রুকূ থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ‘ক্বওমা’ বলে। ‘ক্বওমা’র সময় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে ও ইমাম-মুক্তাদী সকলে বলবে, سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ(সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ) অর্থাৎ ‘আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে’। অতঃপর বলবে رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ (রববানা ওয়া লাকাল হাম্দ) অথবা رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (রববানা লাকাল হাম্দ) অথবা (اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ) (আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ) ‘হে আল্লাহ হে আমাদের প্রভু! আপনার জন্যই যাবতীয় প্রশংসা’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যার কথা ফেরেশতাদের কথার সঙ্গে মিলে যাবে তার বিগত দিনের সকল গোনাহ মাফ করা হবে।[84] অথবা বলবে, رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ (রববানা ওয়া লাকাল হাম্দ হাম্দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়’। দো‘আটির ফযীলত বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘আমি ৩০-এর অধিক ফেরেশতাকে দেখলাম যে, তারা প্রতিযোগিতা করছে কে এই দো‘আ পাঠকারীর নেকী আগে লিখবে’।[85]
ক্বওমার অন্যান্য দো‘আ সমূহ :
1- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى- (مالك والبخاري وابوداؤد)-
2- اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ- (مسلم، صفة صلاة النبى 117-119)-
উল্লেখ্য যে, ‘ইয়া রববী লাকাল হামদু কামা ইয়াম্বাগী লিজালা-লি ওয়াজহিকা ওয়া লি ‘আযীমি সুলত্বা-নিকা’ বলে এই সময়ে যে দো‘আ প্রচলিত আছে, তার সনদ যঈফ। [86]
ক্বওমাতে রুকূর ন্যায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দো‘আ পড়তে হয়। কেননা ‘ক্বওমার সময় সুস্থির হয়ে না দাঁড়ালে এবং সিজদা থেকে উঠে সুস্থির ভাবে না বসলে ছালাত সিদ্ধ হবে না।[87] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
لاَ تُجْزِئُ صَلاَةُ الرَّجُلِ حَتَّى يُقِيْمَ ظَهْرَهُ فِي الرُّكُوْعِ وَالسُّجُوْدِ-
‘ঐ ব্যক্তির ছালাত যথার্থ হবে না, যতক্ষণ না সে রুকূ ও সিজদাতে তার পিঠ সোজা রাখে’।[88]
জ্ঞাতব্য : ক্বওমার সময় অনেকে হাত কিছুক্ষণ খাড়াভাবে ধরে রাখেন। কেউ পুনরায় বুকে হাত বাঁধেন। যা ঠিক নয়। এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ সমূহ নিম্নরূপ:
(১) বিখ্যাত ছাহাবী আবু হুমায়েদ সা‘এদী (রাঃ) যিনি ১০ জন ছাহাবীর সম্মুখে রাসূলের (ছাঃ) ছালাতের নমুনা প্রদর্শন করে সত্যায়ন প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সেখানে বলা হয়েছে-
فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ اسْتَوَى حَتَّى يَعُوْدَ كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهُ، رواه البخاريُّ-
‘তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে গেলেন এমনভাবে যে, মেরুদন্ডের জোড় সমূহ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে’। [89]
(২) ছালাতে ভুলকারী (مسيئ الصلاة) জনৈক ব্যক্তিকে রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক হাতে-কলমে ছালাত শিখানোর প্রসিদ্ধ হাদীছে এসেছে حَتَّى تَرْجِعَ الْعِظَامُ إِلَى مَفَاصِلِهَا ‘যতক্ষণ না অস্থি সমূহ স্ব স্ব জোড়ে ফিরে আসে’।[90] ওয়ায়েল বিন হুজ্র ও সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বর্ণিত ‘ছালাতে বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখার ‘আম’ হাদীছের[91] উপরে ভিত্তি করে রুকূর আগে ও পরে ক্বওমা-র সময় বুকে হাত বাঁধার কথা বলা হয়।[92] কিন্তু উপরোক্ত হাদীছগুলি রুকূ পরবর্তী ‘ক্বওমা’র অবস্থা সম্পর্কে ‘খাছ’ ভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া বুকে হাত বাঁধার বিষয়টি হাতের স্বাভাবিক অবস্থার পরিপন্থী। এক্ষণে শিরদাঁড়া সহ দেহের অন্যান্য অস্থি সমূহকে স্ব স্ব জোড়ে ফিরে আসতে গেলে ক্বওমার সময় হাতকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই ছহীহ হাদীছ সমূহের যথাযথ অনুসরণ বলে অনুমিত হয়। [93] আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
[85] . বুখারী, মিশকাত হা/৮৭৭, ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩।
[86] . ইবনু মাজাহ হা/৩৮০১; যঈফুল জামে‘ হা/১৮৭৭।
[87] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০ ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২১।
[88] . আবুদাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/৮৭৮, আবু মাস‘ঊদ আনছারী (রাঃ) হ’তে; নায়ল ৩/১১৩-১৪ পৃঃ।
[89] . বুখারী, মিশকাত হা/৭৯২।
[90] . তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮০৪।
[91] . মুসলিম, বুখারী, মিশকাত হা/৭৯৭,৭৯৮।
[92] . দারুল ইফতা, মাজমূ‘আ রাসা-ইল ফিছ ছালাত (রিয়াদ: ১৪০৫ হিঃ), পৃঃ ১৩৪-৩৯; বদীউদ্দীন শাহ রাশেদী সিন্ধী, যিয়াদাতুল খুশূ‘ (কুয়েত, ১৪০৬/১৯৮৬), পৃঃ ১-৩৮।
[93] . বিস্তারিত দেখুন : আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ ১২০ টীকা, ‘ক্বওমা দীর্ঘ করা’ অনুচ্ছেদ; আলবানী, মিশকাত হা/৮০৪ টীকা, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; মুহিববুল্লাহ শাহ রাশেদী সিন্ধী, নায়লুল আমানী (করাচী তাবি) পৃঃ ১-৪২; মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী, ডিসেম্বর’ ৯৮, ২য় বর্ষ ৩য় সংখ্যা, পৃঃ ৫০-৫১।