الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين..

সম্মানিত পাঠক/পাঠিকা!

নারীদের জন্য পর্দা পালন যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত, পুস্তিকাটিতে সংক্ষেপে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে যারা পর্দা সম্পর্কে পুরোপুরি বা আংশিক বিরূপ মনোভাব রাখে তাদের জন্য এটি একটি দাঁতভাঙ্গা জবাব। সমাজে পর্দা সম্পর্কিত বিভিন্ন মনোভাবের লোক বিদ্যমান, যার মধ্যে এক শ্রেণি হলো, তাদের অজ্ঞতা বা ভুল বুঝার কারণে তারা ধারণা করে যে, নারীদের পর্দা হলো যখন তারা বাড়ী থেকে শহর-নগরের দিকে বের হবে তখন তারা অপরিচিত ব্যক্তিদের থেকে পর্দা করবে। পক্ষান্তরে পরিচিত ও আত্মীয় স্বজন বলতে যা বুঝায় তাদের কারো থেকে পর্দা করার প্রয়োজন নেই এবং তারা এ ধারণাও পোষণ করে থাকে যে, নারীদের চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, খালু শ্বশুর, ভাশুর (স্বামীর বড় ভাই) প্রমুখের সাথে কি কোনো খারাপ ধারণার অবকাশ রয়েছে বা তাদের ক্ষেত্রে কি কোনো ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে যে তাদের থেকে পর্দা করতে হবে? এ ছাড়া সমাজে দৃষ্টি গোচর হয় যে, নারীদের মধ্যে যারা বয়োজেষ্ঠা ও বয়োবৃদ্ধা তারাই পর্দা অবলম্বন করেন ও তারাই এর প্রতি শুধু গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

সম্মানিত পাঠক!

তবে কি এগুলোই প্রকৃত ইসলামী পর্দা এবং এটাই কি ইসলামী শরী‘আতে পর্দার দাবী?

এর উত্তর অনেকের নিকট ষ্পষ্ট, সূরা আন-নূরের ৩১নং আয়াতে যে সব পুরুষ থেকে পর্দা অপরিহার্য নয়, তার বর্ণনা আল্লাহ দিয়েছেন যা পুস্তিকার ... পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। এসব ব্যতীত অন্যান্য সকল আত্মীয় ও অপরিচিত পুরুষদের সাথে পর্দা অপরিহার্য। যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ হারাম নয় বরং ক্ষণস্থায়ী হারাম। যেমন, ভগ্নিপতি, খালু, ফুপা ও যাদের সাথে বিবাহ বৈধ। যেমন, চাচাত ভাই মামাত ভাই, খালাত ভাই, ফুপাত ভাই, বোনের দেবর ও ভাবীর ভাই প্রভৃতি আত্মীয় স্বজন থেকেও বাড়ীর অভ্যন্তরে ও বাইরে পর্দা অপরিহার্য। মোটকথা, শরী‘আত যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ হারাম করেছে তারা ব্যতীত সবার সাথে প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলার সকল স্থানে সব সময় পর্দা করতে হবে। বিশেষ করে সাবালিকা হওয়ার পর থেকে, বিবাহের উপযুক্ততা থাকা অবধি পর্দার যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। পর্দার বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদেরকে এ ধরণের চিন্তা করলে চলবে না যে, অমুকের সাথে তো আর খারাপ ধারণা বা ফিতনার আশঙ্কা করা যায় না অতএব তার সাথে পর্দা জরুরি নয়। কারণ, এই পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়েছিল সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী, মুসলিমদের জননী ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গসহ সাহাবীদের প্রতি। তবে কি (নাউযুবিল্লাহ) তাদের মধ্যে খারাপি ও ফিতনার আশঙ্কা ছিল? মূলকথা পর্দা করা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নির্ধারিত ফরয, তাই তা পালন করা ইবাদত, অস্বীকার করা কুফুরী ও বেপর্দা হওয়া হারাম। আর পর্দা পালনে নারী পুরুষ উভয়ে একান্তভাবে আন্তরিক হলেই এ ইবাদত বাস্তবায়ন সম্ভব।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পর্দার গুরুত্ব বুঝার এবং তা পালন করার তাওফীক দিন। তাঁর নিকট আরো প্রার্থনা যে, তিনি যেন পুস্তিকাটির সংকলক, অনুবাদক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এটিকে পরকালে সাদকা জারিয়া হিসেবে নেকির পাল্লায় গ্রহণ করেন। আমীন।

وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين

মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্‌ফান

তারিখ, মুহাররাম, ১৪২৪ হি.


بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده، أما بعد:

সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য এবং দুরূদ ও সালাম ঐ নবীর প্রতি বর্ষিত হোক যার পর আর কোনো নবী নেই।

মুসলিম ভগ্নিগণ!

সাম্প্রতিক কতিপয় লোক আপনাদের পর্দার বিরুদ্ধে অবিরাম চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং অপপ্রচার করছে যে, পর্দা হলো পশ্চাদগামিতা-পশ্চাদমুখীতার কারণ ও উন্নয়নের পথে বড় প্রতিবন্ধক। আমরা বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞান, শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম, আধিপত্য বিস্তার ও বহু ভ্রান্ত মতবাদ ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির যুগে বসবাস করছি।

বর্তমান যুগে পাশ্চাত্য সভ্যতায় আকৃষ্ট হতবুদ্ধির লোকেরা বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত:

তাদের মধ্যে একশ্রেণি এমন, যারা পর্দা ফরয হওয়াকে পুরোপুরি অস্বীকার করে, আর ধারণা পোষণ করে যে, পর্দা হলো ইসলামের প্রাথমিক যুগসমূহের একটি রীতি।

তাদের মধ্যে একদল মুখমণ্ডল আবৃত করার বিরুদ্ধে এবং তারা বেপর্দা ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সমর্থক। কেননা তারা মনে করে যে আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাতে নারীর মুখমণ্ডল আবৃত করার কোনো প্রমাণ নেই। তা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অভ্যাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত যা গোঁড়া উগ্রদের দ্বারা প্রবর্তিত।

তাদের মধ্যে কেউ এর প্রতি আঘাত হেনে বলে: নিশ্চয় পর্দা প্রথা একটি বন্দিশালা। সুতরাং নারীদের উচিৎ এ থেকে মুক্ত হয়ে বর্তমান জয়যাত্রার যুগে ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটানো এবং উন্নতির সারিতে পুরুষের সঙ্গে আধুনিক সভ্যতার পথে অংশগ্রহণ করা।

তাদের এক শ্রেণি নিম্নোক্ত প্রবাদের বাস্তবরূপ:

“সে আমার ওপর তার নিজের ব্যাধির অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে নিজে তা থেকে পালিয়ে গেল।”

তারা ধারণা করে যে, নিশ্চয় যারা পর্দার প্রতি আহ্বানকারী এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বেপর্দার বিরোধী তারা নারীদেরকে শুধু দৈহিক দৃষ্টিতে দেখে থাকে, পক্ষান্তরে তারা যদি নারীদেরকে তাদের ইখতিয়ারে যা তারা খুশী তা পরিধানের জন্য ছেড়ে দিত তবে অবশ্যই সমাজ এ সংকীর্ণ মনোভাব থেকে মুক্তি পেত!

উল্লিখিত সকল প্রকার লোকই অজ্ঞতা ও ভ্রান্তির পথে আহ্বানের ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের, তারা তা স্বীকার করুক বা না করুক।

এ ব্যাপারটি তো ঠিক তেমনি যেমন আরবী কবি বলেন,

فإن كنت لا تدري فتلك مصيبة

وإن كنت تدري فالمصيبة أعظم

“যদি তুমি না জান তা একটি বিপদ; আর যদি জান তবে তা আরো বড় আপদ”।

ঐ সমস্ত লোকের বাস্তবরূপ, দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির নিকট গোপন নয়।

আর তাদের বক্তব্য ভ্রান্তই ভ্রান্ত, তার শুরু-শেষ, শেষ-শুরু, আদ্যোপান্ত সবই ভ্রান্ত, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَتَعۡرِفَنَّهُمۡ فِي لَحۡنِ ٱلۡقَوۡلِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ أَعۡمَٰلَكُمۡ﴾ [محمد: ٣٠]

“তবে তুমি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদেরকে চিনতে পারবে। আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩০]

আর তাদের এই আহ্বান হলো মুসলিম নারীদের এবং মুসলিম উম্মাহ ও জাতি সমাজের প্রতি একটি উম্মুক্ত আগ্রাসন।

এ সত্ত্বেও তারা আমাদের নারীদের বিবেকের ওপর প্রভাব বিস্তারে সফলতা অর্জন করে চলেছে। সুতরাং তারা তাদের মধুময় বক্তব্য ও চমকপ্রদ কথায় তাদেরকে ধোকায় পতিত করে ধ্বংস ও বিনাশের পথে নিয়ে গেছে। অথচ তারা ধারণা করে যে, ঐ সমস্ত লোকেরাই নারী সমস্যা সমাধান ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করে যাচ্ছে। এটি তাদের একান্ত অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই নয়। কেননা ইসলামই নারীদেরকে পুরোপুরি সংরক্ষণ করে এবং তাদের বাল্য, কন্যা, সহধর্মীনী ও দাদী-নানী হিসেবে সার্বিক জীবনে তাদের অবস্থান বুলন্দ করেছে।

আর তাদের ব্যাপার তো ঠিক সেরূপ যেমন কবি বলেন,

لكل ساقطة في الحي لاقطة

وكل كاسدة يوماً لها سوق

“মহল্লায় প্রত্যেক বর্জিত বস্তুরই কোন টোকাই রয়েছে, প্রত্যেক চাহিদাহীন বস্তুও একদিন মার্কেট পেয়ে বসে।”

(তাই এ ধরণের লোকজনের শ্লোগান ভ্রান্ত হলেও বর্জিত ও চাহিদাহীন বস্তুর মতো এক সময় মার্কেট পেয়ে যায়)

ঐ সমস্ত লোকের জবাব আশা করি যথেষ্ট হয়েছে। তাদের সংশয় খণ্ডিত হয়েছে, তাদের বক্তব্য মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে, তাদের কথার গোপনীয়তা ফাঁস হয়েছে, তাদের গবেষণা জাল প্রমাণিত হয়েছে। অতএব, আশা করা যায় যে, তারা সৎপথে ফিরে আসবে এবং ভ্রান্ততা বর্জন করবে।!!!!