জাহিলদের দীনের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলো একজনের অপরাধে আরেকজনকে শাস্তি দেয়া। আল্লাহ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
وَلا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى
কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না (সূরা ফাতির ৩৫:১৮)।
.......................................
ব্যাখ্যা: জাহিলী সমস্যা হলো তারা নিরপরাধকে পাঁকড়াও করতো অর্থাৎ অপরের অন্যায়ের কারণে তাকে শাস্তি দিতো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে বলেন,
(وَلا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى) [فاطر: 18]
কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না (সূরা ফাতির ৩৫:১৮)।
সুতরাং যে অন্যায় করেনি তাকে অন্যের অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া যাবে না। যদিও সে অপরাধী ভাতিজা অথবা পিতা অথবা সন্তান হয়। অপরাধীকেই শাস্তি দেয়া হবে। নিরীহকে সীমালঙ্ঘনকারীর অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া যাবে না। সীমালঙ্ঘনকারীর অন্যায়ের কারণে নিরপরাধকে শাস্তি দেয়া হলে তা হবে যুলুম ও অত্যাচার যা ইসলাম স্বীকৃতি দেয় না।
বর্তমানে কতিপয় গ্রাম্যলোকের অবস্থা: অন্য গোত্রের কোন সাধারণ লোকের সাথে নিজ গোত্রের কারো দ্বন্দ্ব হলে গ্রাম্যলোকেরা ঐ সাধারণ লোকের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে না। বরং তাদের গোত্রের অধিক মর্যাদা সম্পন্ন ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করে অথবা হত্যা করে। তারা সীমা লঙ্ঘনকারীকে শাস্তি দেয় না। বরং তারা কেবল গোত্রের সম্মানিত অথবা গ্রহণযোগ্য অথবা পদ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয় যা জাহিলী কর্ম। অন্যায়ের অপরাধীকেই শাস্তির জন্য নির্দিষ্ট করা ওয়াজীব। তার নিকট থেকেই অপরাধের প্রতিশোধ নিতে হবে। এটাই ন্যায় বিচার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَمَنِ اعْتَدَى عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ
সুতরাং যে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে, তোমরা তার উপর আক্রমণ কর, যেরূপ সে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:১৯৪)।
মোদ্দা কথা: সবচেয়ে বড় মূলনীতি হলো অপরাধীর সাথেই অপরাধকে নির্দিষ্ট করতে হবে, অন্যের সাথে নয়। যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ভুলের ধার্য্যকৃত ক্ষতিপূরণ নিহতের রক্তমূল্য পরিশোধকারীর উপর নির্ধারণ করেছেন। হত্যাকারীর উপর নির্ধারণ করেননি। তাহলে এ ক্ষেত্রে অন্যের পাপ আরেকজন কি বহন করে না?
জবাবে বলা হবে, এটাই ন্যায় বিচার ও সত্যের সহযোগিতা। কেননা, এটা হত্যাকারীর অনিচ্ছাকৃত ভুল। এখানে ব্যক্তিকে সাহায্যে করাই যথাযথ। মানুষ মারা গেলে আত্মীয়-স্বজনরা যেমন মৃতের সম্পদের ওয়ারীস হয়, এটিও তেমনই। অনিচ্ছাকৃত যে ভুল হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ তার পক্ষ থেকে বহন করবে। অপর দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যায়কারীর উপরই তার অন্যায়ের শাস্তি বা ক্ষতিপূরণ বর্তাবে। একারণে ক্ষতিপূরণ করতে ইচ্ছুকের উপর তা বর্তাবে না।