ইমাম আহমাদের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রতি তাদের একটা অপবাদ হলো, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাকে ওয়াজিব বলেছেন।

এ ব্যাপারে বারো ইমামী শিয়া বায়াযী বলেন, ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “কোন লোক ততক্ষণ পর্যন্ত সু্ন্নী হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর প্রতি সামান্যটুকু হলেও বিদ্বেষ পোষণ না করবে”[1] এবং সে দাবী করে যে, ‘মুসনাদে জাফর’ নামে একটা কিতাব আছে সে কিতাবে এ বর্ণনাটির উল্লেখ আছে।

এ অভিযোগের জবাব:

কোনো ব্যক্তি যদি আপনাকে অজ্ঞাতনামা কোনো কিতাবের রেফারেন্স দেয় তা ন্যায়সঙ্গত নয়। আর যে ব্যক্তি আপনাকে অস্তিত্বহীন কোনো কিতাবের রেফারেন্স দেয় তাহলে কি বলা যায়?! বায়াযী ইমাম আহমাদের নামে অভিযোগ দিতে গিয়ে যে কিতাবের রেফারেন্স দিল এ নামে কোনো কিতাবের অস্তিত্বই নেই।

তাছাড়া ইমাম আহমাদ সাহাবীদের ফযীলত বর্ণনা শীর্ষক কিতাবে ১৯৯ পৃষ্ঠা ব্যাপী শুধু আমীরুল মুমেনীন আলী ইবন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।

ইমামিয়া শিয়া নেতা নেয়ামতুল্লাহ্‌ জাযায়েরী ইমাম আহমাদের ব্যাপারে আরো বেশী কঠোর মন্তব্য করেছে। সে বলে, “ইমাম আহমাদের নির্বুদ্ধিতা:

ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল বর্ণনা করেন, যদি কোনো ব্যক্তি শপথ করে ‘আমি যদি আজ কোনো নির্বোধের সাথে কথা বলি তাহলে আমার স্ত্রী তালাক।’ এরপর সে যদি কোনো রাফেযীর সাথে কথা বলে তাহলে তার শপথ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ রাফেযীরা ইমাম আলী ‘আলাইহিস সালাম এর বিরোধিতা করে। যেহেতু তিনি (অর্থাৎ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আবু বকর ও উমরের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এ দুজন হচ্ছে জান্নাতের প্রৌঢ় ব্যক্তিদের সর্দার।’[2] আর রাফেযীরা এদুজনকে গালি দেয়।

আমি (নেয়ামতুল্লাহ্‌) বলব: যে ব্যক্তি এ হাদীস বর্ণনা করে ও বিশ্বাস করে সে-ই নির্বোধ। বরঞ্চ সঠিক বর্ণনা মতে, জান্নাতে কোনো প্রৌঢ়ত্ব থাকবে না, শুধু ইব্রাহীম খলীল ‘আলাইহিস সালাম ছাড়া। কিন্তু তাদের (সুন্নীদের) উদ্দেশ্য ছিল হাসান-হোসাইনের সাথে টক্কর লাগানো। যেহেতু তারা দুজন জান্নাতের যুবকদের নেতা। এটা করতে গিয়ে তারা অবচেতনভাবে স্ববিরোধিতার মধ্যে পড়েছে। আসলে নির্বোধ হচ্ছে সে ব্যক্তি যে বিধি-বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র সাথে টক্কর দিতে গিয়েছে, তার কুমতলব অনুযায়ী আমল করেছে এবং স্ত্রীহীন পুরুষের জন্য শ্মশ্রুবিহীন বালককে বিয়ে করা জায়েয বলেছে।”[3]

অনুরূপভাবে শিয়া নেতা ইলালুশ শারঈ কিতাবের গ্রন্থাকার বলেন, “আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইবন ফাযল ইবন মুহাম্মদ ইবন ইসহাক আলমুযাক্কার আন-নিসাপুরী আমাদেরকে নিসাপুরে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আব্দুর রহমান ইবন মুহাম্মদ ইবন মাহমুদকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: আমি ইব্রাহীম ইবন মুহাম্মদ ইবন সুফিয়ানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: ‘আলী ইবন আবী তালেব ‘আলাইহিস সালামের সাথে আহমাদ ইবন হাম্বলের শত্রুতার কারণ হলো, তার নানাকে আলী ইবন আবী তালেব নাহরাওয়ানের যুদ্ধের দিন হত্যা করেছিলেন। যে লোকটির দেহে মহিলার স্তনের মত মাংসের টুকরা ছিল এবং সে ছিল খারেজীদের নেতা।

আবু সাঈদ আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, ঠিক এই ঘটনাটি সে নিজ কানে ইব্রাহীম ইবন মুহাম্মদ ইবন সুফিয়ানের কাছ থেকেও শুনেছে।

আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইবন ফাযল আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আব্দুর রহমান ইবন মুহাম্মদ ইবন মাহমুদ বলেন আমি হেরাতের বিচারক মুহাম্মদ ইবন আহমাদ ইবন ইয়াকুব আলজুযযানীকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবন ফাওরাক আলহারাওয়ীকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন আমি আলী ইবন খাশরামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, একবার আমি আহমাদ ইবন হাম্বলের মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তখন আলী ‘আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে আলোচনা চলছিল। তখন তিনি (আহমাদ ইবন হাম্বল) বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো ব্যক্তি আলীর প্রতি সামান্যতম হলেও বিদ্বেষ পোষণ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। আলী ইবন খাশরাম বলেন তখন আমি বললাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো ব্যক্তি আলী ‘আলাইহিস সালামের প্রতি অধিক পরিমানে ভালোবাসা পোষণ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। অন্য এক বর্ণনায় আছে- আলী ইবন খাশরাম বলেন, তখন তারা আমাকে পিটিয়ে মজলিস থেকে বের করে দিল।হুসাইন ইবন ইয়াহইয়া আলবাজালী আমাদের কাছে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমাদের কাছে আমার পিতা ইবনে ‘আউনের মাধ্যমে আতা ইবন সায়েব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: উবাদাহ ইবন সামেত আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমার পিতা আমার দাদার কাছ থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, যদি তুমি দেখতে পাও যে, কোনো আনসারী সাহাবী আলী ইবন আবী তালেবের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছে তখন জেনে রাখ যে সে আগে ইয়াহূদী ছিল।”[4]

>
[1] দেখুন: ‘আসসিরাতুল মুসতাকীম’ (৩/২২৪)।

[2] হাদীসটি ইমাম তিরমিযি তার ‘জামে’ গ্রন্থে (৩৬৬৫), ইবনে মাজাহ্‌ তার সুনান গ্রন্থে (৯৫), আহমাদ তার মুসনাদ গ্রন্থে (৬০২) আলী ইবন আবী তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আর ইবনে হিব্বান (৬৯০৪) বর্ণনা করেন আবু জুহাইফা (রাঃ) থেকে।

[3] নেয়ামতুল্লাহ্‌ জাযায়েরীর ‘যাহরুর রাবী’ গ্রন্থের (পৃঃ ৫২৫), প্রথম সংস্করণ।

[4] সাদুকের ‘ইলালুশ শা-রাঈ’ (পৃঃ ১৭৮), মুআসসাতুল আলামীর প্রথম সংস্করণ (১০৪৮ হিঃ)।

এগুলো সম্পূর্ণরূপে বাজে বর্ণনা, এগুলোর কোনো জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ ইমাম আহমাদ আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বিরোধিতা করেন নি। আর উবাদা ইবন সামেতও এ ধরনের কোনো কথা বলেন নি। [সম্পাদক]