বিদআত সৃষ্টির এক কারণ সন্দিহান ও রূপক (দুর্বোধ্য) আয়াত বা হাদীসের মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করা। যাতে ব্যাখ্যাতা অসঙ্গত তাৎপর্য করে আসল উক্তির পরিবর্তন ঘটায় এবং এক উক্তির সহিত অন্য অক্তি পরস্পর-বিরোধিতা ব্যক্ত করে। কিতাবের কিছু অংশের উপর ঈমান আনে এবং কিছু অংশকে অস্বীকার। করে। ঐ সমস্ত রূপক আয়াতের মনগড়া ইলম মনে সঞ্চার করে বাতেনী ইলমের খাজানা পেয়েছে বলে দাবী করে। অথচ এরাই হচ্ছে বক্রতা ও ভ্রষ্টতার ভান্ডার। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সা.) এই আয়াত তেলাঅত করলেন:
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
অর্থাৎ, তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন; এগুলি কিতাবের মূল অংশ। আর অন্যগুলি রূপক। যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিৎনা (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুবিজ্ঞ তারা বলে, আমরা এ বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত। বস্তুতঃ বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আলে ইরান ৭ আয়াত)
অতঃপর তিনি (রসুল) বলেন, “সুতরাং যাদেরকে রূপক আয়াতের অনুসরণ করতে দেখবে আল্লাহ তাদেরকেই উদ্দেশ্য করেছেন, তাই তাদের থেকে সাবধান থেকো। (বুখারী ও মুসলিম) | রূপক আয়াত নিয়ে বিদ্যা জাহিরকারী (ভেদ প্রকাশকারী) ও বিভিন্ন সংশয় সৃষ্টিকারী এক ব্যক্তিকে উমার (রাঃ) প্রচন্ডভাবে প্রহার করে এমন শায়েস্তা করেছিলেন যে, অতঃপর আর কোন দিন তার মনে কোন সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। এমন লোক যে এ যুগে কম, তা নয়। কিন্তু সে উমার আর নেই। তাই তো এমন কেরামতবাজদের বিদআতে ভ্রষ্টতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে মুসলিম সমাজ অধঃপতনের শিকার হয়েছে।
সংশয় এক এমন ভয়ানক ব্যাধি যে, ঐ ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের নিকট আসল ও প্রকৃত বিষয় চাপা পড়ে, হক ও বাতিলের মাঝে তালগোল খেয়ে যায়। কখনো বা এমনও হয় যে, ঐ মানুষ ইসলামী গন্ডি থেকে অজান্তে বের হয়ে যায়। আবার এই ব্যাধির মাধ্যমেই ইসলাম-দুশমনরা মুসলিমদের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে দুর্বল ঈমানের মানুষদের মনে বিপজ্জনক ঈমান-ধ্বংসী জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটায়। ফলে মুসলিম নিজ ঈমানে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করে এবং এক সময় ঈমান-হারা হয়ে যায়। তাইতো এসব বিষয়ে মুসলিমকে বড় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে যে সব বিষয়ে অধিক সন্দেহ জাগার সম্ভাবনা থাকে; (যেমন তকদীর, সিফাত প্রভৃতি) সে সব বিষয়ে ঈমান পাক্কা ও মজবুত করা উচিত।
প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর সিফাত (গুণ) সম্বলিত আয়াতসমুহের কোনটাই রূপক (মুতাশা-বিহ) নয়। কেননা, তাঁর সিফাতের অর্থ আমাদের সুস্পষ্ট জানা, অবশ্য তার রকমত্ব ও স্বরূপ সকলের কাছে অজানা। সুতরাং সে বিষয়ে কারো কোন সংশয় হওয়ার কথা নয়।।
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলতেন, 'আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর নিকট হতে আগত সকল বিষয়ের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যেরই অনুবর্তী হয়ে ঈমান। এনেছি। রসুলের উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর নিকট আগত সকল বিষয়ের উপর রসূলের উদ্দেশ্যেরই অনুবর্তী হয়ে ঈমান এনেছি।” (যাম্মুত তাবীল)
ইমাম মালেক (রঃ) আল্লাহর আরশে থাকার কেমনত্ব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে। বলেছিলেন, আরশে থাকা বিদিত, তার কেমনত্ব অবিদিত এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন (কৈফিয়ত) করা বিদআত।