‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’-এর শর্ত ৭টি, যথাঃ
১. এই কালিমাটির না-সূচক এবং হ্যাঁ-সূচক দু’টি অর্থই এমনভাবে জানতে হবে যে, মুখে যা উচ্চারিত হবে, অন্তরও তা উপলব্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [محمد: ١٩]
“জেনে রাখো, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই” (মুহাম্মাদ ১৯)। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَلَا يَمۡلِكُ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِهِ ٱلشَّفَٰعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٨٦ ﴾ [الزخرف: ٨٦]
“তিনি ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে, তারা সুপারিশের অধিকারী হবে না। তবে যারা জেনেবুঝে হক্ব স্বীকার করত, (তারা সুপারিশের অধিকারী হবেন)” (যুখরুখ ৮৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ জানা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করল” (মুসলিম)। আর এই কালিমাটির অর্থ হচ্ছে, لاَ مَعْبُوْدَ بِحَقٍّ إِلاَّ الله আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ নেই।
আর ইবাদতের সংজ্ঞা হচ্ছে, আল্লাহ ভালবাসেন এবং সন্তুষ্ট হন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এমন যাবতীয় কথা ও কাজকে ইবাদত বলে।
২. এই কালিমাটির প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে, কোনো প্রকার সন্দেহ-সংশয় থাকা চলবে না। আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥ ﴾ [الحجرات: ١٥]
“মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে নি এবং জান ও মাল দিয়ে আল্লাহ্র পথে জিহাদ করেছে। তারাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ” (হুজুরাত 1৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّى رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা’বূদ নেই এবং আমি মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল এবং এই কালিমা দু’টিতে কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ না করা অবস্থায় আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (মুসলিম)।
৩. ইখলাছ থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ﴾ [الزمر: ٣]
“আল্লাহ্র জন্যই শির্কমুক্ত ইবাদত” (যুমার ৩)। তিনি আরো বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]
“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ»
“কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার শাফা‘আত লাভে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে, পরিপূর্ণ ইখলাছের সাথে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ বলেছে” (বুখারী)।
৪. এই কালিমা ও তার উদ্দেশ্যকে ভালবাসতে হবে এবং তাতে খুশী থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ﴾ [البقرة: ١٦٥]
“আর কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা অন্যান্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষ সাব্যস্ত করে। তাদেরকে তেমনি ভালবাসে, যেমন আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ্র প্রতি তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী” (বাক্বারাহ ১৬৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ»
“তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে, সে এগুলোর দ্বারা ঈমানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করবে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ঐ ব্যক্তির নিকটে অন্য সবার চেয়ে প্রিয়তর হবেন। সে কাউকে ভালবাসলে শুধু আল্লাহ্র উদ্দেশ্যেই ভালবাসবে। আর আল্লাহ তাকে কুফরী থেকে রক্ষা করার পর তাতে পুনরায় ফিরে যাওয়াকে তেমন ঘৃণা করবে, যেমন সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ঘৃণা করে” (মুসলিম)।
৫. এই কালিমাকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে, কোনো প্রকার মিথ্যা বা নিফাক্বী থাকা চলবে না। আল্লাহ বলেন,
﴿فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٣ ﴾ [العنكبوت: ٣]
“অতঃপর আল্লাহ্ জেনে নিবেন, (প্রকাশ করে দিবেন) তাদের মধ্যে কারা (তাদের ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী, আর অবশ্যই জেনে নিবেন (প্রকাশ করে দিবেন) কারা (তাদের ঈমানের দাবীতে) মিথ্যাবাদী” (আনকাবূত ৩)।
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَٱلَّذِي جَآءَ بِٱلصِّدۡقِ وَصَدَّقَ بِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٣ ﴾ [الزمر: ٣٣]
‘যারা সত্য নিয়ে আগমন করেছে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাইতো আল্লাহভীরু” (যুমার ৩৩)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَادِقًا مِنْ قَلْبِهِ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি মনে-প্রাণে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ-এর সাক্ষ্যের উপর অটল থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (আহমাদ)।
৬. এই কালিমার দাবিসমূহের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে, শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য আমল করে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُۥ مِن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَكُمُ ٱلۡعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ٥٤ ﴾ [الزمر: ٥٤]
“তোমরা তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর। (কারণ) এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না” (যুমার ৫৪)।
তিনি আরো বলেন,
﴿۞وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ﴾ [لقمان: ٢٢]
“যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজেকে আল্লাহ অভিমুখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে” (লুক্বমান ২২)।
৭. এই কালিমাকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে হবে; যাতে তা প্রত্যাখ্যান না করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ ﴾ [الصافات: ٣٥]
“তাদের যখন বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, তখন তারা অহংকার প্রদর্শন করত” (ছফফাত ৩৫)।