সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা‘আলার জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলদের শ্রেষ্ঠ, নবীদের সেরা, সত্যবাদী, আমানতদার মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ্‌র উপর। তেমনিভাবে নবীর পরিবার-পরিজন, তাঁর বংশধর ও সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাদের সকল অনুসারীরও উপর

এটা সুবিদিত যে, বিদ‘আতের উদ্ভব ঘটে অজ্ঞতার ছায়ার নীচে, নবীর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদর্শ থেকে দূরে সরে গেলে। আমাদের এ যুগে যে বিদ‘আতটির দুর্দান্ত প্রতাপ, প্রচণ্ড দাপট তা হল তথাকথিত বারো-ইমামের মতবাদে বিশ্বাসী শিয়াদের বিদ‘আত। এ গবেষণাধর্মী পুস্তিকাতে আমরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অর্ন্তভুক্ত চার মাযহাবের ইমাম ‘আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমাদ ইবন হাম্বল’ রাহিমাহুমুল্লাহ্‌র ব্যাপারে তথাকথিত বারো-ইমামের মতবাদে বিশ্বাসী শিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করব। যেহেতু মহান সাহাবীদের পরবর্তী স্তরে যেসব ব্যক্তিবর্গের প্রতি তথাকথিত বারো-ইমামের মতবাদে বিশ্বাসী শিয়াদের অপবাদ অত্যন্ত বেপরোয়া পর্যায়ের তারা হলেন এ চারজন ইমাম। যে চার ইমামের প্রশংসায় চার দিগন্ত মুখরিত, যাদের ইলম গোটা পৃথিবীময় প্রসারিত। যারা আল্লাহ্‌র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্‌ থেকে উৎসারিত ফিকহী মতগুলো আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন। যুগের পর যুগ যাদেরকে অনুসরণ করেছেন অসংখ্য ইলমী মতাদর্শের অনুসারীরা। যারা আমাদের জন্য রেখে গেছেন এক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার। যে জ্ঞানের ভিত্তি পত্তন করেছেন কুরআন-সুন্নাহ্‌ ও সাহাবায়ে কেরামের ফিকহ থেকে তারা যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছেন তার আলোকে। ইমাম আবু হানীফার রাহিমাহুল্লাহ কথাই ধরা যাক না, তিনি ইরাকে ইবনে মাসউদের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ফিকহী দর্শন রেখে যান। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ তিনি মদীনার আলেমদের ইলমী দর্শন রেখে যান। যাদেরকে খেতাব দিতে গিয়ে বলা হয় ‘ইসলামের আকর’ এবং ‘শ্রেষ্ঠ মানবের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবেশী’।

এই রিসার্চ পেপারে আমরা এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, বারো-ইমামিয়াদের মতবাদটা পঞ্চম কোনো ফিকহী মাযহাব নয়। কেউ যেন তা ভেবে ভুল না করে। বরং আমরা বলব সুন্নী চার ইমামের সকলে ইসলামের মূল দর্শনে (আকীদা-বিশ্বাসে) সম্পূর্ণ একমত এবং রাফেযীরা (বার-ইমামের অনুসারীরা) যে বিদআতী- এ ব্যাপারেও তারা সকলে একমত।

প্রিয় পাঠক, আমি এ পুস্তিকাতে সুন্নী মাযহাবের চারজন ইমাম আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমাদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুমুল্লাহ্‌র ব্যাপারে তথাকথিত বারো-ইমামের অনুসারী শিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি উদঘাটনে গবেষণা চালিয়েছি। এ বিষয়ে আমি এখনও গবেষণা করে যাচ্ছি। এ গবেষণা করতে গিয়ে আমি বিভিন্ন পাবলিক লাইব্রেরী এবং ব্যক্তিগত পাঠাগারগুলোর শরনাপন্ন হয়েছি। এমনকি তথাকথিত বারো-ইমামের মতবাদে বিশ্বাসী কিছু বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকেও আমি এমন কিছু রেফারেন্স গ্রন্থের তথ্য পেয়েছি যে বইগুলোতে এই ইমামদের প্রতি এই ফেরকার লোকদের চরম শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তথ্যসূত্রের কোনোপ্রকার বাছ-বিচার না করে তারা হরদম একে অপরের কাছ থেকে সেসব বিদ্বেষপূর্ণ বর্ণনাগুলোর উদ্বৃতি দিয়ে থাকে। তাদের অনেকের সাথে আলাপচারিতা ও সংলাপের পর আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, এসব পুস্তকে যেসব অপবাদ ও কটূক্তি রয়েছে তাদের অনেকে সেসব মনোভাব পোষণ করে। যদিও প্রথম দিকে তাদের কেউ কেউ এই বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইত যে, তাদের ইমামদের পক্ষ থেকে যেসব নিন্দাবাদ ও তিরস্কার রয়েছে তা শুধু “ওহাবী মতবাদ” এর বিরুদ্ধে; তারা সুন্নীদের চার ইমামকে এবং তাদের ছাত্রদেরকে সম্মান করে!!

এরপর আমার একীন বা দৃঢ় বিশ্বাস হলো, আসলে তথ্য-উপাত্ত ছাড়া এদের অনেকের সাথে আলোচনা করে লাভ নেই। প্রত্যেক ন্যায়বান ব্যক্তিই জানেন- সুন্নী এই চারটি মাযহাবের জন্ম হিজরী দ্বিতীয় শতকে। আর শায়খুল ইসলাম মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওহ্হাবের[1] বহিঃপ্রকাশ ঘটে হিজরী ত্রয়োদশ শতকে!!

তারপর আমি দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল করে এই পুস্তিকা লেখার জন্য ইসতিখারা করলাম। এই পুস্তিকা সম্পূর্ণ গবেষণালব্ধ এবং যুক্তিপ্রমাণ নির্ভর। আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে এই দো‘আই করি তিনি যেন প্রতিটি ভ্রান্ত পথের যাত্রীকে সঠিক পথ দেখান।

আর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ), তার পরিবার-পরিজন, তার সাহাবীদের উপর।

লেখক

খালেদ ইবন আহমাদ আযযাহরানী

মুহাররাম ১৪২৭ হিঃ


>

“আল ইমাম মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওহ্হাব ওয়া আয়িম্মাতুদ্‌ দাওয়া আননাজদিয়া ওয়া মাওকিফুহুম মিন আ-লিল বাইত (আঃ)” এই শিরোনামে আমার একটি কিতাব প্রকাশিত হয়েছে। সে কিতাবে আমি বর্ণনা করেছি যে, আহলে বাইতের সদস্যদেরকে সম্মান দেওয়া ও তাদেরকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে নাজদী আলেমদের তুলনা হয় না।