আমরা সলফদের মর্যাদা এবং আমলে ও দাওয়াতে তাদের অনুসরণ। করে সালাফী হওয়ার গুরুত্ব সম্বন্ধে ইতিপূর্বে জ্ঞাত হয়েছি। তবুও সংক্ষেপে আরো একবার স্মরণ করে নেওয়া উত্তম বলে মনে হয়। তাই আবারও পাঠকের প্রণিধান আকর্ষণ করছি।
১। সরল মনে তাদের অনুসরণকারিদের প্রশংসা করেছেন মহান আল্লাহ। (তাওবাহঃ ১০০)।
২। তাঁরা ছিলেন সত্যবাদী, সত্যাশ্রয়ী। আর মহান আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকতে বলেছেন। (ঐঃ ১১৯)
৩। মহান আল্লাহ তাদেরকে মধ্যপন্থী এবং মানুষের জন্য সাক্ষী বানিয়েছেন। (বাকারাহঃ ১৪৩)।
৪। মহান আল্লাহ তাদেরকে মনোনীত ও নির্বাচিত করে তার রসূল (সা.)-এর সহচর বানিয়েছেন। যাতে রসূল (সা.) তাদের উপর সাক্ষী হন এবং তারাও মানুষের উপর সাক্ষী হন। (হাজ্জঃ ৭৮)
৫। মহান আল্লাহ তাদের ঈমানকে হক ও বাতিল এবং সুপথ প্রাপ্তি ও বিরুদ্ধাচরণের নিক্তি বানিয়েছেন। (বাক্বারাহঃ ১৩৬-১৩৭)
৬। তাঁদের পথ ছেড়ে যারা অন্য পথ অবলম্বন করবে, তারা ভ্রষ্ট। মহান আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের হুমকি দিয়েছেন। (নিসাঃ ১১৫)
বুঝা গেল, তাদের পথ অবলম্বন করা ওয়াজেব।
৭। তারা সরাসরি রাসুলুল্লাহ -এর সাহচর্যে থেকে কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞানলাভে ধন্য হয়েছে। আর তাদের পরবর্তীরা শিখেছে, তাদের নিকট থেকে। সুতরাং অনুসরণে তারাই প্রাধান্য পান। (জুমআহ
৮। তারাই সুপথপ্রাপ্ত। যেহেতু মহান আল্লাহ তাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তা তাদের হৃদয়ে সুশোভিত করেছেন। আর কুফরী (অবিশ্বাস), পাপাচার ও অবাধ্যতাকে তাদের নিকট অপ্রিয় করেছেন। আর বলেছেন, তাঁরাই সৎপথ অবলম্বনকারী। (হুজুরাতঃ ৭)।
৯। তারাই সুপথপ্রাপ্ত, তারাই সেই সরল পথের নিয়ামতপ্রাপ্ত পথিক, যে পথ আম্বিয়া, সিদ্দীকীন, শহীদান ও সালিহীনের পথ। (ফাতিহা, নিসাঃ ৬৯)
১০। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষ্যমতে তার পর তাঁদের যুগ সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। (বুখারী ২৬৫১, মুসলিম ৬৬৩৮নং)
১১। তাদের ব্যাপারে মহানবী ঐ বলেছেন,
النجومُ أمنَةٌ للسماءِ ، فإذا ذَهَبَتِ النجومُ أتَى السماءَ ما توعَدُ ، وأنا أمنَةٌ لأصحابي ، فإذا ذهبْتُ أتى أصحابِي ما يوعدونَ ، وأصحابي أمنَةٌ لأمَّتِي ، فإذا ذهبَتْ أصحابي أتى أمتي ما يوعدونَ
“নক্ষত্রমন্ডলী আকাশের জন্য নিরাপত্তা। নক্ষত্রমন্ডলী ধংস হলে আকাশে তার প্রতিশ্রুত জিনিস এসে যাবে। আর আমি আমার সাহাবার জন্য নিরাপত্তা। আমি চলে গেলে আমার সাহাবার কাছে প্রতিশ্রুত জিনিস এসে যাবে। অনুরূপ আমার সাহাবাবর্গ আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তা। সুতরাং আমার সাহাবাবৰ্গ বিদায় নিলে। আমার উম্মতের মাঝে প্রতিশ্রুত জিনিস এসে পড়বে।” (আহমাদ ১৯৫৬৬, মুসলিম ৬৬২৯নং)
১২। মহানবী (সা.) মতভেদের সময় তার ও তার সাহাবা তথা খুলাফায়ে রাশেদীনের পথ অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ ৪৬০৯, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২নং)
১৩। মহানবী(সা.) সাক্ষ্য দিয়েছেন, প্রত্যেক নবীর সহযোগী ও সঙ্গী। হয়। (মুসলিম ১৮৮নং) আর তারা তার সহচর ও সহযোগী, যারা তাঁর সুন্নতের উপর আমল করতেন এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করতেন।
১৪। মহানবী(সা.) বলেছেন, তাঁর উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে এবং তার ও তার আদর্শ গ্রহণকারী দলকে পরিত্রাণপ্রাপ্ত একমাত্র দল বলে ঘোষণা করেছেন। (সুনান আরবাআহ, মিশকাত ১৭ ১-১৭২, সিলসিলাহ সহীহাহ ২০৩, ১৪৯২নং)।
১৫। একদা রাসুলুল্লাহ সাহাবাদের মাঝে বললেন, “অদুর ভবিষ্যতে ফিতনা হবে।” তারা বললেন, তাহলে আমাদের কী হবে হে আল্লাহর রসূল! আমরা কী করব?' তিনি বললেন, (ترجعون الى امركم الاول) “তোমরা তোমাদের প্রাথমিক বিষয়ের দিকে ফিরে যাবে।” (ত্বাবারানীর কাবীর ৩২৩৩নং, ত্বহাবীর শারহু মুশকিলিল আষার ৩/১৪০, সিঃ সহীহাহ ৩১৬৫নং)
১৬। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, 'আল্লাহ বান্দাগণের অন্তরসমূহে দৃষ্টিপাত করলেন, তাতে তিনি মুহাম্মাদের অন্তরকে বান্দাগণের অন্তরসমূহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পেলেন। সুতরাং তিনি তাকে নিজের জন্য (বন্ধু) নির্বাচন করলেন এবং তার দূত হিসাবে প্রেরণ করলেন। অতঃপর পুনরায় তিনি মুহাম্মাদ ছাড়া অন্য সকল বান্দাগণের অন্তরসমুহে দৃষ্টিপাত করলেন, তাতে তিনি মুহাম্মাদের সাহাবাদের অন্তরসমূহকে বান্দাগণের অন্তরসমূহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পেলেন। সুতরাং তিনি তাদেরকে তার নিজ নবীর মন্ত্রী বানালেন, যারা তার দ্বীনের জন্য সংগ্রাম করবেন। সুতরাং মুসলিম (সাহাবাগণ। যেটাকে ভালো মনে করেন, সেটা আল্লাহর নিকট ভালো। আর তারা। যেটা মন্দ মনে করেন, সেটা আল্লাহর নিকট মন্দ।' (আহমাদ ৩৬০০, শারহুস সুন্নাহ বাগাবী ১/২১৪-২১৫)।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) আরো বলেন, 'সাবধান! তোমাদের কেউ যেন নিজ দ্বীনের ব্যাপারে কোন ব্যক্তির এমন অন্ধ অনুকরণ না করে যে, সে ঈমানের কাজ করলে সেও করবে, নচেৎ সে কুফরী করলে সেও করবে। বরং যদি তোমাদের অন্ধ অনুকরণ করা জরুরীই হয়, তাহলে তোমরা পরলোকগত মানুষের (নবী ও সাহাবাদের) অনুকরণ কর। কারণ জীবিত ব্যক্তির ব্যাপারে ফিতনার নিরাপত্তা নেই। (লালকাঈ ১/৯৩, ১৩০নং, মাজমাউয যাওয়াইদ, হাইমী ১/১৮০)।
তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি কাউকে আদর্শ বানাতে চায়, সে যেন রাসুলুল্লাহ -এর সাহাবাবৃন্দকে নিজের আদর্শ বানায়। কারণ তারা অন্তরের দিক থেকে এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ। ইলমে সবচেয়ে সুগভীর ও ‘তাকাল্লফ (কষ্টকল্পনায়) অতি কম। তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদেরকে আল্লাহ তাঁর নবীর সাহচর্যের জন্য মনোনীত করেছিলেন। তোমরা তাদের অধিকার স্বীকার কর। কারণ তাঁরা ছিলেন সরল ও সঠিক পথের পথিক।' (রাযীন, মিশকাত ১৯৩নং, আল্লামা আলবানীর মতে এটি যয়ীফ, কিন্তু এর অর্থ সহীহ)
তিনি আরো বলেছেন, 'তোমরা অনুসরণ কর, (বিদআত) উদ্ভাবন করো না। তোমাদের জন্য যথেষ্ট। তোমরা প্রাচীন বিষয়কে অবলম্বন। কর।' (দারেমী ১/৬৯ প্রমুখ)
১৭। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কাউকে আদর্শ বানাতে চায়, সে যেন মৃতদেরকে নিজের আদর্শ বানায়। তারা হলেন মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাহাবা। তারা এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ। হৃদয়ে সবচেয়ে সৎশীল, ইলমে সবচেয়ে সুগভীর ও ‘তাকাল্লফ’ (কষ্টকল্পনায়) অতি কম। তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদেরকে আল্লাহ তার নবীর সাহচর্যের। জন্য এবং তার দ্বীন বহনের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের চরিত্র ও নিয়ম-নীতিতে সাদৃশ্য অবলম্বন কর। যেহেতু তারা মুহাম্মাদ এক-এর সহচর। তারা ছিলেন সরল সুপথের উপর। (হিয়াতুল আউলিয়া ১/৩০৫-৩০৬)
১৮। হুযাইফা বিন ইয়ামান (রাঃ) বলেছেন, এমন ইবাদত, যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবাগণ করেননি, তা তোমরা করো না।' (মাজমুউ ফাতাওয়াল আলবানী ১/৮৯)।
১৯। ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'যে জিনিস প্রাথমিক পর্যায়ের উম্মাহকে সৎশীল (বা সুযোগ্য) বানিয়েছে, সে জিনিস ছাড়া এই শেষ পর্যায়ের উম্মাহকে সৎশীল (বা সুযোগ্য) বানাতে পারে না। (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ ১/২৪১ প্রমুখ) পর্যায়ের উম্মাহকে সৎশীল (বা সুযোগ্য) বানিয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহকে সৎশীল (বা সুযোগ্য) বানাবে কিতাব ও সুন্নাহ; যদি তা সলফদের বুঝ অনুযায়ী হয়। ২০। ইবনুল কাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'সালাফী আষার ও সাহাবীদের দেওয়া ফতোয়া অনুযায়ী ফতোয়া দেওয়া বৈধ। বরং পরবর্তীদের রায় ও ফতোয়া গ্রহণ করার চাইতে তাদের ফতোয়া গ্রহণ করা অধিক সঙ্গত।' (জাওয়াযুল ফাতওয়া বিল-আফরিস সালাফিয়্যাহ ১/২২ ১)
আমাদের প্রতিপালক তাদের প্রশংসা করেছেন এবং রসূল কি তাদের তারীফ করেছেন, এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং জ্ঞানীদের কাছে কোন সন্দেহ নেই যে, সালাফী তরীকাই অবলম্বন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক।