ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআনে কারীম ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে গুনাহ্ মাফের আমল ২. চরিত্রের অধ্যায় ইসলামহাউজ.কম
২. ৮. বিপদ-মুসিবত

মনের বেদনা, শরীরের অসুস্থতা, প্রিয়জনকে হারানো এবং সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে কোনো ব্যক্তিই নিরাপদ নয়। আর এর থেকে মুক্ত নয় সৎকর্মশীল ও অসৎকর্মশীল ব্যক্তি এবং মুমিন ও কাফির কেউই; কিন্তু মুমিন ব্যক্তি এই বিপদ-মুসিবতগুলোকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করে; এমন চিত্ত যা তার চালিকা শক্তিকে আল্লাহর হাতে ন্যস্ত করেছে। কারণ, সে নিশ্চিত জ্ঞানে জানে যে, সে যে বিপদে আক্রান্ত হয়েছে, তা তাকে ছেড়ে যেতো না, আর যে বিপদ তাকে পায় নি তা তার উপর আপতিত হবে না।

আর এই বিপদগুলো মুমিন বান্দাকে তার পাপরাশি থেকে এমনভাবে পবিত্র করে দেয়, যেমনিভাবে সাদা কাপড়কে পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করা হয়; ফলে সে বালা-মুসিবত থেকে ঐ দিনের মত (পাপমুক্ত হয়ে) বের হয়, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে।

আর এই অপরাধের বিষয়টি মানুষের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়; কেননা, আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর রহমতের ব্যাপারটি হল— তিনি তাদেরকে একের পর এক বিপদ-মুসিবতের প্রতিশ্রুতি দেন যাতে তিনি তাদেরকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করেন; আর তাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তাদের হৃদয়সমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তাদের পা-সমূহ সুস্থির রাখেন।

এই বিপদ-মুসিবতগুলো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্টি ও ভালবাসার প্রমাণস্বরূপ; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি তাকে বিপদ-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা করেন; আর যখনই ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাস মজবুত ও শক্তিশালী হবে, তখনই তার পরীক্ষা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে; সুতরাং এই অবস্থায় যে সন্তুষ্ট থাকবে, তারা জন্য রয়েছে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি; আর যে অধৈর্য হবে, তার জন্য রয়েছে (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« أَشَدُّ النَّاسِ بَلاءً الأَنْبِيَاءُ ، ثُمَّ الأَمْثَلُ فَالأَمْثَلُ ، يُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ ، فَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلاؤُهُ ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٍ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ ، فَمَا يَبْرَحُ الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الْأَرْضِ مَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيئَةٍ » . ( رواه الترمذي و ابن ماجه ) .

“মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন মুসিবতের শিকার হয়েছেন নবীগণ; অতঃপর ক্রমানুসারে পরবর্তী ধাপের সৎব্যক্তিগণ, ব্যক্তি পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে; সুতরাং সে যদি তার দীনের ব্যাপারে দৃঢ়তার সাথে অটল থাকে, তাহলে তার বিপদ-আপদও কঠোর থেকে কঠোরতর হবে; আর যদি সে তার দীনের ব্যাপারে আপোষকামী হয়, তাহলে সে পরীক্ষা বা কষ্টের সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে; সুতরাং বান্দা বালা-মুসিবতে আক্রান্ত হতেই থাকবে যতক্ষণ না তা তাকে যমীনের উপরে গুনাহ বিহীন অবস্থায় চলাফেরা করাতে পারবে।”[1]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

« إِذَا ابْتَلَى اللَّهُ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ بِبَلَاءٍ فِي جَسَدِهِ قَالَ اللَّهُ : اكْتُبْ لَهُ صَالِحَ عَمَلِهِ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ ، فَإِنْ شَفَاهُ غَسَلَهُ وَطَهَّرَهُ ، وَإِنْ قَبَضَهُ غَفَرَ لَهُ وَرَحِمَهُ » . (رواه أحمد ) .

“যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো মুসলিম বান্দাকে তার শারীরিক দুঃখ-কষ্ট বা রোগ-ব্যাধির দ্বারা পরীক্ষা করেন, তখন আল্লাহ বলেন: তার সৎকাজগুলো লিখ, যে কাজগুলো সে (সুস্থ অবস্থায়) করত; অতঃপর তিনি যদি তাকে রোগমুক্ত করেন, তাহলে তিনি (রহমতের পানি দ্বারা) ধুয়ে মুছে তাকে পবিত্র করে দেন; আর যদি তাকে মৃত্যুর মাধ্যমে উঠিয়ে নেন, তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার প্রতি রহম করেন।”[2]

আবূ শা‘ছা আস-সান‘আনী থেকে বর্ণিত:

তিনি একদা দামেস্কের একটি মাসজিদে গমন করেন এবং এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় ভ্রমণ করতে লাগলেন, অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেল সাদ্দাদ ইবন আউস ও আস-সুনাবেহী’র। অতঃপর আমি (আবূ শা‘ছা আস-সানা‘আনী) বললাম: আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহম করুন, তোমরা কোথায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছ? জবাবে তারা বলল: আমরা সেখানে আমাদের এক অসুস্থ ভাইকে দেখতে যাচ্ছি; অতঃপর আমিও তাদের সাথে চললাম, তারপর তারা ঐ ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: তোমার সকাল কেমন কেটেছে? জবাবে সে বলল: আমার সকাল নেয়ামতের উপর কেটেছে। অতঃপর তাকে উদ্দেশ্য করে সাদ্দাদ ইবন আউস বললেন: আমি তোমাকে গুনাহ মাফ ও পাপ মোচনের সুসংবাদ দিচ্ছি; কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

« إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ : إِنِّي إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنًا فَحَمِدَنِي عَلَى مَا ابْتَلَيْتُهُ ، فَإِنَّهُ يَقُومُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ مِنْ الْخَطَايَا ، وَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ : أَنَا قَيَّدْتُ عَبْدِي وَابْتَلَيْتُهُ ، وَأَجْرُوا لَهُ كَمَا كُنْتُمْ تُجْرُونَ لَهُ وَهُوَ صَحِيحٌ » . ( رواه أحمد ) .

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি যখন আমার বান্দাগণের মধ্য থেকে কোনো মুমিন বান্দাকে কোনো বিপদ-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা করি, অতঃপর সে আমার দুঃখ-কষ্টের পরীক্ষা করা অবস্থায় আমার প্রশংসা করে, তখন সে তার শয্যা থেকে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ অবস্থায় উঠবে, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে; আর মহান রব বলবেন: আমি আমার বান্দাকে আটক করেছি এবং তাকে দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পরীক্ষা করেছি, তোমরা তার জন্য সাওয়াব লিখবে, যেমনিভাবে তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য সাওয়াব লিখতে।”[3]

>
[1] তিরমিযী, হাদিস নং- ২৩৯৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪০২৩; দারেমী: ২/৩২০; ইবনু হিব্বান: (২৯৮ ও ২৯৯— মাওয়ারিদ); হাকেম: (১/৪০ ও ৪১); আহমাদ: (১/১৭২, ১৭৪, ১৮০ ও ১৮৫) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি দু’টি সনদে সা‘য়াদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আমি বলি: হাদিসটি সহীহ এবং এর সমর্থনে আরও একটি হাদিস বর্ণিত আছে, যা ইবনু মাজাহ: (৪০২৪), হাকেম: (৪/৩০৭) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; হাকেম রহ. বলেন: ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে হাদিসটি সহীহ এবং ইমাম যাহাবী রহ.ও হাদিসটিকে সহীহ বলেন; আমি বলি: হাদিসটি সহীহ, তাঁর উভয়ে যেমনটি বলেছেন।

[2] আহমাদ: (৩/১৪৮, ২৩৮, ২৫৮); তিনি হাদিসটি হাম্মাদ ইবন সালামা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সিনান ইবন রবি‘আ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন।

আমি বলি: এই সনদটি হাসান পর্যায়ের— ইনশাআল্লাহ; কেননা, সিনান ইবন রবি‘আ সত্যবাদী।

[3] আহমাদ: (৪/১২৩); আমি বলি: এই সনদটি হাসান পর্যায়ের।