বিবরণ: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান চরম উৎকর্ষ সাধনের ফলে বর্তমান এমন এক ধরণের চিকিৎসা সরঞ্জাম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা মুখ, গলনালী, অতঃপর খাদ্যনালী দিয়ে পাকস্থলী পর্যন্ত প্রবেশ করে। এর মাধ্যমে পাকস্থলীর ঘা ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য পাকস্থলীর ভেতরের ছবি তোলা হয়, অথবা পরীক্ষার জন্য পাকস্থলী থেকে ছোট্ট নমুনা বের করা হয়। এক্ষণে, রামাযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য এই যন্ত্র ব্যবহারের হুকুম কী?
হুকুম: পাকস্থলীতে যে কোনো কিছু প্রবেশ করলেই কি সাওম ভেঙ্গে যাবে নাকি খাদ্য প্রবেশ শর্ত? ওলামায়ে কেরাম এই মাসআলায় দ্বিমত পোষণ করেছেন:
প্রথম মত: অধিকাংশের মতে, পেটে যা কিছুই প্রবেশ করুক না কেন তা সাওম ভঙ্গ করবে। এমনকি কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এক টুকরা লোহা, বা কঙ্কর বা অন্য কিছু গিলে ফেলে, তাহলে তার সাওমও ভেঙ্গে যাবে। তবে হানাফী আলেমগণ শর্তারোপ করেছেন যে, ঐ জিনিসটা সম্পূর্ণরূপে পেটের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। অর্থাৎ যদি তার কিছু অংশ বাইরে থেকে যায় বা বাইরের কোনো কিছুর সাথে তা সম্পর্কিত থাকে, তাহলে সাওম ভাঙ্গবে না।
তাদের দলীল হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালনকারীকে সুরমা পরিহার করতে বলেছেন[1]। অবশ্য ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না”।[2] উক্ত হাদীসের আলোকে তারা বলছেন, সুরমায় কোনো খাদ্য উপাদান নেই। অতএব, সাওম ভঙ্গের জন্য পেটে প্রবেশকারী জিনিসটাকে খাদ্য হওয়া শর্ত নয়।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
»إِنَّمَا الْفِطْرُ مِمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِمَّا خَرَجَ»
“যা প্রবেশ করে, তার কারণে সাওম ভঙ্গ হয়; যা বের হয়, তার কারণে নয়”।[3] ইমাম বুখারী রহ. ‘মু‘আল্লাক্ব’ হিসাবে, তবে ‘নিশ্চিত শব্দ’ (صِيْغَةُ الْجَزْمِ) ব্যবহার করে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন[4]।
তাঁরা আরো বলেন, পেটে প্রবেশ করে এমন সব কিছু থেকে বিরত থাকার নাম সাওম। কিন্তু যে ঐ যন্ত্র ব্যবহার করল, সে সব কিছু থেকে বিরত থাকল না।
অতএব, অধিকাংশের মতানুসারে, গ্যাস্ট্রোস্কোপ সাওম ভঙ্গ করবে; কিন্তু হানাফীদের শর্তানুসারে, তা সাওম ভঙ্গ করবে না। কেননা বাইরের কোনো কিছুর সাথে তা সম্পর্কিত থাকে।
দ্বিতীয় মত: কারো কারো মতে, খাদ্য, পানীয় বা এ জাতীয় কোনো কিছু ছাড়া ভিন্ন কিছু পাকস্থলীতে গেলে তা সাওম ভঙ্গ করবে না। কেননা কুরআন-হাদীসে খাদ্য ও পানীয় বলতে মানুষের স্বাভাবিক প্রসিদ্ধ খাদ্য ও পানীয়কে বুঝানো হয়েছে। খাদ্য ও পানীয় বলতে নিশ্চয় কঙ্কর, কয়েন ইত্যাদিকে বুঝানো হয় নি।
তবে তারা শর্তারোপ করেছেন যে, গ্যাস্ট্রোস্কোপ-এর সঙ্গে যেন কোনো প্রকার তরল বা তৈলাক্ত পদার্থ ভেতরে না যায়। যদি যায়, তাহলে ঐ পদার্থের কারণে সাওম ভঙ্গ হবে; গ্যাস্ট্রোস্কোপ-এর কারণে নয়। শাইখুল ইসলাম ইবন তায়মিয়্যাহ ও শাইখ মুহাম্মাদ উসাইমীন রহ. এই মতের পক্ষাবলম্বন করেছেন।
[2] জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৭২৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[3] বায়হাকী, সুনান কুবরা, ৪/২৬১।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৭।