ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা ষষ্ঠ অধ্যায় - স্বীয় নাফসের সাথে মুসলিম বান্দার আদবসমূহ ইসলামহাউজ.কম
(ক) তাওবা (التوبة ):

তাওবার উদ্দেশ্য হলো সকল প্রকার অপরাধ ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা, পূর্বের কৃত প্রত্যেকটি গুনাহ’র জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যৎ জীবনে পুনরায় সেসব গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। আর এটা এ জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ ﴾ [التحريم: ٨]

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর- বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।”[1] তিনি আরও বলেন:

وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ

“আর তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”[2] আর আল্লাহ তা‘আলা শু‘আইব আ. এর বক্তব্য বর্ণনা করে বলেন:

وَٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِۚ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٞ وَدُودٞ

“আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁর দিকে ফিরে আস; আমার রব তো পরম দয়ালু, অতি স্নেণহময় ।”[3] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّى أَتُوبُ فِى الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ » . (رواه مسلم ).

“হে মানবগোষ্ঠী! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর; কারণ, আমি তাঁর কাছে দিনে একশত বার তাওবা করি।”[4] তিনি আরও বলেন:

« مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ » . (رواه مسلم).

“যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে তাওবা করবে, তার তাওবা আল্লাহ কবুল করবেন।”[5] তিনি আরও বলেন:

« إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا » . (رواه مسلم ).

“আল্লাহ তা‘আলা পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত (কিয়ামত পর্যন্ত) প্রত্যেক রাতে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করবেন, যাতে দিনের গুনাহগার তাওবা করে। আবার তিনি দিনের বেলায় ক্ষমার হাত প্রসারিত করবেন, যাতে রাতের গুনাহগার তাওবা করে।”[6] তিনি আরও বলেন:

« لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ الْمُؤْمِنِ مِنْ رَجُلٍ فِى أَرْضٍ دَوِيَّةٍ مَهْلَكَةٍ مَعَهُ رَاحِلَتُهُ عَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ ، فَنَامَ فَاسْتَيْقَظَ وَقَدْ ذَهَبَتْ فَطَلَبَهَا حَتَّى أَدْرَكَهُ الْعَطَشُ ، ثُمَّ قَالَ أَرْجِعُ إِلَى مَكَانِى الَّذِى كُنْتُ فِيهِ ، فَأَنَامُ حَتَّى أَمُوتَ ، فَوَضَعَ رَأْسَهُ عَلَى سَاعِدِهِ لِيَمُوتَ فَاسْتَيْقَظَ وَعِنْدَهُ رَاحِلَتُهُ وَعَلَيْهَا زَادُهُ وَطَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَاللَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ مِنْ هَذَا بِرَاحِلَتِهِ وَزَادِهِ » . (رواه مسلم ).

“আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মুমিন বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশি আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি খাদ্য ও পানীয় নিয়ে তার বাহন তথা উটসহ মরুভুমিতে অবস্থান করে, অতঃপর ঘুমিয়ে পড়ে, তারপর জেগে উঠে দেখে সেই উটটি চলে গেছে; অতঃপর সে তাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে যায়; অতঃপর সে বলে: আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে ফিরে যাব, অতঃপর মৃত্যু পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকব। অতঃপর সে মরে যাওয়ার জন্য তার বাহুর উপর মাথা রাখল; অতঃপর সে জেগে উঠে দেখল, তার নিকটেই খাদ্য ও পানীয়সহ তার উটটি অবস্থান করছে। সুতরাং ঐ ব্যক্তি তার উট ও রসদপত্র ফিরে পেয়ে যেমন আনন্দিত হল, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বান্দার তাওবায় তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত হন।”[7] আরও বর্ণিত আছে যে, ফেরেশ্তাগণ আদম আ. কে তাঁর তাওবার কারণে অভিনন্দন জানিয়েছে, যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবুল করেছেন।[8] তিনি আরও বলেন:

« يَضْحَكُ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يقْتلُ أَحَدهُمَا الآخَرَ يَدْخُلانِ الجَنَّةَ ، يُقَاتِلُ هَذَا في سَبيلِ اللهِ فَيُقْتَلُ ، ثُمَّ يتُوبُ اللهُ عَلَى القَاتلِ فَيُسْلِم فَيُسْتَشْهَدُ » . (رواه البخاري).

“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এমন দুই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসবেন, যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে এবং উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। একজন আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে শহীদ হবে। তারপর আল্লাহ হত্যাকারীর তাওবা কবুল করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে (জিহাদে) শহীদ হয়ে যাবে।”[9] আরও বর্ণিত আছে যে, ফেরেশ্তাগণ আদম আ. কে তাঁর তাওবার কারণে অভিনন্দন জানিয়েছে, যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবুল করেছেন।[10]

>
[1] সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮

[2] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১

[3] সূরা হুদ, আয়াত: ৯০

[4] মুসলিম, হাদিস নং- ৭০৩৪

[5] মুসলিম, হাদিস নং- ৭০৩৬

[6] মুসলিম, হাদিস নং- ৭১৬৫

[7] মুসলিম, হাদিস নং- ৭১৩১

[8] আল-গাযালী, ‘এহইয়াউ ‘উলুমিদ্ দীন’ ।

[9] বুখারী, হাদিস নং- ২৬৭১

[10] আল-গাযালী, ‘এহইয়াউ ‘উলুমিদ্ দীন’ ।