আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ٢١٦﴾ [البقرة: ٢١٦]
“তোমাদের ওপর লড়াইয়ের বিধান দেওয়া হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় এবং হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১৬]
﴿فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا١٩﴾ [النساء: ١٩]
“আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
প্রথম আয়াতটি জিহাদ সম্পর্কে। এতে রয়েছে মানুষের চরম ক্রোধশক্তি। আর দ্বিতীয় আয়াতটি বিবাহ সম্পর্কে। এতে রয়েছে মানুষের পরিপূর্ণ প্রবৃত্তিশক্তি।
বান্দা তার পূর্ণাঙ্গ ক্রোধশক্তি সহকারে জীবনের ভয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে অপছন্দ করে, অথচ তার এ অপছন্দ তার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর। সে জিহাদ না করে নিজের জীবন বাচাঁতে চায় ও জিহাদ পরিত্যাগ করতে চায়, অথচ তার এ প্রিয়তা তার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য অকল্যাণকর।
এমনিভাবে নারীর কোনো দোষের কারণে ব্যক্তি তাকে অপছন্দ করে; অথচ তাকে তালাক না দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখলে এতে তার জন্য এমন সব কল্যাণ রয়েছে যা সে জানে না। আবার নারীর কোনো গুণের কারণে তাকে ভালোবাসে; অথচ তাকে স্ত্রী হিসেবে রেখে দেওয়াতে এমন সব অকল্যাণ রয়েছে যা সে অবগত নয়।
অতএব, মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী মানুষ অধিক যালিম ও জাহেল (অত্যন্ত যুলুমকারী ও অজ্ঞ)। তাই তার ভালো-মন্দ, উপকার-ক্ষতির মাফকাঠি তার মনের টান, ভালোবাসা, অপছন্দ ও ঘৃণা ইত্যাদি হতে পারে না; রবং তার মহান আল্লাহ তার জন্য যা পছন্দ করেছেন সেসব আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকাই তার ভালো-মন্দের মাফকাঠি।
সুতরাং সার্বিকভাবে মানুষের জন্য সর্বাধিক উপকারী জিনিস হলো প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সর্বাবস্থায় তার রবের আনুগত্য করা। আর তার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে তার রবের নাফরমানী করা। বান্দা যখন একনিষ্ঠার সাথে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করবে তখন তার অপছন্দনীয় জিনিসগুলোও তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর যখন সে আনুগত্য ও ইবাদতশূন্য হবে তখন তার প্রিয় জিনিসগুলোও তার জন্য অকল্যাণকর হবে। যে ব্যক্তির তার রবের জ্ঞান, তার নামসমূহ ও সিফাতসমূহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জিত হবে তখন সে দৃঢ়ভাবে জানবে যে, যেকোনো অকল্যাণই তাকে স্পর্শ করুক এবং যেসব পরীক্ষায় সে পতিত হোক তা সবকিছুই তার কল্যাণ ও উপকারের জন্যই, এ সম্পর্কে তার জ্ঞান ও জানা নেই; বরং বান্দা যা কিছু ভালোবাসে তার চেয়ে সে যা কিছু অপছন্দ করে তাতেই তার অধিক কল্যাণ নিহিত।
অতএব, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ যা কিছু অপছন্দ করে তাতেই তার কল্যাণ নিহিত। এমনিভাবে অধিকাংশ অকল্যাণ ও ধ্বংসের উপকরণ তার পছন্দনীয় জিনিসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।
তাই আহকামুল হাকেমীন তথা সমস্ত বিজ্ঞের বিজ্ঞ, আরহামুর রাহেমীন তথা সমস্ত দয়াময়ের মহাদয়াময় ও সৃষ্টিকুল সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই বান্দার প্রতি তার নিজের ও বাবা-মায়ের চেয়ে সর্বাধিক দয়াশীল। তিনি বান্দার ওপর কোনো বিপদ-আপদ নাযিল করলে তা তার ওপর নাযিল না করার চেয়ে অধিক কল্যাণকর। যেহেতু তিনি তার ওপর অধিক দেখ-ভাল, দয়া ও মমতা করেন। তিনি যদি তাদের ভালো-মন্দ তাদের পছন্দের ওপর ছেড়ে দিতেন তাহলে তারা তাদের জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও আমলের দিক থেকে কোনটি তাদের জন্য অধিকতর উপযোগী ও কল্যাণকর তা নির্ধারণে অক্ষম হতো। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা স্বীয় ইলম, হিকমত ও রহমতে তাদের পরিচালনার দায়িত্বভার তিনি নিজেই গ্রহণ করেছেন। এতে তারা তা পছন্দ করুক আর না-ই পছন্দ করুক। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীগণ তাঁর সম্পর্কে, তাঁর নামসমূহ ও সিফাতসমূহ সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জানেন। ফলে তারা তাঁর হিকমতের ব্যাপারে অপবাদ দেন না। অন্যদিকে মূর্খদের কাছে আল্লাহর সঠিক জ্ঞান, তাঁর নামসমূহ ও সিফাতসমূহ অজানা থাকায় তারা তাঁর পরিচালনার ব্যাপারে বাদানুবাদ ও ঝগড়া করেন এবং তাঁর হিকমতের ব্যাপারে অপবাদ দেন। তারা তাঁর হুকুমে আত্মসমর্পন করেন না, তাঁর হুকুমকে তাদের ভ্রান্ত জ্ঞান, বাতিল মতবাদ ও অন্যায় রাজনীতির সামনে বিরোধপূর্ণ মনে করেন। ফলে তারা তাদের রবকে চিনতে পারে নি এবং তাদের কল্যাণও অর্জিত হয় নি। আল্লাহই তাওফীকদাতা।