ক. দুনিয়া ও আখেরাতের মর্মার্থ (فقه الدنيا والآخرة)

আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জিনিস সুন্দর করে ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। যেমন উদ্ভিদের সৌন্দর্য পাতা ও ফুল আর এর উদ্দেশ্য হলো শস্য ও ফল। কাপড়ের সৌন্দর্য রং, আর এর উদ্দেশ্য শরীর রক্ষা করা ও আবৃত করা। এরূপ দুনিয়ার ভিতর যা কিছু আছে, সব মিলিয়ে এর সৌন্দর্য, আর ঈমান ও সৎ আমল দুনিয়ার উদ্দেশ্য। সুতরাং দুনিয়ার সৌন্দর্যের মূল উদ্দেশ্য আখেরাত। যে-ই উক্ত উদ্দেশ্য ভুলে যাবে, সে-ই এর সৌন্দর্যের জালে আটকে যাবে। সে স্রষ্টাকে রেখে সৃষ্টি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীগণ দুনিয়ায় উল্লেখিত মহান উদ্দেশ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। আর তা হলো ঈমান ও সৎ আমল। অপরপক্ষে দুনিয়াপ্রেমী লোকেরা সৌন্দর্য, খেল-তামাশা এবং উপভোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দুনিয়ার প্রয়োজনীয় বিষয় গ্রহণ করতে এবং সাধ্যানুযায়ী সৎ আমল করতে আদেশ করেছেন।

ইবাদত দুনিয়ার যা কিছু দ্বীনের ব্যাপারে সাহায্য করে, তা ইবাদত বলে গণ্য। ইবাদত হিসাবে আমাদের জীবনের বিষয়াদি ও সৌন্দর্য যদি মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তথা এক আল্লাহর ইবাদত, যার কোন শরীক নেই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুসরণ এবং তাঁর দ্বীনের প্রচার-প্রসারের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে মন যা ভালোবাসে, তার উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা ভালোবাসেন, তাকে আমরা প্রাধান্য দিবো। আর দুনিয়াবী প্রয়োজনাদির উপর দ্বীনী প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিবো।

যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রবের প্রিয় বস্ত্ত ঈমান ও সৎ-আমল পূর্ণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা পরকালে ঐ ব্যক্তির প্রিয়বস্ত্ত রবের দর্শন ও তার সন্তুষ্টিসহ অন্যান্য নেয়ামত, জান্নাতে স্থায়িত্ব পূর্ণ করবেন।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ ) [القصص: 77]

‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখেরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ: ৭৭)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِيالْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ (20) سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (21)) [الحديد: 20 - 21]

‘তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহংকার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। তা প্রস্তত করা হয়েছে যারা আল্লাহ ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনে তাদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল’ (সূরা আল-হাদীদ: ২০-২১)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا (7))[الكهف: 7]

‘নিশ্চয় যমীনের উপর যা রয়েছে, তা শোভা করেছি তার জন্য, যাতে তাদেরকে পরীক্ষা করি যে, কর্মে তাদের মধ্যে কে উত্তম’ (সূরা আল-কাহাফ: ৭)।