আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেছেন,
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক থাকতেই হবে যারা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করবে। তারাই সত্যিকারের সফল।[১]
আরও বলা হয়েছে,
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
‘তোমরাই উত্তম উম্মাত, মানুষের মধ্য থেকে বের করা হয়েছে, তোমাদের কাজ হচ্ছে) তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজের নিষেধ করবে এবং সেই সাথে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখবে।[২]
সূরা আত তাওবায় বলা হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ
‘অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের জান মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।”[৩]
সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচ্ছন্ন ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে এ কাজ অপরিহার্য। বানী ইসরাঈল সম্প্রদায় এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার কারণে আল্লাহ্ তাদের নিন্দা করেছেন। বলা হয়েছে,
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ * كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের প্রতি দাউদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখ দিয়ে অভিশাপ করা হয়েছে। কারণ তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং খুব বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছিল। তারা একে অপরকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করছিল না। যা তারা অবলম্বন করেছিল তা ছিলো অত্যন্ত খারাপ কর্মনীতি।[৪]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ
‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় কাজ দেখে সে যেন হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগ করে) বন্ধ করে দেয়। যদি না পারে তাহলে যেন মুখ (এর কথা দিয়ে জনমত গঠন করে) বন্ধ করে দেয়। যদি তাও না পারে তবে মনে মনে ঘৃণা করবে। এটি হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে নিচের স্তর।[৫]
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন,
مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنْ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ
‘আমার আগে কোনো জাতির কাছে যে নবীকেই পাঠানো হয়েছে, তার সহযোগিতার জন্য তাঁর উম্মাতের মধ্য থেকে একদল সাহায্যকারী সাথী থাকতো। তারা তার সুন্নাত (নিয়মনীতি)-কে আঁকড়ে ধরতো এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলতো। এদের পর এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটলো, যারা বলতো ঠিকই কিন্তু তারা তা করতো না। এমন কাজ করতে যার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়নি। তাই এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে যে হাত দিয়ে (অর্থাৎ শক্তি প্রয়োগ করে) জিহাদ (সংগ্রাম) করবে সে মুমিন। যে মুখ দিয়ে এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে সে মুমিন। যে অন্তর দিয়ে এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে সেও মুমিন। এরপর একটি সরিষা দানা পরিমাণ ঈমানের স্তরও আর নেই।[৬]
নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রী যয়নাব (রাঃ) বলেছেন, একদিন রাসূল (সা.) ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠলেন। মলিন মুখ। তিনবার বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তারপর বললেন- আরবদের জন্য ধ্বংস, দ্রুত মন্দ তাদের গ্রাস করতে আসছে। ইয়াজুজ মাজুজের দেয়াল আজ এতটুকু ছিদ্র করে ফেলেছে। একথা বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলী ও মধ্যমা গোল করে ধরে দেখালেন। একথা শুনে যয়নাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে এত সৎ লোক থাকার পরও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বললেন- হ্যাঁ, যখন দুর্নীতির বিস্তৃতি ঘটবে।[৭]
[২]. সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০।
[৩]. সূরা আত তাওবা, আয়াত : ১১১।
[৪]. সূরা আল মায়িদা, আয়াত : ৭৮-৭৯।
[৫]. সহীহ মুসলিম।
[৬]. সহীহ মুসলিম, ইবন মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত।
[৭]. সহীহ্ আল বুখারী; সহীহ মুসলিম।