বিবরণ: মানব দেহের অন্যতম প্রধান কাজটি করে থাকে কিডনী। বিষ, অন্যান্য তরল পদার্থ এবং অতিরিক্ত লবণ থেকে শরীরের রক্ত পরিশোধনের কাজটি সে করে থাকে। কিডনীর ক্রিয়া অকেজো হয়ে গেলে যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে কিডনী ধোয়ার ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে তা অত্যন্ত মারাত্মক এবং জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। ডায়ালাইসিস-এর প্রকারের মধ্যে হেমো-ডায়ালাইসিস অন্যতম। এক্ষণে, সাওমে এর কোনো প্রভাব আছে কি?
হুকুম: দুইভাবে কিডনী ডায়ালাইসিস করা হয়:
১. হেমো-ডায়ালাইসিস: এই পদ্ধতিতে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে কিডনী ডায়ালাইসিস করা হয়। এক্ষেত্রে শরীরের রক্ত নিয়ে বিশেষ ঐ যন্ত্রে দেওয়া হয় এবং যন্ত্র ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে রক্ত পরিশোধন করে শিরা দিয়ে আবার তা শরীরে ফিরিয়ে দেয়। এই পদ্ধতিতে কখনও কখনও শিরা দিয়ে খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ বিশেষ তরল পদার্থ দেওয়ার প্রয়োজনও পড়ে।
২. পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (Peritoneal Dialysis): আগত মাসআলায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
বর্তমান যুগের ওলামায়ে কেরাম হেমো-ডায়ালাইসিস সাওমের বিশুদ্ধতায় প্রভাব ফেলবে কিনা সে বিষয়ে দুই ধরণের বক্তব্য পেশ করেছেন:
প্রথম মত: অধিকাংশ আলেমের মতে, হেমো-ডায়ালাইসিস সাওম নষ্ট করে দিবে। সঊদী আরবের ‘আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়া ওয়াল-ইফতা’ও এই ফাতওয়া দিয়েছে।
কেননা হেমো-ডায়ালাইসিস করতে গেলে রোগীকে বিভিন্ন ধরণের ঔষধ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেমন, ব্লাড থিনার বা রক্ত পাতলা করার ঔষধ, হরমোন, ভিটামিন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, কার্বোহাইড্রেট। নিঃসন্দেহে এসব পদার্থ সাওমে প্রভাব ফেলে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ডায়ালাইসিস শরীরে পরিচ্ছন্ন রক্ত সমৃদ্ধ করে। আবার কখনও রক্তের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্য উপাদানও যোগান দেয়। এটিও সাওম ভঙ্গ করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ডায়ালাইসিস করলে একই সাথে দু’টি সাওম ভঙ্গকারী বিষয় যুক্ত হয়।
দ্বিতীয় মত: বর্তমান যুগের কোনো কোনো আলেমের মতে, হেমো-ডায়ালাইসিস সাওম নষ্ট করবে না। কেননা হেমো-ডায়ালাইসিস ইনজেকশনের মতই; এটি খাদ্যও নয়, আবার পানীয়ও নয়, বরং এর মাধ্যমে পেনিটোরিয়াম (Peritoneum) বা পেটের অন্ত্রচ্ছদে ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং ক্ষণিক পরে তা আবার বের করে নেওয়া হয়, অথবা ডায়ালাইসিস যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত নেওয়া হয় এবং পরিশোধন করে তা আবার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।