আসল ধনবত্তা হল হৃদয়ে। মন ধনী না হলে যতই ধন অর্জন হোক ধনী হওয়া সভব নয়। তাই লোহার সিন্দুক ভর্তি বা ব্যাংক ব্যালেন্স করার আগে মনের সিন্দুক ও ব্যাংক ভর্তি ও ব্যালেন্স করতে হবে। লোভাতুর মন থেকে অপ্রয়োজনীয় চাই-চাই, খাই-খাই’ দুর করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত ধনী হওয়া সম্ভব ও সহজ। নচেৎ হাজার হলেও অভাব ঘুচবে না। লক্ষলক্ষ সুখের সামগ্রী থাকা সত্ত্বেও সুখের মিষ্টি স্বাদ অনুভব করা যাবে না। ধনী হয়েও গরীবরূপে চিহ্নিত হবে লেবাসে-পোশাকে, আচারে-ব্যবহারে। অথচ “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে তার অনুগ্রহ ও নেয়ামত প্রদান করেন তখন তার প্রভাব ও চিহ্ন তার দেহের উপর দেখা যাক -এ কথা তিনি পছন্দ করেন। পক্ষান্তরে তিনি দীনতা প্রকাশ করাকে এবং দারিদ্রের ভান করাকে অপছন্দ করেন। আর ঘৃণা করেন, নাছোড়বান্দা হয়ে যাজ্ঞাকারীকে এবং ভালোবাসেন, লজ্জাশীল এমন বান্দাকে; যে যা করে না।” (বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, সহীহুল জামে' ১৭১১ নং)।
সুতরাং দীনতা প্রকাশের হীনতা বর্জন করে, সকল প্রকার আলস্য কাটিয়ে, গড়িমসি ও কুঁড়েমি ত্যাগ করে মাথা উচু করে বাঁচার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ কর। এমন উদ্যমের সাথে অদম্যভাবে কাজ করে যাও যাতে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, তুমি অকর্মণ্য নও এবং তোমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। হ্যাঁ, আর ভাগ্যের উপর ভরসা করে বসে যেও না। উট বেঁধে আল্লাহর উপর ভরসা করো, উট ছেড়ে রেখে নয়।' তকদীর তো আছেই; কিন্তু তদবীর করে যাওয়া তোমার কাজ। হাল ছেড়ে বসা যুবক ও পুরুষের কাজ নয়। পেঁচা ও কাকের ডাকে পিছপা হওয়া তওহীদবাদী মুসলিম সুপুরুষের গুণ নয়। কুকুর-বিড়ালের কান্নায় ভয় পেয়ে ঘর ঢােকাও তার জন্য শোভনীয় নয়। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে সমস্ত বাধা উল্লংঘন করা পুরুষের
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথার্থ ভরসা রাখ তাহলে তিনি তোমাদেরকে সেইরূপে রুযী দান করবেন, যেরূপে দান করে থাকেন পক্ষীকুলকে; তারা খালি পেটে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং ভরা পেটে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে।” (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ হাকেম, সহীহুল জামে” ৫২৫৪নং)।
উক্ত হাদীস শরীফে তিনটি কথার প্রতি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে। প্রথম কথা এই যে, রুযী সন্ধানের জন্য আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে হবে। দ্বিতীয় কথা এই যে, ঘর ছেড়ে বের হয়ে যেতে হবে। আর তৃতীয় কথা এই যে, সকালে বের হতে হবে। কারণ, প্রভাতকালের একটা বিশেষ মাহাত্ম আছে; এ সময়ের কাজে বিশেষ বৰ্কত আছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ) সুতরাং এ সময়ে যে ঘুমিয়ে থাকে সে সমূহ বৰ্কত থেকে বঞ্চিত হয়।
আর ঘর থেকে বের হওয়া এবং হর্কত ৰ্মে বৰ্কত হওয়ার কথা মহান আল্লাহ বলেন, “অতঃপর নামায শেষ হলে তোমরা বাইরে (মাঠে-হাটে) ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর। আর আল্লাহকে (কর্মক্ষেত্রে) অধিকরূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা জুমুআহঃ ১০ আয়াত)
তিনি রাত্রি সৃষ্টি করেছেন বিরতি ও আরাম নেওয়ার জন্য এবং দিন সৃষ্টি করেছেন রুযী সন্ধানের জন্য। রযী সন্ধান সহজসাধ্য করার লক্ষ্যেই পানির বকে জাহাজ ভাসিয়েছেন। কিন্তু মানুষ যদি হাত-পা নিয়ে ঘরেই বসে থাকে তাহলে তার অনুগ্রহ ও রুযী তো বাতাসের ‘ইথর’-এ ভেসে আসবে না। স্ত্রীর প্রেমের নামে তার শাড়ীর আঁচলে জড়িয়ে থাকলে, সন্তানের মায়ার বাঁধনে নিজেকে বেঁধে রাখলে অথবা পিতা-মাতার স্নেহ-মমতায় গৃহবন্দী হয়ে থাকলে এমন পুরুষ কাপুরুষ বৈ কি? অথচ এ কথা সত্য যে, কেউ তাকে বসে খেতে দেবে। আর বসে খেলে যাবেই বা কতদিন? গোলেমালে কতদিন চলতে পারে? চিরদিন তো চলতে পারে না। তা ছাড়া কথায় বলে, 'বসে খেলে কুলায় না, করে খেলে ফুরায় না। বসে খেলে রাজার ধনও ফুরিয়ে যায়। বুদ্ধি গুণে খা ভাত, আবার বুদ্ধি গুণেই হা-ভাত।
বাপের জমি-জায়গা দেখে হয়তো অনেকে ভাবে, এতেই আমার বেশ চলবে। অনেকে স্ত্রীর ধন দেখে শ্বশুর বাড়ির আশ্রিত হয়ে জীবন কাটানোর মাঝেই সুখ আছে বলে মনে করে। কিন্তু এদের মন যে হীন তা বলাই বাহুল্য। বাপ-মা যত ধনবানই হন না কেন, তাদের চেষ্টা থাকে তাদের ছেলে আরো বড় ধনী হোক। কিন্তু ছেলে তার বিপরীত হলেই মুশকিল। পিতা চান ছেলে স্বনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠুক। কিন্তু কিছু ছেলে আছে যারা তীর্থের কাক হতে চায়। পরনির্ভরশীল হয়ে, এমন কি স্ত্রীর কামাই খেয়ে দিন কাটাতে পরম তৃপ্তি ও সুখ অনুভব করে থাকে। এক বণিক তার ছেলেকে বাণিজ্যে পাঠাল। একদা সে বন্য পথে এক ক্ষুধার্ত শিয়াল দেখতে পেয়ে তার অলস মনে ভাবল, এই মিসকীন কোত্থেকে খেতে পায়? তৎক্ষণাৎ দেখল, অনতি দুরে এক বাঘ শিকার ধরে খাচ্ছে। বাঘের ভয়ে লুকিয়ে এক স্থান হতে তাদের কীর্তিকাণ্ড লক্ষ্য করতে লাগল।
পরিশেষে সে দেখল, বাঘ যা খাওয়ার তা খেয়ে চলে গেলে ঐ শিয়াল এসে পরিত্যক্ত অবশিষ্ট অংশ খেতে শুরু করল। কুঁড়ে মনে ভাবতে লাগল, এই তো আসল বুদ্ধি! বিনা মেহনতে বেশ খাসা খাবার শিয়াল খেতে পেল। এমনি করে বিনা পরিশ্রমে আমারও তো দিন চলে যাবে। বাপের তো অনেক আছে। এত কষ্ট স্বীকার করে লাভ কি? বাস, ভাবা মাত্রই বাড়ি ফিরে এল শ্রমবিমুখ ছেলে। এসে বাঘ ও শিয়ালের বৃত্তান্ত শুনালে আব্বা তাকে বুঝিয়ে বললেন, 'তুই আসলে ভুল বুঝেছি। অনুকরণ যদি করতেই হয় তাহলে শিয়ালের কেন? বাঘের অনুকরণ কর। শিয়ালের কর্মকাণ্ড খেয়াল করলি, অথচ বাঘের কর্মটা খেয়াল করলি না? আমি আশা করব যে, তুই পরান্ন বা উচ্ছিষ্টভোজী শিয়াল না হয়ে স্বনির্ভরশীল বাঘ হবি; তুই কামাই করে খাবি। অন্য কেউ শিয়ালের মত তোর এঁটো খাক- তাতে দোষ নেই।
যুবক বন্ধু আমার জীবনে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারলে তোমাকে কেউ ভালোবাসবে না, এমন কি তোমার প্রাণপ্রিয়া স্ত্রীও নয়। সংসারের দরজা দিয়ে অভাব ঢুকলে জানালা দিয়ে ভালোবাসা লুকিয়ে পালিয়ে যাবে। কাল তুমি যার কাছে রসের নাগর’ ও ‘যোগ্য স্বামী ছিলে, আজ পয়সা থেকে পকেট খালি হলে তার কাছেই অযোগ্য মিন্সে’ বলে পরিচিত হবে। শ্বশুর বাড়িতেও তোমার অযোগ্যতার চর্চা হবে। নি-কামায়ের জামাই দেখে সবাই নাক সিটকাবে। কাল তোমার ধনের জন্য যেখানে ধন্য-ধন্য নাম হচ্ছিল আজ সেখানে অন্নহারাছন্নছাড়া হয়ে তুমি ঘৃণাই হবে। কাল যারা তোমাকে আদর করে দোলা-ভাই' বলে ডাকত, আজ তারা তোমাকে ঘৃণাভরে অকর্মণ্য হওয়ার ফলে কুটে লাগা’ বা ‘অকেজো’ বলে আখ্যায়িত করবে। কাল যারা ‘আসুন-আসুন’ ‘বসুন-বসুন’ বলে আপ্যায়ন করত, আজ তারা ‘আয়’ বলেও ডাকতে চাইবে না। ঠিকই তো, যার ধান নেই, তার মান নেই। যার ভাত নেই, তার জাত নেই।' সিমেন্ট না থাকলে কি ইটে-ইটে জোড়া লাগে? আঠা না হলে কাগজে-কাগজে কোলাকুলি হয় না। তোমার অর্থ না থাকলে কে তোমাকে নিয়ে গলাগলি করবে ভাই?
একটি সত্য ঘটনা শোন৷ এক গরীব মা তার ছেলেকে বড় মেহনত করে অর্থ সংগ্রহ করে মানুষ করেছিল। বাপ মারা গেছে সে যখন কোলে ছিল তখন। ছেলে লেখাপড়া শিখে বড় ডিগ্রি
ও চাকুরী লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। মা চেয়েছিল এক দ্বীনদার যুবতীর সঙ্গে তার বিবাহ সেরে ফেলবে। কিন্তু ছেলে তার শিক্ষা অনুসারে সে কনেকে পছন্দ করেনি। নিজের পজিশন হিসাবে পছন্দ করেছিল তারই মত তথাকথিত 'আলোকপ্রাপ্তা’ এক শিক্ষিতা যুবতীকে। বিয়ের ঠিক ছ'মাস পরে এক রাত্রে সেই স্ত্রী স্বামীর নিকট কেঁদে অভিযোগ করল, আমি এ ঘরে তোমার মায়ের সঙ্গে বাস করতে পারব না। এর চাইতে বেশী সবর আর আমি করতে পারব না। তুমি ব্যবস্থা কর। তা না হলে আমি মায়ের ঘর চলে যাব।'
যেই বলা সেই ব্যবস্থা। মা’এর মত ধনকে ঘর ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে বাধ্য করল তার শিক্ষিত ছেলে-বউ! অশ্রুসিক্ত নয়নে মা ঘর থেকে যেত যেতে শুধু বলেছিল, 'আল্লাহ তোকে হেদায়াত করুক বেটা! আল্লাহ তোকে সুখী করুক।'
অবশ্য কিছুদিন পর ছেলের মাথা ঠান্ডা হলে এ কাজ তার বিবেকে বিরাট ভুল বলে ধরা পড়েছিল। কিন্তু মা কোথায় আছে তা খোজা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি৷ আর স্ত্রীও তার রূপলাবণ্য, ছলাকলা ও বিভিন্ন প্রভাব-প্রতিপত্তির সাহায্যে মায়ের সে সব কথা ভুলিয়ে তাকে বেশ প্রশান্ত করে নিজ বশে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। দিন কারো সমান যায় না। একদা অসুস্থ হল স্বামী। রোগ ছিল বড় মারাত্মক। মায়ের নিকট খবর পৌছলে মায়ের মন বাছাকে না দেখে থাকতে পারেনি৷ দেখতে এসেছিল হাসপাতালে। সঙ্গে মেম সাহেবা বিবিজান ছিল। রুমের দরজা প্রবেশ করতেই সে মায়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে কঠোর ভাষায় বলে উঠল, 'ফিরে যাও এখান থেকে। তোমার বেটা নেই। আমাদের কাছে কি চাও তুমি? আমরা তোমাকে চাই না।' অসুখের তাড়নায় ছেলের কথা বলার এবং স্ত্রীর কথার কোন প্রতিবাদ করারও ক্ষমতা ছিল।
নিরুপায় হয়েই মা লজ্জায় ও ঘৃণায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ফিরে গিয়েছিল। সুস্থ হলে বাড়ি ফেরার পর আবার অসুখ বেড়ে যায় স্বামীর। পুনরায় ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। লম্বা অনুপস্থিতির ফলে এবারে তার চাকুরীও চলে যায়। ঋণের বোঝা ইতিমধ্যে কোমর ভেঙ্গে ফেলেছে। বহু বন্ধু আর দেখা করতে আসে না। এখন সবাই যেন তাকে দুর বাসতে শুরু করে দিয়েছে। এক্ষণে স্ত্রীই বা কেন থাকবে? সিমেন্টে লোনা ধরলে ইটের দেওয়াল তো ভেঙ্গে পড়বেই। হঠাৎ একদিন সে স্বামীর উদ্দেশ্যে বলল, আমি আর এত কষ্টে তোমার কাছে থাকতে পারব না; আমাকে তালাক দাও! এখন তোমার চাকরী নেই, কোন পজিশন নেই। আমি মায়ের ঘর চললাম!' রোগাক্লিষ্ট স্বামী যে হতবাক ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য সে হয়তো এই শাস্তির যোগ্যও ছিল। সুদীর্ঘ নিদ্রাঘোর থেকে যেন আজই চৈতন্যপ্রাপ্ত হল।
পরবর্তীতে একটু সুস্থ হলে মায়ের খোঁজ করল। এতদিন মা লোকের সদকাহ-যাকাত খেয়ে কালাতিপাত করছিল। মায়ের সন্ধান পেয়ে অশ্রু বিনিময়ের মাধ্যমে এক অপরকে নতুন জীবনের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। আজ সে মায়ের মত মা’ পেয়ে বড় সুখী। (আ ইদুনা ইলাল্লাহ পুস্তিকা থেকে সংগৃহীত)
এ জন্যই লোকেরা বলে থাকে, বউ গেলে বউ পাবি রে, কিন্তু মা গেলে মা আর পাবি না।” অবশ্য মায়ের মত মা’ পাওয়া এক সৌভাগ্যের ব্যাপার।
‘এরি মাঝে কোথা হতে ভেসে এল মুক্তধারা মা আমার
সে ঝড়ের রাতে
কোলে তুলে নিল মোরে, শত শত চুমা দিল সিক্ত আঁখি-পাতে।
অবশ্য মা-বাপও যে শ্রমবিমুখ ছেলেকে বসিয়ে রেখে খাওয়াবে তা নয়। মা-বাপের যত স্নেহ-আদরের কথা বেশী ভাবা যায় শিশু অবস্থায়। কিন্তু বড় হলে তারাও ছেলের কামাই খেতে চায়। আর এটা তাদের অধিকার। সুতরাং কামাই দেখাতে না পারলে জামাই-এর যেমন কোন মান নেই শ্বশুর বাড়িতে, ঠিক তেমনই অর্থ ঢেলে দিতে না পারলে ছেলেরও। কোন স্নেহ নেই পিতামাতার কাছে। দুনিয়ার কানুনই এটা। সংসারের যত রকমের মায়াবন্ধন আছে সে সবের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হল এই টাকা। টাকা না হলে সব ফাকা। সমস্ত মায়ার বাধন ছিন্নভিন্ন হবে টাকা যদি না থাকে। এক বন্ধু আমাকে জানালেন, বাড়ির লোকে আমাকে খুব ভালোবাসে, খুব মানে।
কোন কাজ আমার পরামর্শ ছাড়া হয়ই না। বিভিন্ন মজলিসে আব্বা আমার খুব প্রশংসা করেন। কিছুদিন পর সেই বন্ধুর মুখেই শুনলাম তার বিপরীত। কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে, বন্ধুর টাকা জমা দেওয়ার বাজেট নাকি কম হয়ে গেছে তাই। আর এই অবস্থা। অধিকাংশ বন্ধুরই। কথায় বলে, 'টাকা তুমি যাচ্ছ কোথা? পিরীত যথা। আসবে কবে? বিচ্ছেদ যবে। বলা বাহুল্য, পিরীত ও বিচ্ছেদের মূল কারণ হল ঐ টাকা। সুতরাং তার উপরে যথার্থ নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পারলে জীবনে পরাজয় ও ব্যর্থতা সুনিশ্চিত। টাকা নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণ ও বিকর্ষণের মাঝে সুস্থিরভাবে নিজের ভারসাম্য বজায় রাখা সুপুরুষের কাজ। এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, যাতে সাপও মরে এবং লাঠিও না ভাঙ্গে। তাছাড়া প্রত্যেক অধিকারীকে স্ব-স্ব অধিকার যথাযথভাবে প্রদান করতে ইসলাম আমাদেরকে আদেশ করে। আর পরিশ্রম না করে ঘরে বসে থেকে সে সব অধিকার আদায় করা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। অতএব প্রিয় বন্ধু! প্রতিষ্ঠিত যে হতেই হবে, তা অবশ্যই বুঝতে পারছ। আশা করি যে, সামর্থ্যবান যুবক হয়ে কোনদিন তুমি তোমার বাড়া ভাতে ছাই পছন্দ করবে না এবং লাঞ্ছনাময় জীবন পেয়েও সন্তুষ্টচিত্তে তারই মাঝে আনন্দের আলো খুঁজবে না।
হ্যা, আর বিলাসপরায়ণ হতে চেষ্টা করো না। অর্থাৎ, 'ঘরে নেই ভাত, আর কেঁাচা তিন হাত করে ‘নবাব খাজা খা’ সেজে পেটে ভাত না থাকলেও মুখে পান রাখার অভ্যাস, বাজারে গেলেই চা পান, হোটেলে ভাত শক করে খাওয়ার অভ্যাস, অপ্রয়োজনীয় কাজে পয়সা অপচয় করার নেশা খবরদার রেখো না। নচেৎ বুঝতেই তো পারছ, ঠাস-ঠোসকে বিকায় ঘোড়া।
বাড়িতে বসে স্ত্রীর প্রেম-পাশে আবদ্ধ থেকে চাষ করলেই যদি দিন চলে যাবে ভাব, তাহলে মুরুব্বীদের একটি কথা অবশ্যই মনে রেখো,
খাটে খাটায় লাভের গাতি,
তার অর্ধেক মাথায় ছাতি।
আর ঘরে বসে পুছে বাত,
তার কপালে হা-ভাত।
এ সবের আগে মনে রাখবে মহানবীর মহাবাণী। তিনি বলেন, “যখন তোমরা ‘ঈনা’* ব্যবসা করবে এবং গরুর লেজ ধরে চাষ-ক্ষেত নিয়ে সন্তুষ্ট (ব্যস্ত-সমস্ত) থাকবে। আর জিহাদ ত্যাগ করে বসবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর এমন লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন, যা ততক্ষণ পর্যন্ত দুরীভূত করবেন না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা (যথার্থরূপে) তোমাদের দ্বীনে ফিরে এসেছ।” (আকাউদ ও ৪৬২৭ং, কইহাকী ৫/৩১৬ সিলসিলাহ সহীহহ ১১নং তিনি বলেন, “----- এক জাতি হবে যারা গরুর লেজ ধরে চাষবাস করবে এবং জিহাদে বিমুখতা প্রকাশ করবে, তারা হবে ধ্বংস।” (আবু দাউদ ৪৩০৬, মিশকাত ৫৪৩২ নং) একদা তিনি হাল-চাষের কিছু সাজ-সরঞ্জামের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, “যে জাতির ঘরে এই জিনিস প্রবেশ করবে, সেই জাতির ঘরে আল্লাহ লাঞ্ছনা প্রবিষ্ট করবেন।” (বুখারী, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০ নং)
উদ্দেশ্য এই নয় যে, চাষ করা খারাপ জিনিস বা চাষ করা লাঞ্ছনার কাজ। বরং উদ্দেশ্য হল, বাণিজ্য, শিল্প ইত্যাদি তার চাইতে ভালো কাজ। তাছাড়া চাষবাস যেন আল্লাহর পথে সংগ্রামে বাধা না দেয়। দুনিয়ার প্রতি মনকে অধিক আকৃষ্ট না করে তোলে। আর এ কথা বাস্তব ও অনস্বীকার্য যে, এ পৃথিবীতে চাষীরাই বেশী অবহেলিত এবং সাধারণতঃ অশিক্ষিতরাই এই পেশা অবলম্বন করে থাকে।
পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ বলেন, “বল, তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা-মাতা, তোমাদের। সন্তান-সন্ততি, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য; যাতে তোমরা মন্দার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান; যা তোমরা ভালবাস - এ সব যদি আল্লাহ, তার রসুল এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত তোমরা অপেক্ষা কর। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা তাওবাহ ২৪ আয়াত)