বিজাতির অনুকরণ করেও মুসলিম নিজের পরিবেশে বিদআত সৃষ্টি করে থাকে। অমুসলিমের কর্মকে পছন্দ করে তা নিজের করণীয় ধর্ম ভেবে বসে। যেমন সাহাবী আবু ওয়াকেদ আল-লাইষী বলেন, রসূল (সা.) এর সহিত আমরা হুনাইনের পথে বের হলাম। তখন আমরা সদ্য নও মুসলিম ছিলাম। মুশরিকদের একটি কুল গাছ ছিল; যার নিকটে ওরা ধ্যানমগ্ন হত এবং (বর্কতের আশায়) তাদের অস্ত্র-শস্ত্রকে তাতে ঝুলিয়ে রাখত; যাকে যা-তে আনওয়াত্ব’ বলা হত। সুতরাং একদা আমরা এক কুল গাছের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। (তা দেখে) আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের জন্য একটি ‘যা-তে আনওয়াত্ব’ করে দিন যেমন ওদের রয়েছ। (তা শুনে) তিনি বললেন, 'আল্লাহু আকবার! এটাই তো পথরাজি! যার হাতে আমার জীবন আছে তাঁর কসম! তোমরা সেই কথাই বললে যে কথা বানী ইস্রাঈল মুসাকে বলেছিল, আমাদের জন্য এক দেবতা গড়ে দিন যেমন ওদের অনেক দেবতা রয়েছে!’ মুসা বলেছিলেন, 'তোমরা মূর্খ জাতি। অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী (জাতির) পথ অনুসরণ করবে।” (তিরমিযী ২ ১৮০, মুসনাদ আহমাদ ৫/২ ১৮ নং)
অতএব উক্ত হাদীসে স্পষ্ট হয় যে, কাফেরদের অনুকরণই বানী ইসরাঈল এবং কিছু নও মুসলিম সহাবীকে এমন নিকৃষ্ট আবেদনে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর সে আবেদন ছিল এমন মাবুদ গড়া বা নির্দিষ্ট করা যেমন কাফেরদের ছিল; যার নিকট তারা ধ্যানমগ্ন হত, বর্কতের আশায় তার উপর অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত এবং আল্লাহকে ছেড়ে তার আরাধনা করত।
বস্তুতঃ এই পরিস্থিতিই বর্তমান কালেও বিরাজমান। যেহেতু অধিকাংশ মুসলিম দলই কাফেরদের অনুকরণ করে বিদআত, শির্ক, কুসংস্কার যেমন; দুর্গাপূজা, কবরের উপর পুষ্পার্ঘ-দান, জন্মদিন, বার্থ ডে, নবী দিবস পালন, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট খাদ্য ভক্ষণ, ইসলামী কোন ঐতিহাসিক দিনকে কেন্দ্র করে উৎসব পালন, স্মারক দিবস উদযাপন, স্মারক মূর্তি প্রতিষ্ঠাকরণ, শোক দিবস পালন, জানাযার বিভিন্ন বিদআত রচনা, সমাধির উপর মাযার নির্মাণ প্রভৃতি কর্ম ধর্ম ও নাজাতের অসীলা ভেবে আবিষ্কার করেছে; যার কোন দলীল আল্লাহ অবতীর্ণ করেন নি।
আল্লাহর রসুল (সা.) সত্যই বলেছেন, “অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত এবং হাত হাত পরিমাণ (সম্পূর্ণরূপে)। এমনকি তারা যদি সান্ডার (গোসাপ জাতীয় একপ্রকার হালাল জন্তুর) গর্তে প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাদের অনুসরণ করবে (এবং তাদের কেউ যদি রাস্তার উপর (প্রকাশ্যে) স্ত্রী-সংগম করে তবে তোমরাও তা করবে)!” সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহর রসূল ইয়াহুদ ও খ্রীষ্টানরা?” তিনি বললেন “তবে আবার কারা?” (বুখারী, মুসলিম ও হাকেম)
আর সাহাবী হুযাইফাহ বিন আল-ইয়ামানও সঠিকই বলেছেন, 'তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথের অনুসরণ করবে জুতার পরিমাপের মত (পুরাপুরি খাপে-খাপে), তোমরা পথ ভুল করবে না এবং তারাও তোমাদেরকে (সঙ্গে করতে) ভুল করবে না। এমনকি তারা যদি শুষ্ক অথবা নরম পায়খানা খায় তাহলে তোমরাও তা (তাদের অনুসরণে ‘নিউ ফ্যাশন মনে করে) খাবে!’ (আল-বিদাউ অন্নাহয়্যু আনহা, ইবনে অযযাহ্ ৭১পৃঃ, তানবীহ উলিল আবসার ১৭২ পৃঃ)