মূলতঃ নামাযের যে কোন রুকন ইমাম সাহেবের একটু পরেই আদায় করতে হয়। তথা ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে পুরোপুরি রুকুতে চলে যাবেন তখন মুক্তাদিগণ রুকু করতে অগ্রসর হবেন। তেমনিভাবে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে সিজদার জন্য জমিনে কপাল ঠেকাবেন তখনই মুক্তাদিগণ তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবেন। ইমাম সাহেবের আগে, বহু পরে কিংবা সমানতালে কোন রুকন আদায় করা চলবে না।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
أَمَا يَخْشَى الَّذِيْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ يُحَوِّلَ صُوْرَتَهُ صُوْرَةَ حِمَارٍ
‘‘ওই ব্যক্তি কি ভয় পাচ্ছে না যে ইমাম সাহেবের পূর্বেই রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা তার মাথাকে গাধার মাথায়
রূপান্তরিত করবেন অথবা তার গঠনকে গাধার গঠনে পরিণত করবেন’’।[1]
আবু মূসা আশ্’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) একদা আমাদেরকে নামায শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন:
فَإِذَا كَبَّرَ وَرَكَعَ فَكَبِّرُوْا وارْكَعُوْا فَإِنَّ الإِمَامَ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ
‘‘ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে রুকু’তে যাবেন তারপর তোমরাও তাকবীর দিয়ে রুকু’তে যাবে। কারণ, একমাত্র ইমাম সাহেবই তো তোমাদের আগেই রুকু করবেন এবং তোমাদের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠাবেন’’।[2]
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) নামায শেষে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
أَيُّهَا النَّاسُ! إِنِّيْ إِمَامُكُمْ فَلاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ
‘‘হে মানব সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরই ইমাম। সুতরাং তোমরা আমার আগে রুকু, সিজদাহ্, উঠা, বসা ও সালাম আদায় করবে না’’।[3]
আনাস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) একদা সাহাবাগণকে নামাযের প্রতি খুবই উৎসাহিত করেছেন এবং এরই পাশাপাশি তিনি তাঁদেরকে তাঁর আগে সালাম ফেরাতেও নিষেধ করেছেন।[4]
আব্দুল্লাহ্ বিন মাস’ঊদ্ ও আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) একদা রুকন আদায়ে ইমামের অগ্রবর্তী জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
لاَ وَحْدَكَ صَلَّيْتَ وَلاَ بِإِمَامِكَ اِقْتَدَيْتَ
‘‘(তোমার নামাযই হয়নি) না তুমি একা নামায পড়লে; না ইমাম সাহেবের সাথে পড়লে’’। (রিসালাতুল ইমাম আহ্মাদ্)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ
‘‘ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলেই তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন’’।[5]
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ فَكَبِّرُوْا وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ وَقَاْلَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَارْفَعُوْا وَقُوْلُوْا رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا
‘‘যখন ইমাম সাহেব তাকবীর সমাপ্ত করবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে। আর যখন তিনি রুকুতে চলে যাবেন তখন তোমরা রুকু শুরু করবে। আর যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে ’’সামি’আল্লাহু লিমান্ হামিদাহ্’’ বলবেন তখন তোমরা রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে’’রাববানা ওয়া লাকাল্ হাম্দ’’ বলবে। আর যখন তিনি সিজদায় যাবেন তখন তোমরা সিজদাহ শুরু করবে’’।[6]
বারা’ বিন ’আযিব (রাযিয়াল্লাহু আন্হু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُوْدِ لاَ يَحْنِيْ أَحَدٌ ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَبْهَتَهُ عَلَى الأَرْضِ
‘‘নবী (সা.) যখন সিজদাহ্’র জন্যে ঝুঁকে পড়তেন তখনো আমাদের কেউ নিজ পৃষ্ঠদেশ বাঁকা করতো না যতক্ষণ না তিনি নিজ কপাল জমিনে রাখতেন’’।[7]
>[2] (মুসলিম, হাদীস ৪০৪ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৫৯৩)
[3] (মুসলিম, হাদীস ৪২৬)
[4] (আবু দাউদ, হাদীস ৬২৪)
[5]
[6] (বুখারী, হাদীস ৭২২, ৭৩৪, ৮০৫ মুসলিম, হাদীস ৪১৪)
[7] (বুখারী, হাদীস ৬৯০, ৮১১ মুসলিম, হাদীস ৪৭৪ আবু দাউদ, হাদীস ৬২১)