(১) সূরায়ে ফাতিহার প্রতিটি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করা সুন্নাত।[59] অমনিভাবে ক্বিরাআত সুন্দর আওয়াযে পড়ার নির্দেশ রয়েছে।[60] কিন্তু গানের সুরে পড়া যাবে না।[61] কোনরূপ ‘তাকাল্লুফ’ বা ভান করা যারে না। বরং স্বাভাবিক সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করাই শরী‘আতে পসন্দনীয়। ‘ছানা’ পড়ার জন্য ক্বিরাআতের শুরুতে ‘সাকতা’ করা অর্থাৎ সামান্য বিরতি দেওয়া সুন্নাত।[62] ১ম রাক‘আতের ক্বিরাআত কিছুটা দীর্ঘ হওয়া বাঞ্ছনীয়। [63] অমনিভাবে কুরআনের শুরুর দিক থেকে শেষের দিকে ক্বিরাআত করা ভাল। তবে আগপিছ হ’লে দোষ নেই। এমনকি একই সূরা পরপর দুই রাক‘আতে পড়া চলে।[64]
(২) জেহরী ছালাতে প্রথম দু’রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা পাঠের পর ইমাম হ’লে যেকোন সূরা পাঠ করবে। আর মুক্তাদী হ’লে সূরা ফাতিহা পড়ার পর [65] আর কিছুই না পড়ে কেবল ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তবে যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং ৩য় ও ৪র্থ রাক‘আতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে। যেমন আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে,
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ فِي الْأُوْلَيَيْنِ بِأُمِّ الْكِتَابِ وَ سُوْرَتَيْنِ وَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُخْرَيَيْنِ بِأُمِّ الْكِتَابِ ... وَهَكَذَا فِي الْعَصْرِ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়তেন। ... অনুরূপ করতেন আছরে ...’।[66] শেষের দু’রাক‘আতেও কোন কোন ছাহাবী সূরা মিলাতেন বলে জানা যায়।[67]
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকল ছালাতে সময় ও সুযোগ মত ক্বিরাআত দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত করতেন। তিনি
(ক) ফজরের ১ম রাক‘আতে অধিকাংশ সময় ক্বিরাআত দীর্ঘ করতেন এবং ‘ক্বাফ’ হ’তে ‘মুরসালাত’ পর্যন্ত ‘দীর্ঘ বিস্তৃত’ (طوال المفصَّل) সূরা সমূহ হ’তে পাঠ করতেন। কখনো ‘নাবা’ হ’তে ‘লাইল’ পর্যন্ত ‘মধ্যম বিস্তৃত’ (أوساط المفصَّل) সূরা সমূহ হ’তে এবং কখনো ‘যোহা’ হ’তে ‘নাস’ পর্যন্ত ‘স্বল্প বিস্তৃত’ (قصار المفصَّل) সূরা সমূহ হ’তে পাঠ করতেন [68]
(খ) তিনি যোহর ও আছরের প্রথম দু’রাক‘আত দীর্ঘ করতেন এবং শেষের দু’রাক‘আত সংক্ষেপ করতেন। তিনি মাগরিবের ছালাতে ‘স্বল্প বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে, এশার ছালাতে ‘মধ্যম বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে এবং ফজরের ছালাতে ‘দীর্ঘ বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে পাঠ করতেন। কখনো এর বিপরীত করতেন।
(গ) কখনো তিনি একই রাক‘আতে পরপর দু’টি বা ততোধিক সূরা পড়েছেন
(ঘ) কখনো একই সূরা পরপর দু’রাক‘আতে পড়েছেন
(ঙ) তিনি ফজরের দু’রাক‘আতে কখনো সূরা কাফেরূণ ও ইখলাছ এবং কখনো ফালাক্ব ও নাস পাঠ করেছেন
(চ) ১ম রাক‘আতে তিনি ক্বিরাআত দীর্ঘ এবং ২য় রাক‘আতে সংক্ষেপ করতেন। তবে কখনো কখনো ব্যতিক্রম হ’ত
(ছ) তিনি ছালাতের প্রতি ক্বিরাআতের শুরুতে সূরা ইখলাছ পাঠকারীর প্রশংসা করেছেন
(জ) তিনি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন যে, এর কমে হ’লে সে কুরআনের কিছুই বুঝবে না
(ঝ) তাঁর রাক‘আত, ক্বিরাআত ও সিজদা সর্বদা প্রথম থেকে শেষের দিকে ক্রমে সংক্ষিপ্ত হ’ত। [69]
[60] . আহমাদ, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/২১৯৯, ২২০৮।
[61] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২১৯২।
[62] . নাসাঈ হা/৮৯৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২, অনুচ্ছেদ-১১। দুই সাকতা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৮১৮)।
[63] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২৮ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; নায়ল ৩/৭৬।
[64] . বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি; নায়লুল আওত্বার ৩/৮০-৮২ পৃঃ ‘প্রতি রাক‘আতে দু’টি সূরা পড়া ও তারতীব‘ অনুচ্ছেদ; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮৬২, অনুচ্ছেদ-১২।
[65] . ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩ ‘ছালাতে দাঁড়ানো’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-১১।
[66] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২৮, ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; নায়ল ৩/৭৬, ৪/২৪ পৃঃ।
[67] . মুওয়াত্ত্বা হা/২৬০; মির‘আত ১/৬০০ পৃঃ ; ঐ, ৩/১৩১ পৃঃ।
[68] . (১) কুরআনের প্রথম দিকের ৭টি বড় সূরাকে ‘দীর্ঘ সপ্তক’ (السبع الطوال) বলা হয়। সেগুলি হ’ল যথাক্রমে সূরা বাক্বারাহ, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদাহ, আন‘আম, আ‘রাফ ও তওবাহ। কোন কোন বিদ্বান আনফাল ও তওবাহকে একত্রে একটি সূরা হিসাবে গণ্য করেছেন (২) ক্বাফ হ’তে মুরসালাত পর্যন্ত ২৮টি সূরাকে ‘দীর্ঘ বিস্তৃত’ (طوال المفصَّل), (৩) ‘নাবা’ হ’তে ‘লাইল’ পর্যন্ত ১৫টি সূরাকে ‘মধ্যম বিস্তৃত’ (أوساط المفصَّل), এবং (৪) ‘যোহা’ হ’তে ‘নাস’ পর্যন্ত ২২টি সূরাকে ‘স্বল্প বিস্তৃত’ (قصار المفصَّل) সূরা বলা হয়। বাকী গুলিকে সাধারণ সূরা হিসাবে গণ্য করা হয়।
[69] . মুসলিম, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৪২, ৮৪৮; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮২৮, ৮২৯, ৮৫৩; আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী পৃঃ ৮৯-১০২, ১৩৭