার রুদ্ধ করতে। আর এ কাজে তোমার ভোট যাওয়ার ভয় থাকবে না এবং গদি হাত ছাড়া হওয়ারও আশঙ্কা থাকবে না। তুমি যদি তোমার গৃহরাজ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পার, তাহলে দেখবে, দেশের রাজাও তার রাজ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হচ্ছে। নচেৎ অন্ততঃপক্ষে তোমার রাজ্যকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিতে অবশ্যই আগ্রহী হচ্ছে। কারণ, এতটুকু না করলে তার গদি যে উল্টে গিয়ে নদীতে ভেসে যাবে। হ্যা, তুমি তোমার পরিবার ও গৃহরাজ্যের রাজা। সংসারের সকল ব্যক্তির দায়িত্ব আছে তোমার উপরে। মহানবী সঃ বলেন, “সতর্ক হও! তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বশীলতা প্রসঙ্গে কাল কিয়ামতে কৈফিয়ত দিতে হবে। পুরুষ হল তার সংসারের সকল ব্যক্তির জন্য দায়িত্বশীল। তাকে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে কিয়ামতে জবাবদিহি করতে হবে।---” (আহমাদ, বখারী মুসলিম আবুদাউদ, তিরমিযী সহীহুল জামে’ ৪৫৬৯ নং) সুতরাং পথে-ঘাটে ক্ষিপ্ত কুকুরদের ‘ঘেউ-ঘেউ ভেকানি যদি বন্ধ না-ও করতে পার, তাহলে এতটুকু নিশ্চয়ই পারবে যে, সেই কুকুরদলকে তুমি তোমার গৃহাঙ্গনে প্রবেশ না করতে দিয়ে তোমার পরিবেশকে অন্ততঃ শান্ত রাখবে।
বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষার জন্য যেমন তোমার শিশুদেরকে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়ে থাক, ঠিক তেমনিই এমন বিষাক্ত পরিবেশের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তাদেরকে প্রতিষেধক ঈমানী ও তরবিয়তী টিকা পূর্ব থেকেই দিয়ে রেখো।
হ্যাঁ, আর অপরের দোহাই দিয়ে এ কথা বলো না যে, কে আর মেনে চলছে?’ অর্থাৎ, সবাই যখন নোংরা, তখন আমিই বা ভালো কেন থাকি? লোকে মানে না, তাই আমিও মেনে চলি না। কিন্তু ভেবে দেখ, তুমি মানবে তোমার সৃষ্টিকর্তাকে, তোমার নিজের ভালাইর জন্য। তুমি কোন মানুষকে ভয় করে, কোন মানুষের খাতিরে ভালো হয়ে চলবে না -এটাই হবে তোমার নিজস্ব স্বকীয়তা ও সবলতার পরিচয়। দুনিয়ার সমস্ত লোক দোযখে গেলে তুমিও কি দোযখে যাবে? দুনিয়ার মানুষ অধিকাংশই কাফের বলে তুমিও কি (নাউযু বিল্লাহ) কুফরী করবে? তুমি কি চাও না মুক্তি? চাও না বেহেশ্ত?
হ্যা, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের সামনে এমন যুগ আসছে, যে যুগে আমাদেরকে অপসংস্কৃতির দুর্নিবার তুফানের সম্মুখীন হতে হবে। প্রগতিশীল অবাধ যৌনচারিতার বন্যায় ভেসে যাবে আমাদের নীতি নৈতিকতা। ভেঙ্গে যাবে সকল প্রকার সচ্চরিত্রতার বাঁধ। কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, ব্যভিচার ব্যাপক আকারে প্রকাশ পাবে, মহিলার সংখ্যা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশী হবে। একটি মাত্র পুরুষ পঞ্চাশ জন মহিলার দেখাশোনা করবে। (বুখারী মুসলিম, মিফাত ৫৪৩৭ নং বাদ্যযন্ত্র ব্যাপক আকারে দৃষ্ট ও ব্যবহৃত হবে, ব্যাপক আকারে প্রকাশ পাবে নর্তকীদলের মক্ষীরাণীরা। যেমন মদ্যপানকে হালাল মনে করা হবে। {সহীহুল জামে’ ৩৬৬৫ নং) অযোগ্য লোক নেতৃত্ব পাবে। (বুখারী ৬৪৯৬ নং)।
আর এ কথাও প্রায় সকলের বিদিত যে, তেমন উদ্ধৃঙ্খল পরিবেশ পাশ্চাত্যে শুরু হয়ে গেছে বহু দিন আগে থেকেই। যে পরিবেশে ব্যভিচার কোন নোংরা বা মন্দ কাজ নয়; বরং আইন-সম্মত বৈধ কাজ। অবৈধ যৌন-সম্পর্ক ও ফেসানী নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই তাদের। যত মাথা-ব্যথা হল, কুমারী ও কিশোরীদের গর্ভধারণ নিয়ে। সেখানে যৌনতা কোন গোপনীয় বিষয় নয়। সেখানে স্কুলে যৌনতা শিক্ষা দেওয়া হয়। কিশোরীদেরকে ব্যভিচার ও হারাম যৌন-সম্পর্কে জড়িত না হতে উপদেশ দেওয়া হয় না; বরং উপদেশ দেওয়া হয়, যাতে তারা এ সম্পর্কে গর্ভবতী না হয়ে পড়ে। তাই তো কোন চৌদ্দ বছরের মেয়ে যদি যৌনমিলন না করে থাকে, তাহলে তাকে নিয়ে তার সখী ও সহপাঠিনীরা ব্যঙ্গ করে। আমাদের দেশে যেমন পনের-বিশ বছরের কোন তরুণ কলকাতা না দেখে থাকলে বন্ধুরা বলে, এখনো কলকাতা দেখিসনি? তুই এখনো মায়ের পেটে আছি রে!’ অনুরূপ ঐ সব দেশে তের-চৌদ্দ। বছরের কিশোরীকে নিয়ে তার সখীরা আশ্চর্য হয়ে ও ঠাট্টা করে বলে, 'এখনো এ মজা। চাখিসনি? তুই এখনো মায়ের পেটে আছি রে। এর ফলে দুই দিনের ভিতরে সেই কুমারীও অকুমারী হয়ে যায়! এর ছোঁয়া আমাদের পরিবেশে যে লাগেনি তা নয়। বর্তমানে দিল্লী, বোম্বাই, কলকাতা, ঢাকা সহ বড় বড় শহরের পার্কগুলিতে এ যৌন-পরিবেশ বেশ পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতে পরিদৃষ্ট হয় সেই পাশ্চাত্য অসভ্যতার অকপট পূর্ণ অনুকরণ!