মৃত্যুর সময় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা গুনাহখাতা মাফ হওয়া ও পাপ বিনষ্ট হওয়ার বিরাট প্রভাব রয়েছে। কেননা এটি দৃঢ় বিশ্বাসী বান্দার সাক্ষ্য, যিনি এ কালেমার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝেন। এমন অবস্থায় তিনি এ কালেমার উচ্চারণ করলেন যখন তার প্রবৃত্তি মরে গেছে, তার অবাধ্য আত্মা বিনম্র হয়ে গেছে, অস্বীকার ও বিরোধিতার পরে বশীভূত হয়েছে, বিমুখ হওয়ার পরে এগিয়ে এসেছে, নিজেকে সম্মানিত ভাবার পরে অপদস্থ হয়েছে। সে আত্মা থেকে দুনিয়ার লোভ-লালসা ও দুনিয়া প্রাপ্তির প্রত্যাশা মিটে গিয়েছে, তার রব, সৃষ্টিকর্তা ও সত্যিকারের মাওলার সামনে নিজেকে নগণ্য ও ছোট মনে করেছে, তাঁর অনুগ্রহ, মাগফিরাত ও রহমতের সবচেয়ে বেশি আশা করেছে। সে আত্মা শির্কের যাবতীয় উপায়-উপকরণমুক্ত হয়ে ও শির্ককে বাতিল সাব্যস্ত করে তাওহীদকে নিরঙ্কুশ ও নির্ভেজাল করেছে। ফলে সে অন্তর এসব বিতর্কিত জিনিস থেকে ঝামেলামুক্ত হয়েছে। তখন তার অন্তরে সমস্ত চিন্তা-চেতনা যোগ হয়েছে আল্লাহর কাছে চলে যাওয়া ও তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করার। ফলে বান্দা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে মনোনিবেশ করেছে। তার অন্তর, রূহ ও চিন্তা-ভাবনা সব কিছু নিয়ে আল্লাহর সমীপে আগমন করেছে, সে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তার গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে।
বান্দার কালেমা শাহাদাহ যদি সুস্থ থাকাবস্থায় এভাবে অর্জিত হতো তবে সে দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছু থেকে বিমুখ হতো, মানুষ থেকে পালিয়ে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করত এবং অন্য সব কিছু থেকে আলাদা হয়ে আল্লাহর সাহচর্যের প্রতি ধাবিত হতো; কিন্তু (ইতোপূর্বে সুস্থ অবস্থায়) সে তো প্রবৃত্তি, দুনিয়ার ভালোবাসা ও এর উপকরণ বোঝাইকৃত অন্তর দ্বারা কালেমা শাহাদাহ উচ্চারণ করেছে, তার অন্তর দুনিয়া অন্বেষণে পরিপূর্ণ ছিল এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে প্রার্থনাকারী ছিল। অতএব, মৃত্যুর সময় যেভাবে বান্দার অন্তর সবকিছু থেকে খালি হয় পূর্বে (সুস্থাবস্থায়) যদি সেভাবে খালি হতো, তাহলে তার অন্তরের জন্য ভিন্ন সংবাদ (জান্নাতের সুসংবাদ) থাকতো, তার জীবন হতো পশুর জীবনের চেয়ে ভিন্নতর। আল্লাহ একমাত্র সাহায্যকারী।