পরিচ্ছেদ: আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় সৃষ্টি

বান্দার প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার কতিপয় আদেশ রয়েছে, যা করতে তিনি আদেশ দিয়েছেন, তাদের প্রতি তাঁর ফয়সালা রয়েছে যা তিনি তাদের ওপর ফয়সালা করেন, আবার তাদের প্রতি তাঁর অপরিসীম নি‘আমত রয়েছে যা তিনি তাদেরকে দান করেছেন। বান্দার প্রতি এ তিন ধরণের কাজ তিনি সরিয়ে নেন না।

আল্লাহর কাযা তথা ফয়সালা দু’প্রকার। বালা-মুসীবতে ও দোষ-ত্রুটিতে তাঁর ফয়সালা।

উপরোক্ত প্রত্যেকটি স্তরে বান্দার ওপর আল্লাহর ইবাদত করা অত্যাবশ্যকীয়। অতএব, আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা সে ব্যক্তি যে এ তিন স্তরে আল্লাহর উবুদিয়্যাত জানতে পেরেছে এবং সেগুলোর হক আদায় করেছে। সে বান্দাই আল্লাহর কাছে অধিক নিকটবর্তী এবং উক্ত তিন স্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর উবুদিয়্যাত সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় ইলম ও আমল নষ্ট করে ফেলে সে ব্যক্তি আল্লাহর থেকে সর্বাধিক দূরে।

আল্লাহর আদেশের উবুদিয়্যাত হলো তাঁর আদেশসমূহ ইখলাসের সাথে পালন করা এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদ্ধতি অনুসরণ করা। আর আল্লাহর নিষেধের ক্ষেত্রে উবুদিয়্যাত হলো তাঁর ভয়, সম্মান ও ভালোবাসায় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা।

বালা-মুসিবতের ফয়সালায় তাঁর উবুদিয়্যাত হলো, এসব বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করা, অতঃপর এতে সন্তুষ্ট থাকা, এটি ধৈর্যের উপরের স্তর, অতঃপর তাঁর শুকরিয়া আদায় করা, আর এটি সন্তুষ্টির উপরের স্তর।

দোষ-ত্রুটি ও অন্যায় কাজে পতিত হলে এমতাবস্থায় তাঁর উবুদিয়্যাত হলো, সাথে সাথে তাওবা করা, সে কাজটি পরিহার করা, তাঁর দুয়ারে ক্ষমা চাওয়া ও ভেঙ্গে পড়া। এ বিশ্বাস করা যে, তিনি ব্যতীত কেউ ক্ষমা করতে পারবে না, অন্যায় কাজ থেকে তিনি ব্যতীত কেউ রক্ষা করতে পারবে না, সে যদি এ অন্যায় কাজ করতে থাকে তাহলে সে তাঁর নৈকট্য থেকে দূরে সরে যাবে এবং তিনি তাকে তাঁর দরজা থেকে তাড়িয়ে দিবেন। ফলে সে নিজেকে নিরুপায় মনে করে যে, এ বিপদ থেকে তিনি ব্যতীত কেউ উদ্ধার করতে পারবে না; এমনকি সে এ সমস্যাকে শারীরিক সমস্যার চেয়েও বেশি মারাত্মক মনে করে।

নি‘আমত লাভের সময় উবুদিয়্যাত হলো, প্রথমত উক্ত নি‘আমতকে চেনা ও এর স্বীকৃতি দেওয়া, অতঃপর তিনি ব্যতীত অন্য কারো দিকে এ নি‘আমতের সম্পৃক্ততা ও মালিকানা তার অন্তরে যাতে না হয় সে জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া; যদিও কোনো কারণ বা উপকরণ কারো কাছ থেকে আসে, সে ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি নি‘আমতটির শুধু কারণ ও উসিলা মাত্র। কেননা সমস্ত নি‘আমত সর্বদিক বিবেচনায় একমাত্র মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। অত:পর, এ নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করা এবং এ নি‘আমতের কারণে তাঁকে ভালোবাসা। তাঁর শুকরিয়া হলো তাঁর আনুগত্য করা।

নি‘আমত লাভের দ্বারা বান্দার ইবাদতের সূক্ষ্ম দিক হলো, অল্প নি‘আমত লাভ করলেও সেটিকে বেশি মনে করা, আর অধিক শুকরিয়াকে অল্প শুকরিয়া মনে করা, দৃঢ়ভাবে জানা যে, এ নি‘আমত তার মালিলেক পক্ষ থেকে, কোনো পারিশ্রমিক বা বিনিময়ে নয়, এটি প্রাপ্ত হওয়ার তার কোনো উসিলা ছিল না, সে এটি প্রাপ্যও ছিল না, এটি মূলতঃ আল্লাহরই, বান্দার জন্য নয়। নিজে তাঁর কাছে ভেঙ্গে পড়লে, বিনয়ী, নম্র ও নি‘আমতদানকারীকে ভালোবাসলে তার নি‘আমত আরও বৃদ্ধি পায়। যখনই নতুন নতুন নি‘আমত লাভ করবে তখনই বেশি বেশি উবুদিয়্যাত, ভালোবাসা, বিনয় ও নম্রতা দেখাবে। আর যখন তিনি নি‘আমত নিয়ে নিবেন তখন সন্তুষ্ট থাকবে। আবার যখনই গুনাহ করবে সাথে সাথে তাওবা করবে, হাতজোড় করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে। এ ধরণের বান্দাই হলো বুদ্ধিমান বান্দা। আর যে এ কাজ করতে অক্ষম হবে সে আল্লাহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আল্লাহই তাওফীকদাতা।