গ. দ্বীন বিমুখ হওয়ার শাস্তি (عقوبة الإعراض عن الدين)

যে ব্যক্তি উপকারী বস্ত্ত পরিত্যাগ করবে, তাকে ক্ষতিকর বস্ত্ত দ্বারা পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং সে উপকারী বস্ত্ত থেকে বঞ্চিত হবে; আর এসব ব্যক্তির বেলায় আল্লাহর নিয়ম এমনই।

দয়াময় প্রভুর ইবাদত থেকে কাফের, মুশরিকরা যখন বিরত থেকেছে, তখন তারা মূর্তি পূজার পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছে। রাসূলগণের আনুগত্য থেকে যখন তারা অহংকার করেছে, তখন বিবেকহীনতা এবং দ্বীন ধ্বংসের পরীক্ষায় পড়েছে। যখন তারা মানুষের হেদায়াতের জন্য নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহ ত্যাগ করেছে, তখন বিবেকের জন্য ক্ষতিকারক নিকৃষ্টতর কিতাবের অনুসরণদ্বারা পরীক্ষায় পড়েছে (তথা গোমরাহীতে লিপ্ত হবে)। অনুরূপভাবে, যখন তারা দয়াময় প্রভুর আনুগত্যে তাদের সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থেকেছে, তখন নিজের প্রবৃত্তি এবং শয়তানের আনুগত্যে সম্পদ ব্যয় করার পরীক্ষায় পড়েছে। পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতি রাসূলগণকে যখন মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দ্বীন থেকে বিমুখ হয়েছে এবং দুনিয়াবী কারণে দ্বীনের প্রয়োজনবোধ করেনি, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস ও নির্মুল করে দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতির আট ধরণের বিশ্বাস ছিল:

নূহ (আ.)-এর জাতি সংখ্যায় বেশি হওয়ার উপর বিশ্বাস করতো

আদ জাতি শক্তি অর্জনে বিশ্বাস করতো

ছামূদ জাতি অট্টালিকা নির্মাণে বিশ্বাসী ছিল

শু‘আইব (আ.)-এর জাতি ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশ্বাস করতো

সাবা জাতি ফসল উৎপাদনে বিশ্বাসী ছিল

ফির‘আউন রাজত্ব দখলে বিশ্বাসী ছিল

ঈসা (আ.)-এর জাতি চিকিৎসায় বিশ্বাসী ছিল এবং

ক্বারূন ধন-সম্পদ সঞ্চয়ে বিশ্বাসী ছিল।

তাদের প্রত্যেককেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের পাপের কারণে পাকড়াও করেন। আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে দিয়েছেন, আদ জাতিকে তীব্র বাতাসের মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন, বিকট আওয়াজ, কম্পন ও বজ্রপাতের মাধ্যমে ছামূদ জাতিকে পাকড়াও করেছেন, লূত(আ.)-এর জাতির উপর পাথর নিক্ষেপ ও তাদের বাসস্থান উল্টে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করেছেন, ক্বারুনকে মাটির নিচে ধ্বসে দিয়েছেন এবং শু‘আইব (আ.)-এর জাতিকে আগুনের বৃষ্টির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ (40)) ... [العنكبوت: 40]

‘অতঃপর এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পাপের কারণে আমি পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো উপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ, কাউকে আবার মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছি আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করবেন। বরং তারা নিজেরা নিজেদের উপর যুলম করত’ (সূরা আল-আনকাবূত: ৪০)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَقَوْمَ نُوحٍ لَمَّا كَذَّبُوا الرُّسُلَ أَغْرَقْنَاهُمْ وَجَعَلْنَاهُمْ لِلنَّاسِ آيَةً وَأَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ عَذَابًا أَلِيمًا (37)) ... [الفرقان: 37]

‘আর নূহের সম্প্রদায়, যখন তারা রাসূলগণকে অস্বীকার করল, আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। আর আমি যালিমদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব’ (সূরা আল-ফুরক্বান: ৩৭)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ (94)) [هود: 94]

‘আর যখন আমার আদেশ আসল, তখন শু‘আইব ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা মুক্তি দিলাম এবং যারা যুলম করেছিল, তাদেরকে পাকড়াও করল বিকট আওয়াজ। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল’ (সূরা হূদ: ৯৪)।

৪। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ (102)
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآخِرَةِ ذَلِكَ يَوْمٌ مَجْمُوعٌ لَهُ النَّاسُ وَذَلِكَ يَوْمٌ مَشْهُودٌ (103)) ... [هود: 102 - 103].

‘আর এরূপই হয় তোমার রবের পাকড়াও যখন তিনি পাকড়াও করেন কোন অত্যাচারী জনপদসমূহকে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড়ই যন্ত্রণাদায়ক, কঠোর। (১০২) নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য, যে আখেরাতের আযাবকে ভয় করে। সেটি এমন একটি দিন, যেদিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং সেটি এমন এক দিন, যেদিন সবাই হাযির হবে’(সূরা হূদ: ১০২-১০৩)।

৫। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ (96) إِلَى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاتَّبَعُوا أَمْرَ فِرْعَوْنَ وَمَا أَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيدٍ (97) يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ (98) وَأُتْبِعُوا فِي هَذِهِ لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ بِئْسَ الرِّفْدُ الْمَرْفُودُ(99)) .[هود: 96 - 99]

‘আর আমি মূসাকে আমার আয়াতসমূহ ও স্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে পাঠিয়েছি, (৯৬) ফির‘আউন ও তার নেতৃবৃন্দের নিকট। অতঃপর তারা ফির‘আউনের নির্দেশের অনুসরণ করল। আর ফির‘আউনের নির্দেশ সঠিক ছিল না। (৯৭) কিয়ামত দিবসে সে তার কওমের অগ্রভাগে থাকবে এবং তাদেরকে আগুনে উপনীত করে দেবে। যেখানে তারা উপনীত হবে সেটা উপনীত হওয়ার কতইনা নিকৃষ্ট স্থান। (৯৮) আর এখানে (দুনিয়ায়) লা‘নত তাদের পেছনে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কিয়ামত দিবসেও। কি নিকৃষ্ট প্রতিদান, যা তাদের দেয়া হয়েছে’ (সূরা হূদ: ৯৬-৯৯)।

৬। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَسَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا (115)) ... [النساء: 115].

‘আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হেদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব, যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ’(সূরা আন-নিসা:১১৫)।