শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা এবং বিকাশ ঈমানের অন্যতম শাখা। লোকদের শিক্ষা দান তথা শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেন,
لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ
‘(আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা) লোকদের মধ্যে প্রচার করতে হবে, তা গোপন করে রাখা যাবে না।[১]
অন্য জায়গায় বলা হয়েছে,
وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ
তারা নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে লোকদের সতর্ক করুক।”[২]
আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস যা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম স্ব-স্ব গ্রন্থে সংকলন করেছেন, সেখানে বলা হয়েছে নবী করীম (সা.) বিদায় হজ্জের দিন লোকদের লক্ষ্য করে বলেছেন,
ألا ليبلغ الشاهد منكم الغائب ، فلعل بعض من يبلغه يكون أوعى له من بعض من سمع
সাবধান! তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগণ অবশ্যই অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে আমার এ কথা পৌছে দেবে। এখানকার উপস্থিত ব্যক্তিগণ যাদের কাছে আমার কথা পৌছাবে, তারা হয়ত উপস্থিত শ্রোতাদের চেয়ে অধিকতর সংরক্ষণকারী হবে।”[৩]
সুনানু আবী দাউদে আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন
من سئل عن علم فكتمه الجمه الله بلجام من النار يوم القيامة
‘কাউকে যদি ইলম সম্পর্কিত কিছু জিজ্ঞেস করা হয় এবং সে জানা সত্ত্বেও তা গোপন রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে আগুনের লাগাম পরাবেন।'[৪]
উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কথাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সে বেশীর ভাগ সময় ভুল করে। আর যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া কোনো আমল করে (অর্থাৎ না জেনে কাজ করে) তা কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বয়ে আনে।'[৫]
আল হারিছ আল মুহাসিবী (র) বলেছেন, ‘দীনি ইলম মানুষের ভেতর আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে, আল্লাহ্ নির্ভরতা মানুষের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয় এবং আল্লাহর পরিচয় (মা'আরিফাত) তাকে দায়িত্বশীল বানায়।
ইবনু সা'দ (র) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি হাদীসের উপর আমল করবে তাকে আল্লাহ্ অন্তদৃষ্টি দান করবেন, আর যে তার অন্তদৃষ্টির আলোকে কাজ করবে সে-ই সত্য পথের সন্ধান পাবে।'
মালিক ইবনু দীনার (র) বলেছেন, 'বান্দা যখন ইলম শিখে আমলের জন্য তখন সেই ইলম তাকে মার্জিত করে, আর যদি ইলম শিখে আমল না করে তাহলে সেই ইলম তাকে অহংকারী বানিয়ে দেয়।
মারূফ আল কারখী (র) বলেছেন, আল্লাহ্ যখন তার কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তার জন্য আমল (কাজ)-এর দরজা খুলে দেন এবং অভিযোগের দরজা বন্ধ করে দেন। আর আল্লাহ্ যখন তার কোনো বান্দার সর্বনাশ চান তখন আমলের দরজা বন্ধ করে দেন এবং অভিযোগের দরজা খুলে দেন।
একবার হাসান বসরী (র)-এর সামনে দিয়ে এক ব্যক্তি যাচ্ছিলেন, বলা হলো, ইনি ফকীহ্ (অর্থাৎ ইসলামী আইন বিশারদ), তিনি বললেন, তুমি কি জান ফকীহ্ কাকে বলে? ফকীহ্ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি দীনি বিষয়ে বিশেষ প্রজ্ঞার অধিকারী এবং দুনিয়ার প্রতি নির্লোভ। আল্লাহর ইবাদাতে রাত কাটিয়ে দেন।'
মালিক ইবনু দীনার (র) বলেছেন, আমি তাওরাতে পড়েছি- ‘যে আলিম তার ইলম অনুযায়ী আমল করে না, তার কথার কোনো প্রভাব মানুষের উপর পড়ে না। তার কথা মূলত এমন, যেন পাথরের উপর বর্ষিত বৃষ্টি।
আবু বকর ইবনু আবী দাউদ বলেছেন,
পানি পানে পরিতৃপ্ত হয় মন
কিন্তু পানিই যদি হয়ে পড়ে গলগ্রহ
তাহলে সেই পানি পানের
থাকে কি কারও আগ্রহ॥
আবু ওসমান (র) বলেছেন,
তাকওয়া নেই নিজের মাঝে, অথচ এ কেমন ধারা
অন্যকে বলবে মুত্তাকী হতে, নিজেই যে আত্মহারা।
যে ডাক্তার নিজেই অসুস্থ
তার কাছে যায় না রোগী হলেও বিপদগ্রস্ত॥
আল্লাহ যেন আমাদেরকে ইলম অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দেন এবং লোভ-লালসা, উচ্চাকাক্ষা ও বেপরওয়া হওয়া থেকে রক্ষা করেন।
[২]. সূরা আত তাওবা, আয়াত : ১২২।
[৩]. এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ। সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, বিদায় হাজ্জ শিরোনাম। সহীহ মুসলিম, কাসাস অধ্যায়, (হাদীস-৪২৩৬)।
[৪]. আবু দাউদ, ইলম অধ্যায়, জামি আত-তিরমিযী, ইমাম তিরমিযী একে হাসান সহীহ বলেছেন।
[৫]. ইমাম বাইহাকী তার নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেছেন।