ভাল-মন্দ, বাঁচা-মরা, সন্তান দান, চাকুরী পাওয়া, জান্নাত প্রাপ্তি, গোনাহ মাফ, এইসব কিছু দেওয়ার একমাত্র মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। সেজন্য এই সব চাওয়া বা এ সম্পর্কে অন্য কারো কাছে দো‘আ করাকে আল-কুরআনে কঠোর ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে- মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ ﴾ [يونس: ١٠٦]
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা তোমার কোনো মঙ্গল বা অমঙ্গল করার ক্ষমতা রাখেনা তাদের কাছে কোনো কিছুর প্রার্থনা করবে না, যদি তুমি তা কর, তাহলে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।[1]
অন্যত্র বলা হয়েছে-
﴿وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ ﴾ [فاطر: ١٣]
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা অন্যের কাছে চায়, তারা তো খেজুরের বিচির উপরের পাতলা আবরণেরও মালিক নয়।[2]
সুতরাং সবকিছু দেওয়ার একচ্ছত্র মালিকই হচ্ছেন মহান আল্লাহ। তাকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে চাওয়া মূলত: তারই নির্ধারিত অধিকারে অন্যকে অহেতুক অংশীদার বানানো হয় বলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে কিছু চাওয়া, এমনকি কোনো নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চাওয়া বা দো‘আ করা জাজ্বল্য শির্ক। বর্ণিত হয়েছে:
روى الطبراني بإسناده إنه كان فى زمن رسول الله صلى الله عليه وسلم منافق يؤذي المؤمنين فقال بعضهم: قومو ا بنا نستغيث برسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا المنافق، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إنه لا يستغاث بى وإنما يستغاث بالله.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে একজন মুনাফিক মুমিনদেরকে কষ্ট দিত। কেউ কেউ বললেন, চলুন আমরা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে এই মুনাফিক হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ধরণের মুক্তি আমার থেকে চাওয়া উচিত নয়, বরং তা আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।[3]
আমাদের দেশে মৃতব্যক্তি, অলী, পীর, মুরুব্বী, খাজা, প্রমুখ ব্যক্তিদের কাছে চাওয়ার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, তা স্পষ্ট শির্কেরই অন্তর্ভুক্ত। কোনো কারো অসীলাহ দিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়াও শির্ক বলে গণ্য হয়। কেননা কোনো কিছু চাওয়ার নিয়ম যেমনটি কুরআনে বলা হয়েছে:
وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ [غافر: ٦٠]
‘‘এবং তোমাদের রব বলেছেন- আমার কাছে চাও, আমি তা দেব।’’[4]
সুতরাং বান্দা তার রবের কাছেই চাইবে। অন্য কারো অছিলায় চাওয়া মূলত: এ প্রসঙ্গে আল্লাহর একচ্ছত্র অধিকার যেমন খর্ব হয়, তেমনি অন্যকেও এ কাজে জড়িয়ে ফেলা হয়, সে জন্য এটি শির্কেই নামান্তর।
[2] . সূরা ফাতির: ১৩।
[3] . আত-তাবারানী শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে, ইবন তাইমিয়া, শায়খুল ইসলাম আহমাদ, প্রাগুক্ত, ১ খ, পৃ. ১০১।
[4] . সূরা মু’মিনুন: ১৩।