ভ্রান্তনীতি হচ্ছে ইলম-জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ বিরূদ্ধে কথা বলা।

ব্যাখ্যা: ভ্রান্তনীতি অর্থাৎ ভ্রষ্ট আলেমের মূলনীতি হলো জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ বিরোধী কথা বলা। আর ইলম-জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর বিরূদ্ধে কথা বলা শিরকের চেয়েও মারাত্নক। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْأِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَاناً وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لا تَعْلَمُونَ) [الأعراف: 33]

বল, আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ-যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না (সূরা আল-আরাফ ৭:৩৩)।

সুতরাং আল্লাহ বিরোধী কথাকে শিরকের চেয়েও মারাত্নক গণ্য করা হয়েছে। তাই ইলম-জ্ঞান ছাড়া আল্লাহ বিরোধী কথা বলা কারো জন্য বৈধ নয়। যেমন এভাবে বলা যে, আল্লাহ এটা হারাম করেছেন (যদিও তা হারাম নয়) অথবা আল্লাহ এটা বৈধ করেছেন (যদিও তা বৈধ নয়), অথবা আল্লাহ তা‘আলা এটা শরী‘আত সম্মত করেছেন কিন্তু তা শরী‘আত সম্মত নয়। এসবই জ্ঞানহীন আল্লাহ বিরোধী কথা-বার্তা। আমরা এ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। অথবা না জেনেই ফাতওয়া দেয়া ও শিথিলতা দেখানো যা আরো বেশি মারাত্নক। এসবই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ। আমরা এ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللَّهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ إِذْ جَاءَهُ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوىً لِلْكَافِرِينَ)[الزمر: 32]

তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে। জাহান্নামই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়? (সূরা আল যুমার ৩৯:৩২)।

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার বিরূদ্ধে জ্ঞানহীন কথা বলা বৈধ নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সে ব্যাপারে অহী অবতীর্ণ না হয়ে থাকলে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অহী অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জবাব দানে তিনি বিলম্ব করতেন। তাই কিভাবে জ্ঞান ছাড়াই কথা বলা যায়? ভ্রষ্ট আলেমরা অনেক বিষয় গোপন করে। কারো নিকট কোন বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও কুরআন-সুন্নাহর দলীল-প্রমাণ জানা না থাকলে তার বলা উচিত; আমি জানি না। এতে তার ইলম-জ্ঞান ও সম্মানের ঘাটতি হবে না। বরং এভাবে বলার কারণে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার সম্মান বৃদ্ধি পাবে। ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহকে চল্লিশটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মাত্র কয়েকটির জবাব দেন। অধিকাংশ মাস’আলার ব্যাপারে তিনি বলতেন, আমি জানি না। একজন প্রশ্নকারী তাকে জিজ্ঞেস করলো, আমি অনেক দূর দেশ হতে সফর করে আপনার নিকট এসেছি; অথচ আমাকে জবাব না দিয়ে আপনি বলছেন, আমি এটা জানি না। ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ তাকে বললেন, তুমি তোমার বাহনে উঠ এবং যেখান থেকে এসেছ সেখানে চলে যাও। আর পৌঁছার পর মানুষকে বলবে, আমি ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহকে এরূপ এরূপ বিষয় জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি বলেছিলেন, আমি এটা জানি না। আসলে আল্লাহ ভীরু বিদ্বানগণ এরূপই হন।

কিতাব রচনায় সতর্কতা হচ্ছে কিতাব রচনার যোগ্যতা না থাকলে তা রচনা করবে না। হায়! আমরা যদি অনেক ভুল কিতাব-পুস্তিকা থেকে মুক্ত থাকতে পারতাম। আর কুরআন-সুন্নাহ অনুসারে লিখিত ছহীহ গ্রন্থ ছাড়া অন্য কিতাব না থাকতো তাহলে কতই না ভাল হতো! সমস্যা হচ্ছে ভুল কিতাবাদী অবশিষ্ট থাকবে, আর পরবর্তী অনেক প্রজন্মই এর মাধ্যমে বিভ্রান্ত হবে। এ কিতাবাদী থেকেই মানুষের কাছে বিষয় জানতে চাওয়া হবে। তাই ফাতাওয়া, কিতাবে লিপিবদ্ধ কোন বিষয়, কথা, হাদীছ ও বক্তব্যে দানে মানুষ আল্লাহকে ভয় করবে। এজন্য কোন বিষয়ে ধারণা করে দৃঢ়তার সাথে বলবে না যে, এটাই সঠিক। তা কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী হতে হবে।