আদর্শ জাতি গঠনে নারীদের অবদানকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নারীদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আদর্শ ও সমৃদ্ধ জাতি সহায়তা নেয় আবশ্যক। কারণ, নারীরা জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুসলিম সমাজে নারীদের যথেষ্ট কর্মসংস্থান রয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান দেওয়া যেতে পারে। যেমন, কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি, প্লে-গ্রুপ এবং ইবতেদায়ী ও প্রাইমারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পেশায় নারীদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, একজন নারী স্বভাবগতভাবে বাচ্চা ও শিশুদের পাঠদানে অধিক উপযুক্ত ও অধিক সামর্থবান। এ কাজ নারীদেরকে তাদের অন্যান্য দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদানও করে না। এজন্য অনেক নারীই নিজেকে তাদের কাজের কিছু সময় বা অর্ধেক সময় স্বল্প মজুরীতে/বেতনে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কারণ, শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যা নারীদেরকে তাদের কাজে ও দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে না। বরং নারীদের মাতৃত্ব ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করে। এমনকি সমাজে এমন কিছু নারী রয়েছে, যারা পারিবারিক ও মাতৃত্বের দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, তাদের জন্য এমন পেশা আরও অধিক উপযোগী। কিন্তু তারপরও কোনো মুসলিম বিশ্ব তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে না। তারা এ শিক্ষকতার পেশাকে শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে রুটিন অনুযায়ী ভাগাভাগি করে খুব সহজেই কাজে লাগাতে পারতো। এমনকি এ ধরনের অন্যান্য যথেষ্ট পরিমাণ কর্মস্থল রয়েছে, যেগুলো সিস্টেম অনুযায়ী নারী-পুরুষের মধ্যে ভাগাভাগি করে কাজে লাগিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারত।
সাধারণত ২০ (বিশ) বছর বয়সেই একজন নারী তার শিক্ষা জীবনের অনার্স, মাস্টার্স, বা ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করতে সক্ষম হয় বা শেষের পর্যায়ে চলে যায়। তেমিনভাবে এই বয়সেই একজন নারী তার মাতৃত্বমূলক দায়িত্ব পালনে এবং সুস্থ সবল সন্তান ভূমিষ্ঠ ও তার যথাযথ লালন-পালনের ব্যবস্থা গ্রহণে শারীরিক ও মানসিকভাবে সর্বাধিক উপযুক্ত হয়ে থাকে।
এজন্য নারীদেরকে এ বয়স থেকে অন্তত চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর পর্যন্ত মাতৃত্বমূলক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রাখা উচিৎ ও কর্তব্য, যাতে অন্তত তাদের শেষ সন্তানটি পর্যন্ত মায়ের লালন-পালন আদর যত্ন ও তা‘লীম- তরবিয়তের ভেতর দিয়ে আত্মিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
এরপর যখন একজন নারী তার মাতৃত্বমূলক দায়িত্ব পালনের ভেতর দিয়ে তা‘লীম-তরবিয়ত সভ্যতা-সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে মমতাময় অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলবে। তখন তাকে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সের পরে সামাজিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করতে হবে। তখন থেকে পঁয়ষট্টি থেকে সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত তাকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রাখা উচিৎ। কারণ, নারীদের সাধারণত পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে জীববিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী হরমোনজনিত কারণে স্বভাবগতভাবে নারীর মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায়। নারী তার সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন হরমোন-জনিত কারণে পুরুষের তুলনায় নারী অধিক সবল ও শক্তিশালী হয়ে উঠে। তেমনিভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় নারীর আয়ুষ্কাল বা বয়স পুরুষের তুলনায় দীর্ঘ হয়ে থাকে। এজন্য নারীকে ৬৫-৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সামাজিক কাজে বা পেশাগত কাজে নিয়োজিত রাখা উচিৎ।
কিন্তু আমরা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারার আলোকে নারীদেরকে তাদের ফুটন্ত যৌবনে মাতৃত্বের ভূমিকা থেকে দূরে সরিয়ে সামাজিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনে নিয়ে আসি। আবার যখন মাতৃত্বের বয়স শেষ হয়ে যায়, তখন তাদের সামাজিক আর্থিক দায়িত্ব পালনের দরজা বন্ধ করে দেই অর্থাৎ তাদের অবসর জীবনে চলে যেতে হয়। এভাবে পশ্চিমাদের অনুসরণে আমরা নারীদের মান-সম্মান ভূলুণ্ঠিত করে মাতৃত্বের অপমান করছি।
অথচ আমাদের অবশ্যই উচিৎ ও কর্তব্য ছিল যে, নারীদের জন্য তাদের সঠিক বয়সে সম্পূর্ণ আলাদা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কারণ, এতে একদিকে যেমন নারীদের জন্য আলাদা কর্মস্থল ও কাজের সেক্টর এবং ব্যবস্থা করাও সম্ভব, অন্যদিকে তেমনি নারীরা ছলে-বলে হোক আর কৌশলে হোক অথবা জোরপূর্বক হোক কোনো পরপুরুষের কাছে দুর্বলতার শিকার হয়ে মাথা নত না করে নিজেরাই আত্মিক, মানসিক ও মানবিক মূল্যবোধ ও ভারসাম্য রক্ষা করে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে। যদি নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা কর্মস্থলের ব্যবস্থা না করে যৌথ কর্মস্থলের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সেখানে হয়তো জৈবিক দুর্বলতার কারণে না হয় বস বা মালিককে খুশি করার কারণে অথবা নিজের ক্যারিয়ার গঠন ও পদোন্নতিসহ নানা কারণে জৈবিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। ভেঙ্গে যাবে পারিবারিক সম্পর্ক ও স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন। যার বাস্তব চিত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, পশ্চিমা জীবন ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। কারণ, স্বভাবগতভাবে নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতি দুর্বল। তারপর একই স্থলে দীর্ঘ দিনের জন্য ব্যস্ততায় আরও দুর্বল হওয়াটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত। এটিই হচ্ছে আমাদের ইসলামী শরী‘আত ও পশ্চিমা জীবন ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য।
সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই সামাজিক বিষয়ের সাথে সাথে অর্থনৈতিক বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণে এমনভাবে গুরুত্ব দিতে হবে, যেন শুরু করার আগেই শেষ না হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রোডাকশন বা ফলাফল লাভ করা পর্যন্ত উৎপাদনের সকল উপকরণ যথাযথ ব্যবহারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, অর্থনৈতিক বিষয়টি একেবারে সহজ বিষয় নয়, বরং এ বিষয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে।
তেমনিভাবে আমাদেরকে নারী ও পরিবার কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। যাতে সঠিকভাবে ফলাফল লাভের মাধ্যমে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করে আমাদের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারি।
তেমিনভাবে আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামী শরী‘আতের আলোকে নারীদের ইজ্জত, সম্মান, মর্যাদা ও মূল্যবোধ রক্ষা তাদের মাতৃত্বমূলক দায়িত্বে বিঘ্ন সৃষ্টি না করে দেশ ও জাতির অগ্রগতি ও উন্নতির লক্ষে নারীদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক ও সমাজের অংশ সে মনোভাব অবশ্যই তৈরি করতে হবে।