ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল্লাহ তা‘আলার নান্দনিক নাম ও গুণসমগ্র: কিছু আদর্শিক নীতিমালা ভূমিকা ইসলামহাউজ.কম
লেখকের ভূমিকা

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি। তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। তাঁর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। আমাদের নিজ নাফসের খারাবি এবং কর্মসমূহের মধ্যে যা অসাধু তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। যাকে আল্লাহ হিদায়েত দান করেন তাকে গোমরাহকারী কেউ নেই, আর যাকে তিনি গোমরাহ করেন তাকে হিদায়েতকারী কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি একক। তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি, তাঁর সাহাবীগণের প্রতি এবং যারা সততার সাথে তাঁদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাত বর্ষণ করুন এবং উত্তম শান্তিতে ভূষিত করুন।

এরপর কথা হলো, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি ঈমান আনা ঈমানের স্তম্ভসমূহের মধ্যে একটি। আর সে রুকনগুলো হচ্ছে, মহান আল্লাহর অস্তিত্বের ঈমান[1], তাঁর রুবুবিয়াত তথা প্রভুত্বের উপর ঈমান। তাঁর উলুহিয়াত তথা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে হবে সেটার উপর ঈমান এবং আসমা ওয়াস্ সিফাত তথা আল্লাহর যাবতীয় নাম ও গুণাবলীর উপর যথার্থ ঈমান।

নাম ও গুণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাকে অদ্বিতীয় মানা তাওহীদের তিন প্রকারের মধ্যে একটি। আর তা হচ্ছে, তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ (প্রভুত্বে একত্ব) তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ (ইবাদতের ক্ষেত্রে একত্ব) তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত (নাম ও গুণের ক্ষেত্রে একত্ব)।

[দ্বীনে ইসলামে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর জ্ঞান অর্জনের মর্যাদা]

দ্বীন ইসলামে তাওহীদে আসমা ওয়াস্ সিফাত তথা নাম ও গুণসমগ্রের ক্ষেত্রে তাওহীদের মর্যাদা অত্যন্ত উঁচু। এর গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে তা কোনো ব্যক্তিকেই পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার সুযোগ দেয় না, পক্ষান্তরে এর জ্ঞান থাকলে সে আল্লাহ তা‘আলাকে সুস্পষ্ট জ্ঞানসহ ইবাদত করতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমেই ডাক।” (সূরা আল আরাফ: ১৮০)

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাকে তাঁর নামের মাধ্যমে ডাকার যে কথাটি রয়েছে, এই ডাকা দুই প্রকার। একটি হলো আল্লাহ তা‘আলার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার জন্য ডাকা, অপরটি হলো এই নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার উদ্দেশে ডাকা।

চাওয়ার জন্য ডাকা

চাওয়ার জন্য ডাকার অর্থ হলো, আপনি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাওয়ার পূর্বে এমন নাম চয়ন করবেন যা আপনার প্রার্থিত বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। যেমন আপনি বলবেন, ‘হে ক্ষমাশীল আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, হে দয়াময় আপনি আমার প্রতি দয়া করুন, হে হিফাজতকারী আপনি আমাকে হিফাজত করুন, ইত্যাদি।

ইবাদতের উদ্দেশ্যে ডাকা

ইবাদতের উদ্দেশ্যে ডাকার অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহের যে দাবি রয়েছে সে দাবি অনুযায়ী আপনি আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবেন। অতএব আপনি তাওবা করবেন, কারণ আল্লাহ তা‘আলা হলেন অতি তাওবা কবুলকারী। আপনি জিহ্বা ব্যবহার করে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করবেন, কেননা তিনি সর্বশ্রোতা। আপনি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবেন; কারণ তিনি সর্বদ্রষ্টা। আপনি গোপনেও আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবেন; কারণ তিনি হলেন আল্-লাতীফ আল খাবীর অর্থাৎ অতিসূক্ষ্ণদর্শী ও সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত।

[এ গ্রন্থ রচনার মূল কারণ]

নাম ও গুণ বিষয়ক তাওহীদের এ মর্যাদার কারণে আর এ ব্যাপারে মানুষের, কখনো হক আবার কখনো অজ্ঞতা ও একঘেয়েমিবশত বাতিল, কথাবার্তার কারণে আমি এ ব্যাপারে কিছু নীতিমালা লিপিবদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। আল্লাহ তা‘আলার কাছে আমার প্রত্যাশা তিনি যেন আমার এ আমলকে একমাত্র তাঁর উদ্দেশেই ঐকান্তিকভাবে পেশ করার তাওফিক দান করেন। আমার এ কাজকে তাঁর সন্তুষ্টির অনুগামী বানান এবং তাঁর বান্দাদের জন্য উপকারী বানান। আমি এ গ্রন্থের নাম দিয়েছি:

القواعد المثلى في صفات الله تعالى وأسمائه الحسنى

(আল্লাহর গুণাবলি ও তাঁর নামসমূহের বিষয়ে চমৎকার নীতিমালা)লেখক

>
[1] আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়টির প্রমাণ অগণিত অসংখ্য। তবে সেটা প্রমাণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা কালাম শাস্ত্রবিদদের ব্যবহৃত নিয়মের সাথে অনেক সময়েই খাপ খায় না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য খালেদ আবদুল লতিফ মুহাম্মাদ নূর লিখিত মানহাজু আহলিস সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আত ওয়া মানহাজুল আশা‘য়েরা এবং আবদুর রহমান সালেহ আলে মাহমূদ রচিত মাওকাফু ইবনু তাইমিয়্যাহ মিনাল আশা‘য়েরা গ্রন্থদ্বয় দেখা যেতে পারে।