জাহেলী যুগের ঐ সব মুর্খ ব্যক্তি এবং বর্তমান যুগে যারা মৃত ওলী, সৎকর্মশীল অথবা অনুপস্থিত লোকদের কাছে প্রার্থনা করে তাদের মধ্যে পাথর্ক্য কি?

আরবের জাহেলী যুগের লোক যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে যুদ্ধ করেছেন তাদের উপর্যুক্ত অবস্থা বর্ণনা করার পর বর্তমানে বহু মুসলিম সন্তানদের মধ্যে যা বাস্তবে প্রচলিত রয়েছে তাদের ব্যাপারে এ প্রশ্নের অবতারণা হয় যে,

(জাহেলী যুগের ঐ সব মুর্খ ব্যক্তি এবং বর্তমান যুগে যারা মৃত ওলী, সৎকর্মশীল অথবা অনুপস্থিত লোকদের কাছে প্রার্থনা করে তাদের মধ্যে পাথর্ক্য কি?)

উত্তর: নিশ্চয় এখানে কোনো পার্থক্য নেই। আর তা বিভিন্ন দিক থেকে সাব্যস্ত হতে পারে:

প্রথমত: তারা বিশ্বাস করত না যে, আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদেরকে ডাকছে আল্লাহর রাজত্ব থেকে তারা কোনো কিছুর মালিক নন, অনুরূপভাবে বর্তমান যুগেও যারা ওলীগণ ও সৎকর্মশীলগণের কবরে যায় এবং তাদের কাছে দো‘আ করে তারা একই বিশ্বাস পোষণ করে থাকে হুসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, আব্দুল কাদের জিলানী ও সাইয়্যেদ বাদাওয়ী রহ. ও অন্যান্য সালেহীনগণের ব্যাপারে।

দ্বিতীয়ত: নিশ্চয় জাহেলী যুগের কাফিররা বিশ্বাস করত যে, ঐ সব মৃত নেককার ব্যক্তিবর্গের আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদা রয়েছে, ফলে তারা তাদের প্রয়োজনসমূহ আল্লাহর নিকট উত্থাপন করবে, এ ধারণায় যে নিশ্চয় তারা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। তা সত্বেও আমাদের রব মহান আল্লাহ তাদের এই বক্তব্যকে কুফুরী সাব্যস্ত করেছেন,

যদিও তারা বলতো,

هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ [يونس: ١٨]

“এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।” [সূরা ইউনুছ, আয়াত: ১৮] তারা আরও বলতো,

مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ [الزمر: ٣]

“আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে

সুপারিশ করে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]

আর অনুরূপভাবে বর্তমান যুগে কবরে গমণকারীরা একই বিশ্বাস পোষণ করে থাকে তাদের নেতা ও ওলীগণের ব্যাপারে।

আর দো‘আ ইবাদাতের অংশ, যখন আল্লাহ তা‘আলা দো‘আকে ইবাদাতের অংশ হিসাবে নামকরণ করেছেন, তিনি বলেন,

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠]

“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কারবশতঃ আল্লাহর ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সূরা গাফির, আযাত: ৬০]

সুতরাং এখানে আল্লাহ তা‘আলা দো‘আকে ইবাদত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য আরো স্পষ্টভাবে এসেছে, ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজাহ, ইবন আবি হাতেম, ইবন জারীর ও হাকেম রহ. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إن الدعاء هو العبادة»

“নিশ্চয় দো‘আ হলো ইবাদত।”

ইমাম আহমদ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«من لم يدع الله عز وجل يغضب عليه»[1]

“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকে না তিনি তাঁর ওপর রাগান্বিত হন।”

>
[1] ইমাম আহমদ, (২/৩২৪) আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীসটি হাসান ও সহীহ, দেখুন, সহীহ ইবনে মাজাহ (২/৩২৪)