(১) মৃত্যুর আগে বা পরে মাইয়েতকে ক্বিবলার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া
(২) মাইয়েতের শিয়রে বসে সূরা ইয়াসীন বা কুরআন তেলাওয়াত করা (তালখীছ ৯৬, ৯৭)।
(৩) মাইয়েতের নখ কাটা ও গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ করা (৯৭)
(৪) কাঠি দিয়ে (বা নির্দিষ্ট সংখ্যক নিম কাঠি দিয়ে) দাঁত খিলাল করানো
(৫) নাক-কান-গুপ্তাঙ্গ প্রভৃতি স্থানে তুলা ভরা (৯৭)
(৬) দাফন না করা পর্যন্ত পরিবারের লোকদের না খেয়ে থাকা (৯৭)
(৭) বাড়ীতে বা কবরস্থানে এই সময় ছাদাক্বা বিলি করা (৯৯, ১০৩)
(৮) চীৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, কাপড় ছেঁড়া, মাথা ন্যাড়া করা, দাড়ি-গোঁফ না মুন্ডানো ইত্যাদি (১৮, ৯৭)
(৯) তিন দিনের অধিক (সপ্তাহ, মাস, ছয় মাস ব্যাপী) শোক পালন করা (১৫, ৭৩) কেবল স্ত্রী ব্যতীত। কেননা তিনি ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবেন
(১০) কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের জন্য দো‘আ করা (৪৮)
(১১) শোক দিবস (শোকের মাস ইত্যাদি) পালন করা, শোকসভা করা ও এজন্য খানাপিনার বা (কাঙ্গালী ভোজের) আয়োজন করা ইত্যাদি (৭৩-৭৪)
(১২) মসজিদের মিনারে বা বাজারে মাইকে অলি-গলিতে ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা (১৯, ৯৮)
(১৩) কবরের উপরে খাদ্য ও পানীয় রেখে দেওয়া। যাতে লোকেরা তা নিয়ে যায় (১০৩)
(১৪) মৃতের কক্ষে তিন রাত, সাত রাত (বা ৪০ রাত) ব্যাপী আলো জ্বেলে রাখা (৯৮)
(১৫) কাফনের কাপড়ের উপরে কুরআনের আয়াত ও দো‘আ-কালেমা ইত্যাদি লেখা (৯৯)
(১৬) এই ধারণা করা যে, মাইয়েত জান্নাতী হ’লে ওযনে হালকা হয় ও দ্রুত কবরের দিকে যেতে চায় (৯৯)
(১৭) মাইয়েতকে দূরবর্তী নেককার লোকদের গোরস্থানে নিয়ে দাফন করা (৯৯)
(১৮) জানাযার পিছে পিছে উচ্চৈঃস্বরে যিকর ও তেলাওয়াত করতে থাকা (১০০)
(১৯) জানাযা শুরুর প্রাক্কালে মাইয়েত কেমন ছিলেন বলে লোকদের কাছ থেকে সমস্বরে সাক্ষ্য নেওয়া (১০১)
(২০) জানাযার ছালাতের আগে বা দাফনের পরে তার শোকগাথা বর্ণনা করা (১০০)
(২১) জুতা পাক থাকা সত্ত্বেও জানাযার ছালাতে জুতা খুলে দাঁড়ানো (১০১)।
(২২) কবরে মাইয়েতের উপরে গোলাপ পানি ছিটানো (১০২)
(২৩) কবরের উপরে মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ও পায়ের দিক থেকে মাথার দিকে পানি ছিটানো। অতঃপর অবশিষ্ট পানিটুকু কবরের মাঝখানে ঢালা (১০৩)
(২৪) তিন মুঠি মাটি দেওয়ার সময় প্রথম মুঠিতে ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম’ দ্বিতীয় মুঠিতে ‘ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম’ এবং তৃতীয় মুঠিতে ‘ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ বলা (ত্বোয়াহা ৫৫; ১০২) (২৫) অথবা ‘আল্লা-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বান’.... পাঠ করা (ইবনু মাজাহ হা/১৫৫৩, ‘যঈফ’)। (২৬) কবরে মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে ফাতিহা ও পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে বাক্বারাহর শুরুর অংশ পড়া (১০২)
(২৭) সূরায়ে ফাতিহা, ক্বদর, কাফেরূণ, নছর, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই সাতটি সূরা পাঠ করে দাফনের সময় বিশেষ দো‘আ পড়া (১০২)
(২৮) কবরের কাছে বসে কুরআন তেলাওয়াত ও খতম করা (১০৪)
(২৯) কবরের উপরে শামিয়ানা টাঙ্গানো (১০৪)
(৩০) নির্দিষ্ট ভাবে প্রতি জুম‘আয় কিংবা সোম ও বৃহস্পতিবারে পিতা-মাতার কবর যেয়ারত করা (১০৫) (৩১) এতদ্ব্যতীত আশূরা, শবে মে‘রাজ, শবেবরাত, রামাযান ও দুই ঈদে বিশেষভাবে কবর যেয়ারত করা (৩২) কবরের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ানো ও সূরায়ে ফাতিহা ১ বার, ইখলাছ ১১ বার কিংবা সূরা ইয়াসীন ১ বার পড়া (১০৫)।
(৩৩) কুরআন পাঠকারীকে উত্তম খানা-পিনা ও টাকা-পয়সা দেওয়া বা এ বিষয়ে অছিয়ত করে যাওয়া (১০৪, ১০৬)
(৩৪) কবরকে সুন্দর করা (১০৭)।
(৩৫) কবরে রুমাল, কাপড় ইত্যাদি বরকত মনে করে নিক্ষেপ করা (১০৮) ।
(৩৬) কবরে চুম্বন করা (১০৮)।
(৩৭) কবরের গায়ে মৃতের নাম ও মৃত্যুর তারিখ লেখা (১০৯)।
(৩৮) কবরের গায়ে বরকত মনে করে হাত লাগানো এবং পেট ও পিঠ ঠেকানো (১০৮)।
(৩৯) ত্রিশ পারা কুরআন (বা সূরা ইয়াসীন) পড়ে এর ছওয়াব সমূহ মৃতের নামে বখশে দেয়া (১০৬)। যাকে এদেশে ‘কুরআনখানী’ বলে।
(৪০) কাফেরূণ, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই চারটি ‘কুল’ সূরার প্রতিটি ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কুলখানী’ বলে।
(৪১) কালেমা ত্বাইয়িবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কালেমাখানী’ বলে।
(৪২) ১ম, ৩য়, ৭ম (বা ১০ম দিনে) বা ৪০ দিনে চেহলাম বা চল্লিশার অনুষ্ঠান করা
(৪৩) ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা (১০৩)
(৪৪) যারা কবর খনন করে ও দাফনের কাজে সাহায্য করে, তাদেরকে মৃতের বাড়ী দাওয়াত দিয়ে বিশেষ খানার ব্যবস্থা করা। যাকে এদেশে ‘হাত ধোয়া খানা’ বলা হয়
(৪৫) আযান শুনে নেকী পাবে বা গোর আযাব মাফ হবে ভেবে মসজিদের পাশে কবর দেওয়া
(৪৬) কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ফাতিহা’ পাঠ করা (২০)
(৪৭) কাফন-দাফনের কাজকে নেকীর কাজ না ভেবে পয়সার বিনিময়ে কাজ করা
(৪৮) মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে আলো জ্বেলে ও মাইক লাগিয়ে রাত্রি ব্যাপী উচ্চৈঃস্বরে কুরআন খতম করা
(৪৯) মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা (১০৪, ১০৬)
(৫০) ছালাত, ক্বিরাআত ও অন্যান্য দৈহিক ইবাদত সমূহের নেকী মৃতদের জন্য হাদিয়া দেওয়া (১০৬)। যাকে এদেশে ‘ছওয়াব রেসানী’ বলা হয়
(৫১) আমল সমূহের ছওয়াব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে (বা অন্যান্য নেককার মৃত ব্যক্তিদের নামে) বখশে দেওয়া (১০৬)। যাকে এদেশে ‘ঈছালে ছওয়াব’ বলা হয়
(৫২) নেককার লোকদের কবরে গিয়ে দো‘আ করলে তা কবুল হয়, এই ধারণা করা (১০৮)।
(৫৩) মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় বলে ধারণা করা
(৫৪) জানাযার সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহরানা মাফ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা
(৫৫) ঐ সময় মৃতের ক্বাযা ছালাত সমূহের বা উমরী ক্বাযার কাফফারা স্বরূপ টাকা আদায় করা
(৫৬) মৃত্যুর পরপরই ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে চাউল ও টাকা-পয়সা বিতরণ করা
(৫৭) দাফনের পরে কবরস্থানে মহিষ বা গবাদি-পশু যবহ করে গরীবদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা (৫৮) লাশ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় তিনবার নামানো
(৫৯) কবরে মাথার কাছে ‘মক্কার মাটি’ নামক আরবীতে ‘আল্লাহ’ লেখা মাটির ঢেলা রাখা
(৬০) মাইয়েতের মুখে ও কপালে আতর দিয়ে ‘আল্লাহ’ লেখা
(৬১) কবরে মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি দেওয়া
(৬২) পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের সময় বদনায় পানি দিয়ে যাওয়া এই নিয়তে যে, মৃতের রূহ এসে ওযূ করে ছালাত আদায় করে যাবে
(৬৩) মৃতের ঘরে ৪০ দিন যাবৎ বিশেষ লৌহজাত দ্রব্য রাখা
(৬৪) মৃত্যুর ২০দিন পর রুটি বিলি করা ও ৪০ দিন পর বড় ধরনের ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা
(৬৫) মৃতের বিছানা ও খাট ইত্যাদি ৭দিন পর্যন্ত একইভাবে রাখা
(৬৬) মৃতের পরকালীন মুক্তির জন্য তার বাড়ীতে মীলাদ বা ওয়ায মাহফিল করা
(৬৭) নববর্ষ, শবেবরাত ইত্যাদিতে কোন বুযর্গ ব্যক্তিকে ডেকে মৃতের কবর যিয়ারত করিয়ে নেওয়া ও তাকে বিশেষ সম্মানী প্রদান করা
(৬৮) শবেবরাতে ঘরবাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মৃত স্বামীর রূহের আগমন অপেক্ষায় তার পরিত্যক্ত কক্ষে বা অন্যত্রে সারা রাত জেগে বসে থাকা ও ইবাদত-বন্দেগী করা
(৬৯) ঈছালে ছওয়াবের অনুষ্ঠান করা
(৭০) নিজের কোন একটি বা একাধিক সমস্যা সমাধানের নিয়তে কবরের গায়ে বা পাশের কোন গাছের ডালে বিশেষ ধরনের সুতা বা ইটখন্ড ঝুলিয়ে রাখা।
(৭১) মাযার থেকে ফিরে আসার সময় কবরের দিকে মুখ করে বেরিয়ে আসা
(৭২) মৃত্যুর আগেই কবর তৈরী করা (১০৪)
(৭৩) কবরে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্ত্ত সমূহ রাখা এই ধারণায় যে, সেগুলি তার কাজে আসবে
(৭৪) কবরে কা‘বা গৃহের কিংবা কোন পীরের কবরের গেলাফের অংশ কিংবা তাবীয লিখে দাফন করা এই ধারণায় যে, এগুলি তাকে কবর আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেবে
(৭৫) কবরে ‘ওরস’ উপলক্ষে বা অন্য সময়ে রান্না করা খিচুড়ী বা তৈরী করা রুটি বা মিষ্টি ‘তাবাররুক’ নাম দিয়ে বরকতের খাদ্য মনে করে ভক্ষণ করা
(৭৬) আজমীরে খাজাবাবার কবরে টাকা পাঠানো বা অন্য কোন পীর বাবার কবরে গরু-ছাগল, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য হাদিয়া পাঠানো
(৭৭) কবরের মধ্যবর্তী স্থানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে মৃতের জন্য দো‘আ পড়া
(৭৮) কবরের উপরে একটি বা চার কোণে চারটি কাঁচা খেজুরের ডাল পোতা বা কোন গাছ লাগানো এই ধারণা করে যে, এর প্রভাবে কবর আযাব হালকা হবে।
(৭৯) খাটিয়া ও মাইয়েত ঢাকার কাপড় খুব সুন্দর করা (৯৯)
(৮০) কালেমা ও পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখিত কালো কাপড় দিয়ে খাটিয়া ঢাকা।
(৮১) মৃতের প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় পৃথক পৃথক দো‘আ পড়া (৯৮)
(৮২) জানাযা বহনের সাথে সাথে ছাদাক্বা বিতরণ করা এবং লোকদের কোল্ড ড্রিংকস পান করানো (৯৯)
(৮৩) লাশের নিকট ভিড় করা (৯৯)
(৮৪) মৃতের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বা অন্য কোন উপলক্ষে দিনভর উচ্চৈঃস্বরে তার বক্তৃতা বা কুরআনের ক্যাসেট বাজানো
(৮৫) বিশেষ কোন নেককার ব্যক্তির কবর থাকার কারণে জনপদের লোকেরা রূযিপ্রাপ্ত হয় ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয় বলে ধারণা পোষণ করা (১০৬)।
(৮৬) জানাযা শুরুর পূর্বে ইমামের পক্ষ থেকে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে উচ্চৈঃস্বরে ‘নিয়ত’ বলে দেওয়া
(৮৭) ইমাম ও মুক্তাদীর ‘ছানা’ পড়া (১০১)।
(৮৮) সূরা ফাতিহা ও একটি সূরা ছাড়াই জানাযার ছালাত আদায় করা (১০১)।
(৮৯) জানাযা শেষ হবার পরেই সেখানে দাঁড়িয়ে অথবা দাফন শেষে একজনের নেতৃত্বে সকলেদু’হাত তুলে দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা।
(৯০) জানাযার সময়ে সকলকে মৃতের বাড়ীতে কুলখানির অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া।
উপরে বর্ণিত বিষয়গুলি ছাড়াও মৃত ব্যক্তি ও কবরকে কেন্দ্র করে হাযারো রকমের শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ উপমহাদেশে মুসলিম সমাজে চালু আছে। অতএব প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হবে এসকল শিরক ও বিদ‘আতী কর্মকান্ড হ’তে দূরে থাকা। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।- আমীন!!
জানা আবশ্যক যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টি কবরের উপরে যে খেজুরের দু’টি কাঁচা চেরা ডাল পুঁতেছিলেন, সেটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাঁর বা কোন ছাহাবীর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এমন কোন আমল করার নযীর নেই বুরাইদা আসলামী (রাঃ) ব্যতীত। কেননা তিনি এটার জন্য অছিয়ত করেছিলেন (বুখারী)। অতএব এটা স্পষ্ট যে, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নেক আমলের কারণেই কবর আযাব মাফ হ’তে পারে। ফুল দেওয়া বা কাঁচা ডাল পোতার কারণে নয়। কেননা এসবের কোন প্রভাব মাইয়েতের উপর পড়ে না। যেমন আব্দুর রহমান (রাঃ)-এর কবরের উপর তাঁবু খাটানো দেখে ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ওটাকে হটিয়ে ফেল হে বৎস! কেননা ওটা তার আমলের উপরে ছায়া করছে বা বাধা সৃষ্টি করছে।[121]