সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য যিনি আমাদেরকে সফল জীবনের পথ বাতলিয়েছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।

মানুষ মাত্রই তার কিছু না কিছু আত্মীয়-স্বজন অবশ্যই রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠাই নিতান্ত স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে দুনিয়ার কোনো ক্ষুদ্র স্বার্থকে কেন্দ্র করে কখনো কখনো তাদের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ লেগে যাওয়াও অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে তা কখনো দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া যাবে না। নতুবা তা এক সময় অপরের প্রতি কঠিন বিদ্বেষ ও নির্মম শত্রুতা পোষণে উৎসাহিত করবে। আর তখনই তা একদা সেই পরম আত্মীয়তার বন্ধনটিকে ছিন্ন করা পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবে। যা শরী‘আত কিংবা মানব দৃষ্টিতেও কখনোই কাম্য নয়। কারণ, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে একটি মহা পাপ ও মারাত্মক অপরাধ যা পরস্পরের সম্পর্ক বিনষ্ট করে দেয় এবং যা আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ ও তাঁর নগদ শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও জান্নাতে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে। এমনকি যা কখনো কখনো একাকীত্ব, নীচুতা এবং লাঞ্ছনারও কারণ হয়। উপরন্তু তা কখনো কখনো মানব জীবনের এক মহা দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা ও পেরেশানির ব্যাপারও হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, যার পক্ষ থেকে সর্বদা ভালো ব্যবহার পাওয়াই মানুষের একমাত্র কামনা তার পক্ষ থেকে কখনো কোনো দুর্ব্যবহার বা অসদাচরণ সত্যিই উদ্বেগের বিষয়ই বটে।

উক্ত ব্যাধি বর্তমান সমাজে প্রচুর ব্যাপকতা লাভ করেছে। কেউ কারোর সাধারণ বৈষয়িক স্বার্থও অপরের জন্য ছাড়তে চায় না। যার দরুন সেই পরম আত্মীয়তার বন্ধনটুকু আজ বার বার বিশেষভাবে বহুমুখী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই সেই মহান বন্ধনটুকু টিকানোর জন্যই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লিখিত হয়েছে সাধ্যমত উহার বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ‘আল্লামা নাসিরুদ্দীন আল্বানী সাহেবের হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তদুপরি সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থান নির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তা সত্বেও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার দাবি করছি না।

শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের গোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।

এ পুস্তিকাটি প্রকাশে যে কোনো জনের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কার্পণ্য করছি না। ইহ ও পরকালে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেককে তার আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ আশা। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

লেখক।