সেখানে জান্নাতীদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গিনী। মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ لَّهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا
অর্থাৎ, আর যারা বিশ্বাস করে ও ভাল কাজ করে, তাদেরকে বেহেস্তে প্রবেশ করাব; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী আছে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় স্থান দান করব। (নিসাঃ ৫৭, আরো দ্রঃ বাকারাহঃ ২৫, আলে ইমরানঃ ১৫)
বেহেশ্তী পত্নী, হুর বা অপসরা। তাঁদের সাথে জান্নাতীদের বিবাহ হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ
অর্থাৎ, এরূপই ঘটবে ওদের; আর আয়তলোচনা হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। (দুখানঃ ৫৪)।
مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ سُرُرٍ مَّصْفُوفَةٍ ۖ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ
অর্থাৎ, তারা বসবে সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে; আমি তাদের বিবাহ দেব আয়তলোচনা হুরদের সঙ্গে। (তুরঃ ২০)।
বলা বাহুল্য, তাদেরকে স্বর্গ-বেশ্যা বা স্বর্গীয় বারাঙ্গনা বলা বেজায় ভুল। তারা স্ত্রী। তারা একই স্বামীর জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। তারা দুশ্চরিত্রা, কুলটা বা ভ্ৰষ্টা নয়। তারা পর পুরুষের প্রতি নজর তুলেও দেখবে না।
প্রতি জান্নাতী স্বীয় আমল অনুযায়ী দুই বা ততোধিক বেহেস্তী স্ত্রী পাবে। শহীদের হবে বাহাত্তরটি স্ত্রী।
নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে সাতটি মর্যাদা; রক্তক্ষরণের শুরুতেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, বেহেশ্তে সে তার নিজ স্থান দেখতে পায়, তাকে ঈমানের জুব্বা পরিধান করানো হয়, (বেহেশ্তে) ৭২টি সুনয়না হুরীর সাথে তার বিবাহ হবে, কবরের আযাব থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে, (কিয়ামতে দিন) মহাত্রাস থেকে নিরাপদে থাকবে, তার মস্তকে গৌরবের মুকুট পরানো হবে, যার একটি মাত্র মণি (চুনি) পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, আর নিজ পরিবারের ৭০ জন লোকের জন্য (আল্লাহর দরবারে) তার সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে।” (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, সহীহুল জামে’ ৫ ১৮২ নং)
সপত্নী (সতীন)দের মাঝে আপোষের কোন ঈর্ষা ও কলহ থাকবে না। (আল-কুরআন ৭/৪৩, ১৫/৪৭)।
দুনিয়ার স্ত্রী বেহেশতে গেলে, সেও স্বামীর সাথে বাস করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدتَّهُمْ وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ দান কর; যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের দিয়েছ (এবং তাদের) পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে (যারা) সৎকাজ করেছে, তাদেরকেও (জান্নাত প্রবেশের অধিকার দাও)। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (মু'মিনঃ ৮)।
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ
অর্থাৎ, স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতিপত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফিরিশ্তাগণ তাদের কাছে প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (রা’দঃ ২৩)
ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ
অর্থাৎ, তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। (যুখরুফঃ ৭০)
هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِئُونَ
অর্থাৎ, তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় থাকবে এবং হেলান দিয়ে বসবে সুসজ্জিত আসনে। (ইয়াসীনঃ ৫৬)।
পার্থিব স্ত্রীর রূপ-গুণ বেহেশ্তী স্ত্রীদের তুলনায় অধিক হবে। বেহেশতী হুরগণ তাদের পার্থিব সপত্নীর খিদমত করবে।
অবিবাহিত নারী এবং যার স্বামী দোযখবাসী হবে, তাদের ইচ্ছামত জান্নাতী কোন পুরুষের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। কয়েকটি দুর্বল হাদীসে এসেছে যে, মারয়্যাম, আসিয়া ও (মূসা নবীর বোন) কুলসুমের বিবাহ হবে শেষ নবী (ﷺ)-এর সাথে। ( সিঃ যয়ীফাহ ৫৮৮৫, সঃ জামে' ১২৩৫, ১৬১ ১নং)।
পৃথিবীতে যে নারীর একাধিক বার একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহ হয়েছিল তারা সকলেই জান্নাতে গেলে তার পছন্দমত একজন স্বামীর সাথে বাস করবে। যেহেতু সেখানে মনমতো সবকিছু পাওয়া যাবে। নচেৎ শেষ স্বামীর স্ত্রী হয়ে থাকবে। (সঃ জামে’ ৬৬৯ ১নং)
একদা হুযাইফা (রাঃ) তার স্ত্রীকে বললেন, তুমি যদি জান্নাতে আমার স্ত্রী থাকতে চাও, তাহলে আমার পরে আর কাউকে বিয়ে করো না। কারণ, মহিলা তার পার্থিব শেষ স্বামীর অধিকারে থাকবে। (বাইহাকী, সিঃ সহীহাহ ১২৮১নং)
আর সম্ভবতঃ এই জন্যই মহানবী (ﷺ) এর ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীদের বিবাহ হারাম ছিল। কারণ, তারা জান্নাতেও তার বেহেশতী পত্নী।
সকল স্ত্রীগণই সদা পবিত্রা থাকবে। সেখানে তাদের কোন প্রকারের স্রাব, মল, কফ, থুথু, ঋতু ইত্যাদি কিছুই থাকবে না। (বুখারী ৩৩২৭, মসলিম ২৮৩৫নং) স্বামী সহবাসেও চিরকুমারী এবং অনন্ত যৌবনা থাকবে। বীর্যপাত বা কোন অপবিত্রতাও থাকবে না। কেউ কোনদিন গর্ভবতীও হবে না। অবশ্য কোন জান্নাতীর শখ হলে তার ইচ্ছামত ক্ষণেকে তার স্ত্রী গর্ভবতী হবে এবং সন্তান প্রসব করবে ও বয়ঃপ্রাপ্ত হবে। (তিরমিযী ২৫৬৩, আহমাদ ৩/৮০ দারেমী)।
বেহেস্তী হুর। হুর সেই মহিলাদেরকে বলা হয়, যাদের চোখের তারা খুব কালো এবং বাকী অংশ খুব সাদা। এদের চোখের অন্য এক সৌন্দর্য বর্ণনায় বলা হয়, ঈন। তার মানে ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট মহিলা।
তারা লজ্জা-নম্র, আয়তলোচনা তন্বী---সুরক্ষিত ডিম্বের মত উজ্জ্বল গৌরবর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন,
كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُونٌ
অর্থাৎ, যেন তারা গৌরবর্ণ সুরক্ষিত ডিম। (স্বা-ফফাতঃ ৪৯)
وَحُورٌ عِينٌ (22) كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ (23)
অর্থাৎ, আর (তাদের জন্য থাকবে) আয়তলোচনা হুর; সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ। (ওয়াক্বিআহঃ ২২-২৩)
সে সুনয়না তরুণীগণ---যাদেরকে পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। তারা তাদের স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষকে তাকিয়েও দেখবে না। প্রবাল ও পদ্মরাগ-সদৃশ এ সকল তরুণীদের স্বচ্ছ কাচ সদৃশ দেহকান্তি হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (56) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (57) كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ (58)
অর্থাৎ, সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না; যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তারা (সৌন্দর্যে) যেন পদ্মরাগ ও প্রবালসদৃশ। (রাহমানঃ ৫৬-৫৮)।
বাহির হতে তাদের অস্থি-মধ্যস্থিত মজ্জা পরিদৃষ্ট হবে। (মুসলিম ২৮৩৪)
তারা হবে শতরূপে অপরূপা সুন্দরী বধূ। মহান আল্লাহ বলেন,
فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ (70) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (71) حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ (72) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (73) لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (74)
অর্থাৎ, সে সকলের মাঝে রয়েছে উত্তম চরিত্রের সুন্দরীগণ। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তারা তাঁবুতে সুরক্ষিত হুর। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। (রাহমানঃ ৭০-৭৪)
সম্ভ্রান্ত শয্যাসঙ্গিনী, যাদেরকে আল্লাহপাক জান্নাতীদিগের জন্য বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছেন। তারা চিরকুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা তরুণী। মহান আল্লাহ বলেন,
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ (27) فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ (28) وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ (29)
অর্থাৎ, তাদেরকে (হুরীগণকে) আমি সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে। তাদেরকে করেছি কুমারী। প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা। ডান হাত-ওয়ালাদের জন্য। (যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। সেখানে আছে কঁাটাহীন। কুলগাছ। কাঁদি ভরা কলাগাছ। (ওয়াক্বিআহঃ ২৭-২৯)।
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا (31) حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا (32) وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا (33)
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহভীরুদের জন্যই রয়েছে সফলতা; উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা সমবয়স্কা তরুণীগণ। (নাবাঃ ৩১-৩৩)
দুনিয়ার বৃদ্ধাগণও সেদিন যুবতীতে পরিণত হবে।
একদা এক বৃদ্ধা এসে বলল, 'হে আল্লাহর রসূল! আপনি দুআ করে দিন, যাতে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। তিনি মস্করা করে বললেন, ‘বৃদ্ধারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” তা শুনে বৃদ্ধা কঁদতে কাঁদতে প্রস্থান করল। তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, “ওকে বলে দাও যে, বৃদ্ধাবস্থায় ও জান্নাতে যাবে না।” (বরং সে যুবতী হয়ে যাবে।) (শামায়েলুত তিরমিযী, রাযীন, গায়াতুল মারাম, মিশকাত ৪৮৮৮নং)
যৌবন-পরিপক্বতায় সকল স্ত্রীর বয়স হবে তেত্রিশ বছর। সকলের দেহ হবে ষােড়শীর মত, যাদের বুকের উঁচু উঁচু সুডৌল স্তনযুগল নতমুখী হয়ে ঢলে যাবে না।
সেই বেহেশ্তবাসিনী, রূপের ডালি, ঝলমলে লাবণ্যময়ী, সুবাসিনী কোন যুবতী যদি পৃথিবীর তমসাচ্ছন্ন আকাশে উকি মারে, তাহলে তার রূপালোকে ও সৌরভে সারা জগৎ আলোকিত ও সুরভিত হয়ে উঠবে। অনন্ত যৌবনা---এমন সুরমার কেবলমাত্র শীর্ষস্থিত উত্তরীয় খানি পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সব কিছু হতে উত্তম ও মূল্যবান। (বুখারী ৬৫৬৮নং)