কেউ কারও কাছে কিছু আমানত বা গচ্ছিত রাখলে তা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا
আল্লাহ্ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, আমানাতকে তার প্রাপকের কাছে ফিরিয়ে দিতে।[১]
অন্যত্র বলা হয়েছে,
فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُم بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ
যদি একে অন্যকে বিশ্বাস করে তবে যাকে বিশ্বাস করা হয় তার উচিত অন্যের প্রাপ্য পরিশোধ করা।[২]
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন,
أَدِّ الْأَمَانَةَ إِلَى مَنْ ائْتَمَنَكَ ، وَلا تَخُنْ مَنْ خَانَكَ
‘তোমার কাছে কেউ কিছু আমানাত রাখলে সেই আমানাত তার কাছে ফিরিয়ে দাও, আর কেউ যদি তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে তুমি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।[৩]
সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বলা হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন,
ثلاث من كن فيه فَهُوَ مُنَافِقٌ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
‘তিনটি অভ্যাস যার মধ্যে থাকবে সে মুনাফিক। যদি রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম মনে করে তবু। অভ্যাস তিনটি হচ্ছে- কথা বললে মিথ্যা বলে, কাউকে ওয়াদা দিলে তা পূর্ণ করে না এবং তার কাছে কিছু আমানাত রাখা হলে খিয়ানত করে বসে।[৪]
[২]. সূরা আল বাকারা, আয়াত : ২৮৩।
আমানাত একটি ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। এর সংরক্ষণ ও প্রাপকের কাছে তা প্রত্যর্পণ করা অন্যতম ঈমানী দায়িত্ব। ইমাম কুরতুবী বলেছেন- “আমানাত অনেক প্রকার তার মধ্যে প্রধান কয়েক প্রকার হচ্ছে- গচ্ছিত বস্তু, হারানো বস্তু প্রাপ্তি, রেহেন, ধার ইত্যাদি। ইমাম নববী বলেছেন- 'আমানতের সাধারণ অর্থ হচ্ছে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। যেমন আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে তার বান্দা হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ্ ওয়াদা নিয়েছেন। আল্লাহ্ নিজেই বলেছেন
إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ
‘আমি এই আমানাতকে আসমান, জমিন ও পাহাড়-পর্বতের কাছে রাখতে চাইলাম, তারা গ্রহণ করতে রাজী হলো না, ভয় পেয়ে গেল কিন্তু মানুষ তা নিজের কাঁধে তুলে নিল। (সূরা আল আহযাব : ৭২)
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে- 'আমানাত বলা হয় আনুগত্য, ইবাদাত এবং নির্জযোগ্যতাকে। বারা ইবনু আযিব, ইবনু মাসউদ এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) প্রমুখের মতে- প্রত্যেকটি জিনিসের সাথেই আমানাত শব্দটি জড়িয়ে আছে। যেমন- ওযু, সালাত, যাকাত, রোযা, বিচার-আচার, ওজন-পরিমাপ ইত্যাদি সহ চোখ, কান, জিহ্বা, হাত, পা এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুষ্ঠু ব্যবহারও আমানতের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করো। আর নিজেদের আমানতের ব্যাপারেও খিয়ানত করো না।' (সূরা আনফাল :২৭) -লেখক।
[৩]. সহীহ আল বুখারী; সহীহ মুসলিম।
[৪]. সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য' শিরোনাম।