মহিলাদের কাফনও পুরুষদের অনুরূপ। যেহেতু মহিলাদের পাঁচ কাপড়ের কাফনের ব্যাপারে যে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়, সেটি যয়ীফ। (দেখুন ইরওয়াউল গালীল ৭২৩নং, আল মুমতে’ ৫/৩৯৩) তদনুরূপ সাত কাপড়ের হাদীসও যয়ীফ। (আহকামুল জানাইয টীকা ৬৪ পৃঃ)।
অবশ্য যারা হাদীসটিকে হাসান (?) মনে করেন, তাঁরা পাঁচ কাপড় নিন্মরূপে দেনঃ
কাফনদাতা দুটি লেফাফা সমান মাপে কাটবে। ১টি কামীস এমন মাপে কাটবে; যাতে লাশের কাঁধ থেকে পায়ের গাঁট পর্যন্ত ঢাকা হয়। ডবল ভাঁজের কাপড় নিয়ে ভাজের মাঝখানে গোল করে কেটে মাথা প্রবেশ করার মত জায়গা করে নেবে। ইজার বা লুঙ্গী এমন মাপে কাটবে; যেন লাশের বগল থেকে নিয়ে পা পর্যন্ত আবৃত হয়। খিমার বা ওড়না ৯০ বর্গসেমি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
লেফাফা দুটিকে উপরি উপরি বিছাবে। কামীসের পিঠের দিকটা বিছিয়ে বুকের দিকটা মাথার দিকে গুটিয়ে রাখবে। এরপর লুঙ্গীর কাপড় বিছাবে। ওড়না রাখবে পাশে। লেঙ্গটের প্রয়োজন হলে লুঙ্গীর উপর দেবে।
এরপর লাশকে পর্দার সাথে এনে কাফনের উপর রেখে তার হাত দুটিকে দুই পাজরের পাশে রাখবে। চুলের বেণীগুলো পিঠের নিচে ফেলে রাখবে। উল্লেখ্য যে, বুকের উপর চুল রাখা বিদআত। (আহকামুল জানাইয, আলবানী, বিদআত নং ৩৬)
অতঃপর (প্রয়োজন হলে লেঙ্গট বাঁধবে, নচেৎ) লাশের ডান দিকের লুঙ্গীর আঁচল নিয়ে তার ডান দিক এবং বাম দিকের আঁচল নিয়ে বাম দিক জড়িয়ে দেবে। এই সঙ্গে লাশের লজ্জাস্থানে স্থিত কাপড়টি সরিয়ে নেব। অতঃপর গুটিয়ে রাখা কামীসের উপরের অংশটি নিয়ে কাটা অংশের ফাঁকে মাথা প্রবেশ করিয়ে নিয়ে দেহের উপর বিছিয়ে দেবে এবং সাইডের বাকী অংশগুলি ডানে ও বামে পাঁজরের নিচে মুড়ে দেবে। তারপর ওড়না নিয়ে মাথা, চুল ,মুখমণ্ডল ও বক্ষস্থল ঢেকে দেবে। এরপর লেফাফাদুটিকে পরস্পর ডান দিক থেকে ও পরে বাম দিক থেকে দেহে জড়িয়ে দেবে। মাথা ও পায়ে বাধনের গঁট দিয়ে মাঝে ১ থেকে ৫টি বাধন দেবে। বলাই বাহুল্য যে, যয়ীফ বা দুর্বল হাদীসের উপর আমল শুদ্ধ নয়। বিদায়ের এই অন্তিম মুহুর্তে, ওয়ারেসীন বা কর্তৃপক্ষের কারো মাইয়্যেতকে ক্ষমা করতে বলার উদ্দেশ্যে সকলের নিকট করজোরে নিবেদন করার কথা শরীয়তে নেই। শরীয়তে আছে তা হল জীবিতাবস্থায় মাইয়্যেত নিজে ক্ষমা চাইবে। যেমন, পুর্বে আলোচিত হয়েছে। অবশ্য সুযোগ না পেলে সে কথা ভিন্ন।
এই কাফনানোর সময়েই ঘটা করে মাইয়্যেতের স্ত্রীকে নতুন লাল পেড়ে শাড়ি পরিয়ে লাশের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে তার মোহরের দাবী মাফ করতে বলা বিদআত।
বলাই বাহুল্য যে, দেন মোহর এক প্রদেয় যৌতুক ও হক যা বিবাহ বন্ধনকালে অথবা জীবিতাবস্থায় আদায় করা জরুরী ছিল। কিন্তু সে ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করে অথবা প্রক্ষেপ না করে অথবা স্ত্রীর অধিকারের ব্যাপারে তাকে সােচ্চার হতে না দিয়ে তা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশেষে সে যখন পরপারের জন্য নব সজ্জায় শীতল জড়পিন্ড হয়ে শায়িত, তখন যেন সে নতুন আলতা পেড়ে শাড়ি পরিহিতা শয্যা-সঙ্গিনীর নিকট অন্তিম বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে (সমাজের মুখে) বলছে, 'ওগো প্রিয়া! এবার আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমার ঋণ পরিশোধে আমি অক্ষম। তোমার মোহরের দাবী মাফ করে দাও। আমাকে হিয়া খোসলে খালাস দাও।” আহা! বেচারা বিরহ বেদনাহত টনটনে ব্যথিত বক্ষে তাই কি মৌখিক ক্ষমা করে থাকতে পারে? কিন্তু কে জানে, হয়তো বা তার অন্তস্তলে এমন দাবী। থেকে গেছে, যা সে মুখে প্রকাশ করতে লজ্জা অথবা ভয় করছে।
এতো শুধুমাত্র স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার মোহরের কথা। নচেৎ যদি ঐ মৃতব্যক্তি বিবাহের সময় দেওয়ার পরিবর্তে নিজে মোহর, ঘুষ, যৌতুক বা পণ নিয়ে স্ত্রীর অভিভাবককে দগ্ধ করে পথে বসিয়েছে, তাহলে তার বিষয়টা যে কত বড় গুরুতর, তার আন্দাজ সমাজই করবে।
পরন্তু যদি মাইয়্যেতের ত্যক্ত সম্পদ থাকে, তবে ওয়ারেসীনরা তার মোহর এবং অন্যান্যের ঋণ আদায় করে দেবে। মাফ করতে অনুরোধ করবে না। সম্পদ না থাকলে এমন অনুরোধ রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রোষ্ট্রীরও উচিত, স্বামীকে আন্তরিকভাবে ক্ষমা করা। এতে সে উত্তম বিনিময় পাবে পরকালে।
কাফনানোর সময় কাফনের ভিতরে কুরআনের কোন আয়াত বা দুআ লিখে ভরা, অথবা কাফনের কাপড়ের উপর লিখা, কোন অলীর শাজারা-নামা অথবা পীরের সুপারিশ-নামা (!) কাফনের সঙ্গে দেওয়া এবং আযাব মাফ বা লঘু হওয়ার আশা রাখা মস্ত বড় দুঃসাহসিকতা ও বিদআত।
জানাযার খাট (দোনজা)কে অথবা লাশকে আয়াত বা কলেমা-খচিত চাদর দ্বারা আবৃত করা এবং পুষ্পমন্ডিত করাও বিদআত। শেষােক্তটি বিজাতীয় প্রথা।
মাইয়্যেত মহিলা হলেই খাট ঢেকে পর্দা করা প্রয়োজন। কিন্তু হায়! যার সারা জীবন বেপর্দায় এবং পর্দার বিরুদ্ধে হাসাহাসি ও ভ্রকুঞ্চনে কাটল, তাকে আর এ সময় পর্দা করে কতটা লাভ হবে? এর জবাব প্রত্যেক মহিলার পিতা, স্বামী এবং মেয়েরা নিজেই দেবে। এই সময় বা যে কোন সময় স্মৃতি স্বরূপ লাশের কোন স্মারক ছবি তুলা অবৈধ।