তুমি আল-কুরআনের সম্বোধনের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করলে এমন একজন রাজাধিরাজ পাবে যিনি সবকিছুর মালিক, তাঁর জন্যই সমস্ত প্রশংসা, সব কিছুর লাগাম (পরিচালনার রশি) তাঁরই হাতে, সবকিছুর মূল তাঁরই থেকে, তাঁর কাছেই সবকিছু ফিরে যাবে, তাঁর মালিকানায় কোনো কিছুই গোপন থাকে না, বান্দার অন্তরের খবর তিনি জ্ঞাত, তাদের গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি অবগত, তাঁর সম্রাজ্য পরিচালনায় তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তিনি সবকিছু শুনেন, দেখেন, দান করেন, আবার কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকেন, সৎকাজের বিনিময় সাওয়াব দান করেন, অন্যায়ের কারণে শাস্তি প্রদান করেন, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, আবার যাকে খুশি অপমানিত করেন, তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেন, রিযিক দান করেন, জীবিত করেন, মৃত্যু দান করেন, সবকিছু পরিমাণ মতো সৃষ্টি করেন, তাদের তিনি ফয়সালা দান করেন ও তিনিই সবকিছু সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করেন।
ছোট-বড়, সূক্ষ্ম-অতিসূক্ষ্ম সবকিছুই তাঁর কাছ থেকেই আসে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যায়, তাঁর অনুমতি ব্যতীত একটি অণুও নড়াচড়া করতে পারে না, গাছের একটি পাতাও তাঁর অবগতি ব্যতীত ঝরে পড়ে না।
তিনি তাঁর অলীদেরকে ভালো কাজ ও সুন্দর গুণাবলীর জন্য প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে তাঁর শত্রুদেরকে মন্দ কাজ ও অসৎ গুণের জন্য নিন্দা করেছেন। তিনি কুরআনে অনেক উপমা পেশ করেছেন, নানাভাবে দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, তাঁর শত্রুর দ্বিধা-সংশয়ের ব্যাপারে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন, সত্যবাদীকে তিনি সত্যায়ন করেছেন ও মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছেন। তিনি কুরআনে হক কথা বলেছেন, হিদায়াতের পথ দেখিয়েছেন, জান্নাতের দিকে আহ্বান করেছেন, জান্নাতের গুণাবলী, এর সৌন্দর্য ও নি‘আমত বর্ণনা করেছেন, অন্যদিকে জাহান্নাম থেকে সাবধান করেছেন, এর আযাব, ভয়ঙ্করতা ও দুঃখ কষ্টের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বান্দাকে সর্বদিক থেকে তাঁর প্রতি অভাবী, অসহয় ও মুখাপেক্ষীর কথা স্মরণ করে দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত এক মুহূর্তের জন্যও তাদের কোনো উপায় নেই, আবার তিনি একথাও স্মরণ করে দিয়েছেন যে, তিনি বান্দা ও সমস্ত সৃষ্টির অমুখাপেক্ষী, তিনি সবদিক থেকে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ, সবকিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী, তাঁর দয়া ও রহমত ব্যতীত কেউ বিন্দু পরিমাণ বা তারচেয়ে কম কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, আবার তাঁর ন্যায়পরায়ণতা ও হিকমত ব্যতীত কেউ অণু পরিমাণ বা তারচেয়েও কম অকল্যাণ পাবে না।
আল-কুরআনে মানুষের অন্তর যখন এমন একজন মালিক- রাজাধিরাজের সন্ধান পাবে যিনি একাধারে মহান মালিক, রহীম, দানশীল, সুন্দর- তখন কীভাবে তাঁকে ভালোবাসবে না? তাঁর নৈকট্য লাভে কেন প্রতিযোগিতা করবে না? তাঁর হৃদ্যতা ও কোমলতা লাভে স্বীয় জীবন উৎসর্গ করবে না? কেনই-বা তিনি তার কাছে সর্বাধিক প্রিয়জন হবে না? সবকিছুর সন্তুষ্টি বাদে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টিই কেন একমাত্র লক্ষ্য হবে না? কেন সে তাঁর স্মরণে অনুরক্ত হবে না? তখন কেনই-বা তাঁর ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব তার খাদ্য, শক্তি ও নিরাময় হবে না? কেননা সে তাঁর ভালোবাসা, আবেগঘনতা ও ঘনিষ্ঠতা হারালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, মহাক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন তার জীবনের কোন মূল্যই থাকবে না।