প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “যখন তুমি কিছু চাইবে তখন আল্লাহরই নিকট চাও। এবং যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহরই নিকট কর।” (তিরমিযী এবং তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)
১। ইমাম নববী ও হাইতামী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় যা বলেন তার সারাংশ এই যে, যখন তুমি তোমার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কোন বিষয়ে সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহরই নিকট চাও। বিশেষ করে সেই সকল বিষয়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য-ভিক্ষা কর, যে সব বিষয়ে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সাহায্য করতে সক্ষম নয়। যেমন, রোগ-নিরাময়, রুজী ও হেদায়াত প্রার্থনা প্রভৃতি; যে সব দান কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ
অর্থাৎ, আর যদি আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দান করেন, তবে তিনি ব্যতীত আর কেউ তার মোচনকারী নেই। (সূরা আনআম ১৭ আয়াত)
২। যে ব্যক্তি হুজ্জত ও দলীল চায় তার জন্য কুরআন যথেষ্ট, যে ব্যক্তি রক্ষা ও সাহায্যকারী চায় তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, যে ব্যক্তি উপদেষ্টা চায় তার জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তির জন্য এ সবের কিছুই যথেষ্ট নয়, তার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন, (أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ) অর্থাৎ-আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? (সূরা যুমার ৩৬ আয়াত)
৩। শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী আল-ফাতহুর রাব্বানী’তে বলেন, “আল্লাহর নিকটেই প্রার্থনা কর এবং তিনি ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করো
ও কেবল আল্লাহর নিকটেই সাহায্য চাও এবং তিনি ব্যতীত আর কারো নিকট সাহায্য চেয়ো না। ধিক তোমাকে! তুমি কোন মুখ নিয়ে কাল তার সহিত সাক্ষাৎ করবে, অথচ দুনিয়াতে তুমি তার বিরুদ্ধে কলহে লিপ্ত রয়েছ, তার থেকে বিমুখ রয়েছ, তার সৃষ্টির মুখাপেক্ষী হচ্ছ, তার সহিত তাদেরকে শরীক (শির্ক) করছ, তাদের নিকট নিজের প্রয়োজন ভিক্ষা করছ এবং সংকটাপন্ন কর্মসমুহে তাদের উপর ভরসা করছ?! তোমাদের এবং আল্লাহর মাঝে সমস্ত মাধ্যম ও অসীলা তুলে ফেল; কারণ ওদের সহিত তোমাদের অবস্থান (বা ওদের পিছন ধরে থাকা) মুখতা। একমাত্র ‘হক’ (সত্য) আল্লাহ আযযা অজাল্ল ব্যতীত আর কারো জন্য কোন রাজত্ব, কোন আধিপত্য, কোন স্বনির্ভরতা, কোন সম্মান নেই। সৃষ্টিকে ছেড়ে স্রষ্টা হকে’র দিকে হয়ে যাও। (অর্থাৎ, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্য হতে কাউকে মাধ্যম না করেই সরাসরি তাকে ডেকে তার দিকে হয়ে যাও।)”
৪। বিধিসম্মত সাহায্য ভিক্ষা এই যে, নিজের বিপদ ও সংকট দূর করার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া। আর অবৈধ শির্কী সাহায্য ভিক্ষা এই যে, বিপদ দূর করার জন্য গায়রুল্লাহ; যেমন, আম্বিয়া, মৃত অথবা জীবিত আওলিয়ার-নিকট সাহায্য চাওয়া। যেহেতু তারা ইষ্ট বা অনিষ্ট কিছুরই মালিক নন এবং তারা প্রার্থনা শুনতেও পান না। পক্ষান্তরে যদি শুনতেও পান তথাপিও তাঁরা আমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করতে পারেন না। যেমন এ বিষয়ে কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। (সূরা ফাত্রির ১৪ আয়াত দ্রঃ)
পরন্তু উপস্থিত জীবিত ব্যক্তিবর্গের নিকট তাদের সাধ্যভূক্ত কর্মে; যেমন, মসজিদ নির্মাণ, আর্থিক অনটন প্রভৃতিতে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ
অর্থাৎ, তোমরা সৎ ও আল্লাহ-ভীতির কর্মে একে অন্যের সহায়তা কর। (সূরা মায়েদাহ ২ আয়াত)
আর মহানবী (সা.) বলেন, “আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভায়ের সাহায্যে থাকে।” (মুসলিম)
উপস্থিত জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার আরো দৃষ্টান্ত; যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِي مِن شِيعَتِهِ عَلَى الَّذِي مِنْ عَدُوِّهِ
অর্থাৎ, মুসার দলের লোকটি ওর শত্ৰুদলের লোকটির বিরুদ্ধে তার (মুসার) সাহায্য প্রার্থনা করল। (সূরা কাসাস ১৫ আয়াত)
ইয়াজুজ ও মাজুজের ক্ষতি হতে বাঁচতে প্রাচীর নির্মাণকল্পে লোকদের নিকট যুল ক্বারনাইনের শ্রম চাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ
অর্থাৎ, (যুল ক্বারনাইন বলল,) ---সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য কর।' (সূরা কাহফ ৯৫ আয়াত)।