বর্তমান মুসলিম সমাজে নারীদের প্রতি খুবই কঠোরতা করা হয়ে থাকে। এমনকি শরী‘আত অনুমতি দিয়েছে এমন কোনো অনুষ্ঠানেও তাদের অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয় না। যার কারণে তারা অনেকাংশে জ্ঞান অর্জন ও বিভিন্ন শিক্ষা লাভ হতে বঞ্চিত। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারীদেরকে তুলনামূলক-ভাবে শিক্ষা-সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। এমনকি হিন্দু নারীদের থেকেও মুসলিম নারীদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। অথচ ইসলাম নারীদেরকে যে অধিকার ও স্বাধীনতা দিয়েছে হিন্দু ধর্মে তার কিঞ্চিতও দেয় নি, তারপরেও হিন্দু নারীরা সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, অথচ একজন মুসলিম নারীকে অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয় নি। যার ফলে মুসলিম সন্তানদের তা‘লীম-তরবিয়ত ও সুশিক্ষা এবং ইসলামের সামাজিক কর্মকাণ্ডে দুর্বলতা চলে আসছে। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ আল-গাযালী রহ.-এর গ্রাম্য ও বাল্য জীবনের স্মরণীয় ঘটনাবলী থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। তিনি কীভাবে গ্রামের সর্বস্তরে নারীদেরকে দেখতে পান, কিন্তু দেখতে পান না একমাত্র মসজিদে। সে প্রসঙ্গেই ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন।
‘আমার অত্যন্ত আশ্চর্য লাগে যখন আমি দেখি যে, বর্তমান বিশ্বে মুসলিম দেশসমূহে মুসলিমদের মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য সালাতের কোনো ব্যবস্থা করা হয় নি। আর কোনো মতে ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্দার আড়ালে পিছনের কাতারে এমনভাবে ব্যবস্থা করা যে, একজন মহিলার এ অবস্থায় সেখানে সালাত পড়াটাও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। অথচ তারা মসজিদে সালাতে গেলে অধিক পর্দা অবলম্বন ও অত্যন্ত আদরের সাথে যায়। এমনকি মসজিদে অন্যান্য সকল মুসল্লীও পাক-সাফ হয়ে একমাত্র আল্লাহর প্রতি মুতাওয়াজ্জাহ হয়ে মসজিদে সালাত পড়তে যায়। তারপরেও কোনো জিনিসটি নারীদেরকে মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করে? বা মসজিদে উপস্থিত হলেও কোনো বিষয়টি নারীদেরকে সর্বশেষ কাতারে পর্দার আড়ালে সংকুচিত স্থানে সালাত আদায় করতে বলে? অথচ মুসলিমদের ইবাদতের স্থান মসজিদ থেকে বের হলেই হাট বাজার রাস্তা ঘাটে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্দ্বিধায় সব ধরনের কাজ করছে!! সেখানে কি তাদের মানসিক কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় না? আসে না তাদের মনে কোনো ধরনের কুমন্ত্রণা? আসে শুধু পাক-পবিত্র স্থান মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের কাজে!!আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, অধিকাংশ মুসলিম দেশে মুসলিমদের মসজিদসমূহে জুমার সালাত ও তার খুৎবায় পর্যন্ত মুসলিম নারীদের উপস্থিত হতে দেখা যায় না এবং তাদের জন্য মসজিদে উপস্থিত হবার বা সালাতের কোনো ব্যবস্থাও করা হয় না। এতে মনে হয়, যেন আল্লাহর নির্দেশ শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য এসেছে, নারীদের বেলায় কিছুই আসে নি, ইসলাম নারীদেরকে সামাজিক অধিকার দেয় নি। সামাজিক দায়-দায়িত্ব বলতে নারীদের কোনো ধরনের ভূমিকাই নেই এবং নারীদের সামাজিক কোনো মর্যাদাই নেই। প্রকৃত পক্ষে মুসলিম নারীদের সম্পর্কে এ সকল সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে নারীদের বেলায় ইসলামিক নির্দেশের ভুল বুঝাবুঝি, অর্থাৎ ইসলাম নারীদের পারিবারিক দায়-দায়িত্ব, সন্তান লালন-পালন, দেখা-শোনায়, স্তন্যদানে ও মাতৃত্বমূলক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনে জুমা ও জামা‘আতে উপস্থিত না হবার অনুমতি প্রদান করেছিল। যাতে একজন মায়ের জামা‘আতে বা জুমু‘আর সালাতে উপস্থিতির কারণে তার দুধের শিশু চটপট ও কষ্ট না করে। বিশেষ করে রাতের সালাত এশা ও ফজরের সালাতে নারীদের মসজিদে জামা‘আতে উপস্থিত না হওয়ার জন্য অনুমতি প্রদান করেছে। যাতে তার পারিবারিক দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা না হয়। পারিবারিক দায়-দায়িত্ব এবং সন্তান লালন-পালন ইত্যাদি কারণ ছাড়া নারীদেরকে মসজিদে সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হতে এবং জুমু‘আর সালাত ও খুৎবাতে উপস্থিত হতে নিষেধ ও বাধা প্রদান করে নি। কারণ, পুরষ যেমন সমাজের অংশ, নারীও তেমন সমাজের অংশ; পুরুষের যেমন ধর্মীয় দায়িত্ব পালন আবশ্যকীয়, নারীরও তেমন আবশ্যকীয়। এতে ধর্মীয় ও সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালনে নারী-পুরুষ উভয়েরই মধ্যে কোনো পার্থক্য ও প্রাধান্যের কোনো কারণ নেই। কিন্তু ইসলামের সেই নির্দেশকে ভুল বুঝার কারণে নারীদেরকে মসজিদ, জামা‘আত, জুমু‘আ, খুৎবা ইত্যাদি থেকে বিরত রাখা হচ্ছে ও নিষেধ করা হচ্ছে। অথচ ইসলামের নির্দেশ ছিল তাদের প্রতি সহনশীলতার জন্য। ইসলাম কখনো তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে নি। রাসূলের বাণী «لَا تَمْنَعُوا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ» “তোমরা নারীদেরকে আল্লাহর মসজিদে আসতে বাধা প্রদান কর না[1]।”