(১) মৃত্যু হওয়ার পরে উপস্থিত সকলে এবং যারা শুনবেন তারা প্রত্যেকে إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ‘ইন্না লিল্লা-হে ওয়া ইন্না ইলাইহে রা-জে‘ঊন’ (অর্থ : ‘আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’) পাঠ করবে এবং আল্লাহ-নির্ধারিত তাক্বদীরের উপরে ছবর করবে ও সন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর
(২) মৃতের চোখ দু’টি বন্ধ করে দিবে। [48] সারা দেহ ও মুখমণ্ডল কাপড় দিয়ে ঢেকে দিবে।[49] তবে (হজ্জ বা ওমরাহ কালে) ‘মুহরিম’ ব্যক্তির মুখ ও মাথা খোলা থাকবে। কেননা তিনি ক্বিয়ামতের দিন ‘তালবিয়া’ পাঠ করতে করতে উঠবেন। [50]
(৩) এই সময় মাইয়েতের নিকটতম ব্যক্তি এই দো‘আ পড়বে : اَللَّهُمَّ أَجِرْنِي فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا ‘আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুছীবাতী ওয়া আখলিফ্লী খায়রাম মিনহা’ (অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে বিপদে ধৈর্য ধারণের পারিতোষিক দান কর এবং আমাকে এর উত্তম প্রতিদান দাও’)।[51]
(৪) এসময় মৃতের জন্য নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া যেতে পারে। যা আবু সালামাহ (রাঃ)-এর জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাঠ করেছিলেন,
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّيْنَ وَاخْلُفْهُ فِيْ عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِيْنَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ، وَافْسَحْ لَهُ فِيْ قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লাহু ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিইয়ীনা ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীনা, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রববাল ‘আ-লামীন; ওয়াফসাহ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাওভির লাহু ফীহি।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং সুপথপ্রাপ্তদের মধ্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। পিছনে যাদেরকে তিনি ছেড়ে গেলেন, তাদের মধ্যে আপনিই তার প্রতিনিধি হউন। হে বিশ্ব চরাচরের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন। আপনি তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং সেটিকে তার জন্য আলোকিত করে দিন’। [52]
(৫) এই সময় মৃতের মাগফেরাতের জন্য দো‘আ করা ও তার সদগুণাবলী বর্ণনা করা উচিৎ। কেননা তাতে ফেরেশতাগণ ‘আমীন’ বলেন ও তার জন্য ওগুলি ওয়াজিব হয়ে যায়’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[53] একটি বর্ণনায় এসেছে যে, ৪, ৩ এমনকি ২ জন নেককার মুমিন ব্যক্তিও যদি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম সাক্ষ্য দেয়, তাতেই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।[54] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোন মুসলমান মারা গেলে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের চারজন যদি তার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত কিছুই জানে না, তাহ’লে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের সাক্ষ্য কবুল করলাম এবং আমি তার ঐসব গোনাহ মাফ করে দিলাম, যেগুলি তোমরা জানো না’। [55] উল্লেখ্য যে, জানাযার সময় মাইয়েত সম্পর্কে উপস্থিত সকলের সমস্বরে ‘ভাল’ বলে সাক্ষ্য দেওয়ার রেওয়াজটি নিন্দনীয় বিদ‘আত।[56]
(৬) দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে এবং মৃতের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা নিবে, যদি তার সমস্ত মাল দিয়েও হয়। কিছু না থাকলে বা কেউ না থাকলে বা ঋণ মাফ না করলে সমাজ বা রাষ্ট্র তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করবে।[57]
মৃত্যুর পরে বর্জনীয় :
(১) উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা।[58]
(২) বাজারে, মিনারে (মাইকে) ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা। [59]
(৩) অতিরঞ্জিত শোক প্রকাশ ও বিলাপধ্বনি করা। মুখ ও বুক চাপড়ানো। মেয়েদের মাথার কাপড় ফেলা ও বুকের কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি।[60] ছাহাবী হোযায়ফা (রাঃ) অছিয়ত করে বলেন, আমি মারা যাওয়ার পরে কাউকে সংবাদ দিয়ো না। আমার ভয় হয় এটা না‘ঈ বা শোক সংবাদ হবে কি-না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ থেকে নিষেধ করেছেন’। অন্যান্য ছাহাবী থেকেও এধরনের অছিয়ত বহু রয়েছে। [61] সেকারণ ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রত্যেকের উচিৎ এভাবে অছিয়ত করে যাওয়া, যেন তার মৃত্যুর পরে কোন প্রকার বিদ‘আত না করা হয়।[62]
(৪) মৃতের জন্য তিনদিন পর্যন্ত শোক প্রকাশের অনুমতি রয়েছে, তার বেশী নয়। [63]
(৫) দাফনে দেরী করা এবং জানাযা করে বা না করে নিকটাত্মীয় আসার অপেক্ষায় লাশ বরফ দিয়ে রেখে দেওয়া সম্পূর্ণরূপে সুন্নাত বিরোধী কাজ।
(৬) মৃত্যুর পরপরই বাড়ীতে এবং জানাযাকালে ও কবরস্থানে ছাদাক্বা বিতরণ করা নাজায়েয। [64]
[49]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬২০।
[50]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৩৭।
[51]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৮।
[52]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৯, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩।
[53]. মুসলিম হা/২২০০ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-২০; ঐ, মিশকাত হা/১৬১৭, ১৯; তালখীছ ১৩, ২৫ পৃঃ।
[54]. বুখারী, মিশকাত হা/১৬৬৩, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘মৃতকে গোসল দেওয়া ও কাফন পরানো’ অনুচ্ছেদ-৪; তালখীছ ২৫ পৃঃ।
[55]. মুসনাদে আবু ইয়ালা, ছহীহ ইবনু হিব্বান, ছহীহুত তারগীব হা/৩৫১৫; তালখীছ ২৬ পৃঃ।
[56]. তালখীছ পৃঃ ২৬।
[57]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৪৬, ২৯১৩; তালখীছ ১৩-১৪ পৃঃ।
[58]. তালখীছ, পৃঃ ১৮।
[59]. তালখীছ, পৃঃ ১৯, ৯৮।
[60]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭২৫-২৬ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘মৃতের জন্য ক্রন্দন করা’ অনুচ্ছেদ-৭।
[61]. তিরমিযী হা/৯৮৬; ইবনু মাজাহ হা/১৪৭৬; তালখীছ, পৃঃ ১৯, ১০।
[62]. তালখীছ, পৃঃ ১০।
[63]. আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৬৩ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২, অনুচ্ছেদ-৩।
[64]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০৮।