সৌভাগ্য ও সফলতার অন্যতম আলামত হলো, বান্দার জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাবে তার বিনয় ও দয়া তত বৃদ্ধি পাবে। আবার তার আমল যত বৃদ্ধি পাবে তার ভয় ও সতর্কতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। তার বয়স যত বৃদ্ধি পাবে তার বেঁচে থাকার আগ্রহও তত কমে যাবে, তার সম্পদ যত বেশি হবে তার বদান্যতা ও ব্যয়ও তত বেশি হবে, তার ক্ষমতা ও সুনাম-সুখ্যাতি যত বৃদ্ধি পাবে মানুষের নৈকট্য লাভ, তাদের অভাব-অভিযোগ পূরণ এবং তাদের কাছে বিনয় প্রকাশও তত বৃদ্ধি পাবে।
অন্যদিকে দুর্ভাগ্য ও হতভাগ্যের আলামত হচ্ছে, বান্দার জ্ঞান যখন বৃদ্ধি পাবে তখন তার অহংকার ও দাম্ভিকতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে, আবার তার আমল বেশি হলে তার গর্ববোধও বেড়ে যায়, অন্য মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এবং নিজে নিজেকে অনেক ভালো মনে করে। তার বয়স বৃদ্ধি পেলে আরো বাঁচতে আশা করে, সম্পদ বেশি হলে কৃপণতা ও সম্পদ মুঠো করে রাখার প্রবণতাও বেড়ে যাবে, তার ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সুনাম-সুখ্যাতি যত বৃদ্ধি পাবে তার অহংকার ও দাম্ভিকতাও তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।
এসব বিষয় আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ, তিনি বান্দাকে এ পরীক্ষা দ্বারা যাচাই বাছাই করে থাকেন। একদল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সফলকাম হয় আরেকদল ফেল করে দুর্ভাগা হয়।
এমনিভাবে মান-সম্মান পাওয়াও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। যেমন, রাজত্ব, ক্ষমতা, ধন-সম্পদ ইত্যাদি প্রাপ্ত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সুলাইমান ‘আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে বলেন, তিনি যখন বিলকিসের রাজ সিংহাসন তার দরবারে দেখলেন তখন তিনি বলেছিলেন,
﴿هَذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ﴾ [النمل: 40]
“এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।” [সূরা আন-নামাল, আয়াত: ৪০]
সুতরাং নি‘আমত আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরণের বালা-মুসিবত ও পরীক্ষা, এতে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ তা প্রকাশ পায়। এমনিভাবে বিপদে-আপদে পতিত হওয়াও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, তিনি নি‘আমত দান করে পরীক্ষা করেন আবার বালা-মুসিবত দিয়েও পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَأَمَّا ٱلۡإِنسَٰنُ إِذَا مَا ٱبۡتَلَىٰهُ رَبُّهُۥ فَأَكۡرَمَهُۥ وَنَعَّمَهُۥ فَيَقُولُ رَبِّيٓ أَكۡرَمَنِ١٥ وَأَمَّآ إِذَا مَا ٱبۡتَلَىٰهُ فَقَدَرَ عَلَيۡهِ رِزۡقَهُۥ فَيَقُولُ رَبِّيٓ أَهَٰنَنِ١٦ كَلَّا......﴾ [الفجر: ١٥، ١٧]
“আর মানুষ তো এমন যে, যখন তার রব তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তাকে সম্মান দান করেন এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার ওপর তার রিযিককে সঙ্কুচিত করে দেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন। কখনো নয়.....।” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ১৫-১৭] অর্থাৎ আমি যাকে প্রশস্ততা দান করেছি, সম্মানিত করেছি ও নি‘আমত প্রদান করেছি তা সর্বদা তার জন্য সম্মান নয়; এমনিভাবে আবার যাকে আমি রিযিকে সঙ্কুচিত করেছি ও পরীক্ষা করেছি তা তাকে অসম্মান করার জন্য নয়।